যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চারজন বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই বিচারকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদেশগুলোর বিরুদ্ধে `অবৈধ এবং ভিত্তিহীন' পদক্ষেপ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
শুক্রবার ( ০৬ জুন) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন। রুবিও বলেন, আইসিসি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি আমাদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হস্তক্ষেপ করছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা চার বিচারক হলেন- উগান্ডার সোলোমি বালুঙ্গি বোসা, পেরুর লুজ দেল কারমেন ইবানেজ কারানজা, বেনিনের রেইন অ্যাডেলাইড সোফি আলাপিনি গানসু এবং স্লোভেনিয়ার বেটি হোহলার। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পত্তি ও সম্পদ ব্লক করা হবে এবং মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সঙ্গে কোনো লেনদেন, তহবিল, পণ্য বা সেবা প্রদানে নিষিদ্ধ থাকবে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আইসিসি তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিবৃতি জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, আইসিসি তাদের বিচারকদের পাশে রয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপগুলো বিশ্বের ১২৫টি রাষ্ট্রের ম্যান্ডেটের অধীনে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে দুর্বল করার স্পষ্ট প্রচেষ্টা। জবাবদিহিতার জন্য কাজ করা ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে এই ধরনের পদক্ষেপ সংঘাতে আটকা পড়া নাগরিকদের সাহায্য করে না, বরং যারা মনে করে তারা শাস্তি থেকে মুক্ত, তাদের উৎসাহিত করে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি তথ্যপত্রে বলা হয়, বোসা এবং ইবানেজ কারানজা ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দেওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন। আইসিসি এর আগে আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্তের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর আইসিসি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মার্কিন বাহিনী এবং সিআইএ সদস্যদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান ও অন্যত্র ‘গোপন আটক কেন্দ্রে’ যুদ্ধাপরাধের তদন্তের জন্য প্রসিকিউটরের অনুরোধ মঞ্জুর করে। আইসিসি উল্লেখ করে, আফগানিস্তান রোম সনদের সদস্য, যার মাধ্যমে ১২৫টি দেশে আইসিসির এখতিয়ার রয়েছে।
অন্য দুই বিচারক, আলাপিনি গানসু এবং হোহলার, ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রাচীনতম মিত্র। দেশটি ১৯৪৮ সালে প্রথম ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে, আইসিসি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধ, বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। আলাপিনি গানসু এবং হোহলার এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
এর আগেও কি এমন হয়েছে?
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি প্রথমবার নয় যে, আইসিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পরপরই ট্রাম্প একটি বিস্তৃত নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেখানে আইসিসি তদন্তে অংশগ্রহণকারী যে কাউকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়। সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের ব্যাপক ভাষা বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও আইসিসির বিরুদ্ধে তার বিরোধিতার ইতিহাস রয়েছে। ২০১৯ সালে, তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের তদন্তে জড়িত আইসিসি কর্মকর্তাদের ভিসা অস্বীকার বা বাতিল করার ঘোষণা দেন। ২০২০ সালে, তিনি প্রসিকিউটর ফাতু বেনসৌদা এবং আদালতের কর্মকর্তা ফাকিসো মোচোচোকোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এই পদক্ষেপগুলো পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে বাতিল করা হয়।
মন্তব্য করুন