সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার ঘোনা কুচিয়ামারা কলেজে ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। চাঁদা না দেওয়ায় কলেজে প্রবেশ করতে পারছেন না অধ্যক্ষ মো. আব্দুল খালেক। ফলে চাকরি রক্ষায় চাঁদা দিতে চাইলেন তিনি। শুধু তাই নয়, কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করায় তাকে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এদিকে, চাঁদা দাবি এবং লেনদেন নিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজ এখন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অধ্যক্ষ এবং কলেজের ছাত্র সমন্বয়ক শিহাবের মধ্যে টাকার লেনদেন নিয়ে কথা হচ্ছে।
ভিডিওতে শিহাবকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি সাড়ে ৩ লাখের কথা বলেছেন, আমি যেটা বলেছিলাম, শেষ পর্যন্ত আপনার অ্যামাউন্ট বাড়াতে হবে।’ জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি সাড়ে ৩ লাখ টাকাই দেব। ৩ লাখের ওপর পারি না, তোমার বাপের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেব।’
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুল খালেক স্পষ্টভাবে বলেন, বোয়ালিয়া বাজারের একটি হোটেলে তিনি, তার ছোট ভাই এবং এক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই শিহাব তাদের কাছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে দেনদরবারে ঠিক হয়, সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিলে তাকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে। এই চাঁদার বিষয়টি তার ভাষায়, ‘বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক দলের চাহিদা।’
অধ্যক্ষ আরও অভিযোগ করেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শামীম তাকে দলীয় ট্যাগ দিয়ে বাধা দিচ্ছেন, যদিও তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ এরই মধ্যে বাতিল হয়েছে এবং লিখিত পত্রে বলা আছে—তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না এবং নিয়ম অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে কলেজের মূল ফটকে তালা দেওয়া রয়েছে এবং শামীমের অনুমতি ছাড়া কেউ কলেজে প্রবেশ করতে পারছে না।
চাঁদা না দেওয়ায় যখন তিনি আবার কলেজে প্রবেশের চেষ্টা করেন, তখন তাকে বাঙলা ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি মঞ্জু মারধর করেন বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি আরও জানান, মারধরের সময় ছাত্র সমন্বয়ক শিহাবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অধ্যক্ষ লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও করেছেন।
অন্যদিকে ছাত্র সমন্বয়ক শিহাব বলেন, ১৫ আগস্ট কলেজে যে আন্দোলন হয়, তিনি সে সময় প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন এবং তখনই অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। শিহাবের দাবি, পর অধ্যক্ষ বারবার তাকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেককে টাকায় কিনে নেন।
ভিডিও নিয়ে শিহাব বলেন, কলেজের শিক্ষক মজনু তাকে এক চায়ের দোকানে ডেকে নেন এবং সেখানেই অধ্যক্ষ এবং তার ছোট ভাই এসে বসেন। শিহাবের দাবি, তিনি উঠতে চাইলেও তারা তাকে আটকে রাখেন এবং জোর করে টাকার আলাপ জুড়ে দেন। শিহাব বলেন, তিনি শুধু জানতে চেয়েছিলেন, ‘আপনি কত টাকা দেবেন?’ এরপরই তিনি চলে যান।
অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগে শিহাব বলেন, ‘আমি সেদিন কলেজে ছিলাম। তবে আমি যদি রাজি হতাম, স্যারকে কলেজ থেকে ফেরত যেতে হতো না।’
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শামীম হাসান ভিডিওর বিষয়ে বলেন, ‘ঘটনার রহস্য বের করা দরকার।’ তিনি বলেন, অধ্যক্ষ ক্লাস চলাকালে কলেজে আসেন এবং স্থানীয়দের প্রতিরোধে তিনি ফিরে যান। মারধরের বিষয়টি তার জানা নেই। প্রধান ফটকে তালা কেন— এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কলেজের নিরাপত্তার স্বার্থে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাইরের কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যই এটি করা হয়েছে।’
কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আরজ আলী কালবেলাকে বলেন, ভিডিওর বিষয়ে তিনি অবগত নন। মারধরের বিষয়টিও পরোক্ষভাবে শুনেছেন, তবে ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরে ঘটেছে বলে জানান। বিস্তারিত জেনে পরে কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত কালবেলাকে বলেন, কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার বিষয়টি মীমাংসার জন্য তিনি কলেজ কমিটির সভাপতিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে ভিডিও বা চাঁদা দাবির বিষয়ে তিনি অবগত নন।
মন্তব্য করুন