

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। শনিবার আদিয়ালা কারাগারে অনুষ্ঠিত শুনানি শেষে স্পেশাল জজ সেন্ট্রাল শাহরুখ আরজুমন্দ এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় তাদের দেড় কোটির বেশি জরিমানা করা হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তান দণ্ডবিধির ৩৪ ও ৪০৯ ধারায় উভয়কে ১০ বছর করে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ ধারায় অতিরিক্ত ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোট ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে।
রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, সাজা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইমরান খানের বয়স এবং বুশরা বিবি একজন নারী—এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসব কারণে তুলনামূলকভাবে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া উভয় দণ্ডপ্রাপ্তকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮২-বি ধারার সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।
তোশাখানা-২ মামলা কী?
এফআইএ নথি অনুযায়ী, সৌদি যুবরাজের কাছ থেকে প্রাপ্ত বুলগারি ব্র্যান্ডের একটি মূল্যবান গয়নার সেটের বাজারমূল্য ছিল ৭ কোটি ১০ লাখ রুপির বেশি, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নিশ্চিত করেছে। তবে অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্তরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেটটির মূল্য মাত্র ৫৯ লাখ রুপি দেখিয়েছেন।
জিও নিউজ জানিয়েছে, গয়নার সেটে একটি নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুল অন্তর্ভুক্ত ছিল। অভিযোগে বলা হয়, উপহারটি তোশাখানায় জমা দেওয়া হয়নি এবং সঠিকভাবে মূল্যায়নও করা হয়নি। প্রথমে বেসরকারি মূল্যায়নকারী সোহাইব আব্বাসি এবং পরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়, যেখানে সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ইনাম শাহের প্রভাব খাটিয়ে কম মূল্য দেখানো হয়েছে।
তোশাখানা-২ মামলাটি শুরু হয় ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই। এ সময়ে ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খান ও বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষে ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট এনএবি অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোর্টে রেফারেন্স দাখিল করে।
পরে সুপ্রিম কোর্টের এনএবি সংশোধনীসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পর ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি এফআইএ অ্যান্টি-করাপশন কোর্টে স্থানান্তরিত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আদিয়ালা কারাগারে বিচার শুরু হয়। বুশরা বিবি ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর ইসলামাবাদ হাইকোর্ট থেকে জামিন পান এবং পরদিন মুক্তি পান। আর ইমরান খান ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর জামিন পান।
এরপর ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর উভয়ের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। প্রায় এক বছর ধরে ৮০টির বেশি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিকিউশন ২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। এর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার মুহাম্মদ আহমদ, বেসরকারি মূল্যায়নকারী সোহাইব আব্বাসি এবং ইমরান খানের সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ইনামুল্লাহ উল্লেখযোগ্য।
এফআইএর পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ফেডারেল প্রসিকিউটর জুলফিকার আব্বাস নাকভি, ব্যারিস্টার উমায়ের মজিদ মালিক, বিলাল বাট ও শাহভেজ গিলানি। আসামিপক্ষে ছিলেন আরশাদ তাবরেজ, কৌসাইন ফয়সাল মুফতি এবং ব্যারিস্টার সালমান সাফদার।
মন্তব্য করুন