ইরান ও ইয়েমেন থেকে ছোড়া অন্তত ৮৬ ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার (১৩ এপ্রিল) ও রোববারে (১৪ এপ্রিল) এসব ড্রোন ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সেন্টকম জানিয়েছে, ধ্বংসের তালিকায় অন্তত ছয়টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এছাড়া ৮০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। এগুলো ইরান এবং ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলকে নিশানা করা হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে সেন্টকম জানিয়েছে, ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতিদের উৎক্ষেপণকারী যানসহ একটি ব্যালেস্টিক মিসাইল ও সাতটি ড্রোন উড্ডয়নের আগেই ধ্বংস করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার গভীর রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে পাঁচ ঘণ্টা ধরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইরান। হামলার একপর্যায়ে চিরশত্রু ইসরায়েলের দিকে কয়েক মিনিটের মধ্যে একযোগে অন্তত ১০০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে আইআরজিসির বিমানবাহিনী।
ইরানের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে তিনশরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তেহরান। সেগুলোর বেশিরভাগ ইসরায়েল প্রতিহত করলেও অন্তত ৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের মাটিতে আঘাত হেনেছে।
ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা নিউজ জানিয়েছে, রেমন ঘাঁটিতে দ্রুতগতির ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বলে ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হামলার কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রেমন বিমানঘাঁটিতে খুব দ্রুতগতিতে আঘাত হানছে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র। ওই সময় সেখানে আগুনের ফুলকিও দেখা যায়।
এদিকে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেন, যদি কোনো দেশ তাদের আকাশসীমা ইসরায়েলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় তাহলে আমরা তাদের চূড়ান্ত মোকাবিলা করব।
এক্সে হিব্রু ভাষায় এক পোস্টে তিনি বলেন, যদি কোনো দেশ ইরানের ওপর (সম্ভাব্য) আক্রমণের জন্য ইসরায়েলের জন্য তার মাটি বা আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে তারা আমাদের পক্ষ থেকে নিষ্পত্তিমূলক প্রতিক্রিয়া পাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ব্যাপক হারে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা হয়েছে; তা সত্ত্বেও ইরানের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটানো। আর এ ক্ষেত্রে ইরান সফল হলে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অনিয়ন্ত্রিত সংঘাতে প্ররোচনা দিত।
মূলত, চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি বোমা হামলার জবাবে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই পাল্টা হামলা করে তেহরান। ইসরায়েল ও ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি দুই চিরশত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন তারা।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে একের পর এক হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল ইরান।
মন্তব্য করুন