কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যেভাবে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট বানাতে পারেন ইলন মাস্ক

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক। ছবি : সংগৃহীত

তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার অর্থের দাপট পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশে পর্যন্ত বিস্তৃত। সামাজিকমাধ্যম থেকে শুরু করে গ্রহ-নক্ষত্র সর্বত্র তার অর্থের ছড়াছড়ি। মানব জীবনের এমন কোনো বিলাসী দিক নেই যেখানে এই ব্যক্তিটির হাত নেই। বছরের পর বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কেতাব বগল দাবা করে রেখেছেন তিনি। এই ব্যক্তিটি অন্য কেউ নয়, তিনি হলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তার প্রভাব-প্রতিপত্তি আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে এখন বিশ্বজোড়া।

রাজনীতির ময়দানে অর্থকড়ির কদর সব সময়ই বেশি। আর সেটা যদি হয় যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশের রাজনীতি তাহলে তো কথায় নেই।

চলতি বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বেছে নেবেন কোটি কোটি মার্কিন ভোটার। এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বৈরথ দেখবে বিশ্ব। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটার টানতে সদলবলে প্রচার-প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন দুজনই।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচনের মতো স্বাভাবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেও অর্থের বিষয়-আশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে টাকা ঢালতে সবসময় এগিয়ে থাকেন মার্কিন বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্ণধাররা। তাদের একজন ইলন মাস্ক। এবারের নির্বাচনে বাইডেন বা ট্রাম্প- কাউকে সরাসরি সমর্থন না দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে তার এক্সবার্তা বিশ্লেষণ করে যে কেউ রিপাবলিকান পার্টির প্রতি তার দরদের কথা বলে দিতে পারবেন। আর বিভিন্ন আইনি জটিলতায় জর্জরিত ট্রাম্পের এখন অর্থই বেশি প্রয়োজন। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো মাস্কের অর্থকড়ির ওপর ভর করে ট্রাম্পকে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবেন? তিনি কি আবারও হোয়াউট হাইসে ফিরতে পারবেন?

সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাবেক উপস্থাপক ডন লেমনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার টুইটারের (বর্তমান এক্স) মালিক মাস্ক বলেন, তিনি বাইডেনের সান্নিধ্য থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন। তবে এ-ও বলেছেন তিনি কোনো প্রার্থীর প্রচারে অর্থ দেবেন না।

মাস্ক বলেন, আমি যদি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিই তাহলে আমি কেন একজনকে না দিয়ে অন্যজনকে সমর্থন করছি তার বিশদ ব্যাখ্যা দিব। তবে মার্কিন এই ধনকুবেরের ওপর যারা নিয়মিত নজর রাখেন তারা বলছেন, নির্বাচনের এত আগে এই বিষয়ে না জড়াতেই এমন কথা বলছেন মাস্ক। আপাতত দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়া থেকে দূরে থাকছেন তিনি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্বাচনের অর্থ জোগাতে শত কোটিপতিদের ফোন করতে শুরু করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার একটাই প্রত্যাশা, মার্কিন ধনকুবেররা তাদের চেকবুক উন্মুক্ত করে দেবেন এবং তাকে নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ী করবেন।

শত কোটিপতিদের জলযোগ

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত দুই ব্যক্তি হলেন ট্রাম্প ও মাস্ক। তাদের সব সময় একসঙ্গে দেখা যায় না। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদও প্রকট। যেমন ট্রাম্পের বৈদ্যুতিক গাড়িতে আস্থা নেই। অন্যদিকে এই গাড়ির মাস্টার হলেন মাস্ক। তার কোম্পানি টেসলা প্রতি বছর লাখ লাখ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ করছে। এমনকি ২০১৬-২০২০ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন মাস্ক। অবশ্য এসব ছিল মাস্কের ডানপন্থি-প্রীতির আগের ঘটনা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মাস্কের টাকার আশায় তার বিভিন্ন বিষয়ে এখনো নীরব আছেন ট্রাম্প। গত মাসে ফ্লোরিডায় মার্কিন শতকোটিপতিদের এক জলযোগে অংশগ্রহণ করেন মাস্ক। এই অনুষ্ঠান থেকে নির্বাচনে অর্থ দেবেন এমন দাতাদের একটি দল গঠন করেন ট্রাম্প।

ওয়াশিংটন পোস্ট এই বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতেই মাস্ক ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন এমন গুঞ্জনের পালে হাওয়া বইতে শুরু করে। যদিও মাস্কের দাবি, এটি শুধু একটি জলযোগ ছিল। এর বেশি কিছু সেখান থেকে কিছু আসেনি।

কালো টাকা

যদি মাস্ক ট্রাম্পকে আরও সরাসরি সাহায্য করতে চান তাহলে তিনি মার্কিন নির্বাচনী আইন অনুসারে বেনামে সীমাহীন নগদ অর্থ দিতে পারেন। সমালোচকরা এই অর্থকেই কালো টাকা বলে ডাকেন। সুপার পিএসিএস নামে বিশেষভাবে তৈরি অলাভজনক সংস্থার মাধ্যমে এই টাকা ট্রাম্পকে দিতে পারেন মাস্ক।

ক্যাম্পেইন লিগ্যাল সেন্টারের সিনিয়র লিগ্যাল কাউন্সেল শান্না পোর্টস বলেছেন, এসব গ্রুপ এমন বিজ্ঞাপন দিতে পারে যেখানে কোনো রাখঢাক ছাড়াই বলতে পারে ‘ট্রাম্পকে ভোট দিন’। আর এসব বিজ্ঞাপনের অর্থ কোথা থেকে আসছে তা প্রকাশের কোনো ধরা-বাধা নিয়ম নেই।

আরেকটি উপায় হতে পারে নির্বাচনের পরে ট্রাম্পের সমস্ত দেনা পরিশোধ করে দিতে পারেন মাস্ক। এটি করলে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বে জড়ানোর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। এমনকি সম্প্রতি এমন গুঞ্জনও ছড়ায় যে নিজের প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল বেচতে মাস্কের দ্বারস্থ হয়েছেন ট্রাম্প।

মাস্কের প্রভাব-প্রতিপত্তি

সামাজিক মাধ্যমে বেশ সরব মাস্ক। প্রায় সময় তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও ডানপন্থি কথাবার্তা বলে আলোচনার জন্ম দেন। বিশেষ করে অভিবাসন নিয়ে তার কথাবার্তা ট্রাম্পের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। তাই টাকার বিষয়টি একপাশে সরিয়ে রাখলেও মাস্কের রাজনৈতিক মতাদর্শ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে স্পষ্টত এগিয়ে রাখবে।

ওয়াচডগ ফ্রি প্রেসের সিনিয়র কাউন্সেল নোরা বেনাভিডেজ বলেছেন, টুইটারের মতো একটি সামাজিকমাধ্যম সাইট এমন একজন ধনকুবেরের হাতে যিনি বিরক্তবোধ করেন এবং এটিকে তার নিজস্ব মতামত প্রচারে কাজে লাগান। টাকা না হলেও মাস্কের প্রভাব অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রেফারিং বিতর্ক: ধুয়ে দিলেন টুখেল, উঁচুমানের বলছেন আনচেলত্তি

ঢাকায় সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে আশাবাদী বিএনপি

বিশ্বনবী (সা.) যে কারণে কবুতরকে শয়তান বলেছেন

খালাস পেয়ে ইমন বললেন, ‘বিজয় পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ’

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

বলিউডের নতুন জুটি সালমান-রাশমিকা

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন তৃতীয় লিঙ্গের বর্ষা

বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত

মানুষের বিরোধিতা করতে গিয়েই মাছের এই পরিণতি!

যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলকে ছাড় দিতে নারাজ ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা

১০

সিটি ব্যাংকে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা

১১

সরকারি খরচে হজে যাচ্ছেন কতজন?

১২

সোহেল চৌধুরী হত্যা / আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

১৩

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু

১৪

জমজম কূপের ভেতরের রহস্য অবাক করল ডুবুরিদের

১৫

অনেক নারী আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে : প্রভাস

১৬

কেন ১৫০০ বছর ধরে কাবার চাবি এই সাধারণ পরিবারের কাছে?

১৭

মার্কিন দূতাবাসের দিকে গণসংহতির মিছিল

১৮

মালয়েশিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ আলমগীর

১৯

হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন মৌলভীবাজারের তাজ

২০
X