যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন। তবে তিনি এ ঘোষণা করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফর শেষে, যাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি মূল আলোচনায় না চলে আসে। টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সপ্তাহান্তেই স্টারমারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ঘোষণা আসতে পারে।
স্টারমার আগেই জানিয়েছিলেন, যদি ইসরায়েল গাজার মানুষের দুর্দশা কমানোর পদক্ষেপ না নেয় এবং প্রায় দুই বছর ধরে সেখানে চালিয়ে আসা হামলা বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে তবে সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগেই যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে ২৩ সেপ্টেম্বর। ধারণা করা হচ্ছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে এ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন। তবে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লন্ডনের বিরোধ তৈরি হয়েছে, কারণ ওয়াশিংটন এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিপক্ষে। অন্যদিকে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশগুলোও একই সময়ে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
গত জুলাই মাসে লেবার দলের ভেতর থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে স্টারমার ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। তবে তিনি তখন শর্তসাপেক্ষ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। যেমন—ইসরায়েল যদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির রোডম্যাপ তৈরি করে এবং জাতিসংঘকে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর অনুমতি দেয়, তবে লন্ডন বিষয়টি বিবেচনা করবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব শর্ত পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ ইসরায়েলি সরকার তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের ব্যাপক স্থল অভিযান চলছে এবং হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭ দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অন্যদিকে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান প্রথমবারের মতো গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বুধবার এক জনসম্মুখ প্রশ্নোত্তর সভায় তিনি বলেন— ‘গাজায় যা ঘটছে, তা একটি গণহত্যা। ২০ হাজার শিশু খাদ্যাভাবে মারা গেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হয়েছে। আইসিজের অন্তর্বর্তী রায় ও সর্বশেষ জাতিসংঘ কমিশনের প্রতিবেদনের পর এই উপসংহারে না আসার কোনো উপায় নেই যে আমরা সরাসরি একটি গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি।’
এর আগে মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক তদন্ত কমিশন জানায়, তাদের মতে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে এবং প্রতিবেদনটিকে ‘বিকৃত ও মিথ্যা’ আখ্যা দিয়েছে।
মন্তব্য করুন