যুক্তরাজ্যে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে হাবিবুর রহমান মাসুম (২৬) নামের এক বাংলাদেশিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হাবিবুর অন্তত ২৮ বছর কারাভোগ না করে মুক্তি পাবেন না।
২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল স্ত্রী কুলসুমা আক্তার (২৭) তাদের শিশুসন্তানকে নিয়ে ব্র্যাডফোর্ডের একটি নারী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পরপরই হাবিবুর তার ওপর হামলা চালান। প্রকাশ্যে, নিজের শিশুর সামনেই কুলসুমাকে ছুরি দিয়ে ২৫ বারের বেশি আঘাত করেন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুলসুমার মৃত্যু হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কুলসুমা একটি ঠেলাগাড়িতে সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই হাবিবুর তাকে আক্রমণ করেন। তদন্তে জানা যায়, হাবিবুর কুলসুমাকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের করতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করেন। তিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ভুয়া বার্তা পাঠান কুলসুমার ফোনে।
আদালত বলেন, এই হামলা ছিল ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পিত, নিষ্ঠুর এবং চরম সহিংস। বিচারক আরও বলেন, হাবিবুর বিচার চলাকালীন কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি এবং ছিলেন পুরোপুরি নির্বিকার।
গত ২৭ জুন হাবিবুরকে হত্যা, হামলা, হত্যার হুমকি এবং অনুসরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ঘটনার পর হাবিবুর পালিয়ে যান, তবে পরে পুলিশ তাকে আইলসবুরি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।
কুলসুমার ভাই আকতার হুসেইন জানান, ‘আমরা আমাদের বোন হত্যার বিচার পেয়েছি। যদিও তাকে ফিরে পাওয়া যাবে না, কিন্তু হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে বলে আমরা সন্তুষ্ট।’
এই মর্মান্তিক ঘটনা যুক্তরাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলে, এই মামলাটি প্রমাণ করে কখনো কখনো আশ্রয়কেন্দ্রের মতো জায়গাও পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
হাবিবুর রহমান ব্র্যাডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ছাত্র ছিলেন এবং তিন বছর আগে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। তাদের একটি সন্তান রয়েছে। তাদের বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলায়।
মন্তব্য করুন