প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ফিলিপাইন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এই ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার (স্থানীয় সময় ২৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, এই শুল্ক আরোপ একটি বৃহত্তর বাণিজ্য চুক্তির অংশ। সেই চুক্তির আওতায় ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক তুলে নেবে এবং উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে।
ট্রাম্প লেখেন, ‘দারুণ একটি সফর ছিল। আমরা আমাদের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছি।’
তবে চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি ট্রাম্প। ফিলিপাইনের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। বিবিসি জানায়, ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ফিলিপাইন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে মন্তব্যের জন্য।
চলতি এপ্রিল মাসে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী যেসব শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার তুলনায় ফিলিপাইনের ওপর আরোপিত ১৯ শতাংশ শুল্ক হার আরও বেশি। তখন ফিলিপাইনের জন্য প্রস্তাবিত শুল্ক হার ছিল ১৭ শতাংশ। আর চলতি জুলাই মাসে দেশটির নেতৃত্বের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প জানান, শুল্ক হার হবে ২০ শতাংশ—অর্থাৎ সাম্প্রতিক ঘোষণাটি সেই হার থেকে সামান্য কম।
ফিলিপাইনের মার্কিন বাজারে রপ্তানি
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফিলিপাইন তুলনামূলকভাবে ছোট একটি বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে ছিল গাড়ির যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বস্ত্র ও নারিকেল তেল।
শুল্ক আরোপের ফলে এসব পণ্যের আমদানিকৃত মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাণিজ্য চুক্তি করতে চাপ, ঝুলে আছে অন্যান্য দেশের অবস্থান
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অন্যায্য বাণিজ্য নীতির’ প্রতিবাদ করতেই তিনি শুল্ক আরোপ করছেন। তার এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে একের পর এক বাণিজ্য আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে।
এরই মধ্যে তিনি যুক্তরাজ্য, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে কিছু বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এসব চুক্তি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুই দেশের সম্মতি আসেনি।
আগামী ১ আগস্ট থেকে আরও বেশি শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডার মতো বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, বহুস্তর বিশিষ্ট আলোচনা চলছে। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে কি না, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকার লক্ষ্যগুলো একাধিক এবং সেগুলো সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে এক বিষয় স্পষ্ট—কানাডা কোনো খারাপ চুক্তি মানবে না।’
শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোম্পানিগুলো
বিশ্বব্যাপী এই উচ্চ শুল্কনীতির প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন কোম্পানির ওপরও।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরস জানায়, গত তিন মাসে শুল্কজনিত কারণে তাদের ১ বিলিয়নেরও বেশি ডলার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে জিপের নির্মাতা স্টেলান্টিস আগে জানিয়েছিল, তাদের ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার)।
২০২৫ সালের শুরুতে শুল্ক পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক আর্থিক অস্থিরতা দেখা দিলেও, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকায় ট্রাম্প আবারও উচ্চ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনায় ফিরেছেন।
মন্তব্য করুন