মিলন পারভেজ, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

৪২৭ কোটি টাকার পাথর পড়ে আছে অবিক্রীত

মধ্যপাড়া কয়লা খনি
৪২৭ কোটি টাকার পাথর পড়ে আছে অবিক্রীত

রেল সংস্কারের অভাবে ১৩ বছর ধরে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া খনি থেকে রেলপথে পাথর পরিবহন বন্ধ রয়েছে। অথচ এটিই দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল পাথর খনি। সড়কপথে পরিবহন খরচ বাড়ার প্রভাব পড়ছে পাথরের দামে। কারণ, রেলপথের তুলনায় সড়কপথে পাঁচ গুণ অর্থ বেশি খরচ করতে হয় ব্যবসায়ীদের। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, এই খনির পাথর রেলপথে পরিবহনের কথা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘসময় রেল চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত খরচ দিয়েই মধ্যপাড়া খনির উৎপাদিত পাথর পরিবহন করা হচ্ছে সড়কপথে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) অধীন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী খনির ৮০ ভাগ পাথর রেলপথে পরিবহন করতে হবে। কিন্তু সে নির্দেশনা বর্তমানে কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে কোনো কাজে আসছে না।

খনি সূত্রে জানা যায়, গড়ে প্রতিদিন পাথর বিক্রি হয় প্রায় আড়াই হাজার টন। সব মিলিয়ে উত্তোলিত পাথরের অর্ধেক থেকে এক-তৃতীয়াংশই অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে। বর্তমানে নদীশাসনের জন্য ৮৬ কোটি টাকার বোল্ডার ২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন পাথর এবং রেলপথের জন্য ২২৭ কোটি টাকার ব্লাস্ট ৬ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথর ছাড়াও আরও ১১৪ কোটি টাকার পাথর মজুত রয়েছে। তারপরও মধ্যপাড়ায় খনি ১২ ইয়ার্ডে ৪২৭ কোটি টাকার অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে।

১৯৯০ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধ্যপাড়া খনি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে সেই পথে পাথর পরিবহন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে পার্বতীপুরের ভবানীপুর রেলস্টেশন থেকে মধ্যপাড়া খনি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার রেললাইনের বেশ কয়েকটি স্থানের ৭০টি স্লিপার (পাটাতন) চুরি হয়ে যায়। মূলত এর পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ওই পথে পাথরবাহী ওয়াগনের চলাচল। একপর্যায়ে রেলপথে অবকাঠামো ও রেললাইন সংলগ্ন জমিও স্থানীয় ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যায়। রেলপথ চালুর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের এমডি প্রকৌশলী মো. ফজলুর রহমান বলেন, রেলপথে পাথর পরিবহনে ভৈরব থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি টনে খরচ পড়ে মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। অথচ সমপরিমাণ পাথর সড়কপথে পরিবহনে খরচ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ টন। এর সিংহভাগ আমদানি করা হয় ভারত ও ভুটান থেকে। এতে করে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। সঙ্গে দেশের মেগা প্রকল্পসহ অনেক নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় পাথর বিক্রি কমেছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, রেল কর্তৃপক্ষ ও নদীশাসন এবং দেশের মেগা প্রকল্পগুলোয় বিশ্বের উন্নতমানের পাথর হিসেবে স্বীকৃত মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অথচ রেলপথে পরিবহনের ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের বড় অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড খনিটি পরপর চারবার লাভের মুখ দেখেছে। বর্তমানে খনিটিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) শতাধিক বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও অর্ধশত দেশি প্রকৌশলী এবং প্রায় ১ হাজার দক্ষ খনি শ্রমিক কাজ করছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।

রেলপথ সংস্কার বিষয়ে রেলওয়ের পূর্ত বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী (পার্বতীপুর/কার্য) প্রকৌশলী মো. রাজা আলী শেখ বলেন, ভবানীপুর-মধ্যপাড়া রেলপথে স্লিপার, ফিটিংস, পাথর কিছুই নেই। রেললাইনও চুরি গেছে। তাই পাথরের কংক্রিট, নতুন রেললাইন স্থাপন ও দুধারে মাটির কাজ করতে হবে।

রেলপথ সংস্কারে পদক্ষেপের বিষয়ে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (সিএমই) মো. আসাদুর হক বলেন, প্রায় ২৫ কোটি ব্যয়ে ভবানীপুর থেকে মধ্যপাড়া পাথরখনি পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে কাজ শুরু হবে। এরই মধ্যে খনি কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছে।

এদিকে, মধ্যপাড়া খনির ১২ ইয়ার্ডে ১১ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন পাথরের মজুত গড়ে উঠেছে। দ্রুত এসব পাথর বিক্রিতে গতি না বাড়লে কিছুদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, ধারদেনা করে খনির ঠিকাদারের বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অক্টোবরে খনিটি ৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাওনা শোধ করেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রসেসিং পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আনোয়ার সাদাত জানান, সিসি ব্লক তৈরিতে অল্প কিছু মধ্যপাড়ার পাথর খনি থেকে নেওয়া হয়। সিংহভাগই আমদানি করা হয়।

১৯৭৩-৭৪ সালে আবিষ্কারের পর ২০০৭ সালের ২৫ মে থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় খনিটিতে। দৈনিক তিন শিফটে দিনে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন পাথর উত্তোলন হয়। এসব পাথর বিক্রির দায়িত্বে রয়েছে পেট্রোবাংলার নিয়ন্ত্রণাধীন মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড।

পাথর কেনাবেচার অনুমোদিত ডিলার আলহাজ মো. মোমিনুল হক জানান, এই খনির পাথর সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয় না। নির্ধারিত ১৫০ ডিলারদের মাধ্যমে করা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে এখানে।

খনির একাধিক ডিলার জানান, আগে ১০ চাকার ট্রাকে (ট্রাকের ওজনসহ) ৪২ থেকে ৪৬ টন এবং ৬ চাকার ট্রাকে (ট্রাকের ওজনসহ) ৩০ থেকে ৩২ টন পাথর পরিবহন করা হতো। ২০১৮ সালের মোটরযান এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণবিধি অনুযায়ী ১০ চাকার ট্রাক (ট্রাকের ওজনসহ) ৩২ টন ও ৬ চাকার ট্রাক ২২ টনের বেশি পাথর বহন করতে পারছে না। এতে পরিবহন খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া ৫ শতাংশ কমিশনের স্থলে এখন দেওয়া হচ্ছে ৩ শতাংশ। এর ওপর ভ্যাট কাটা হচ্ছে ১৫ শতাংশ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এসিআই-এ নিয়োগ, আবেদন করুন অনলাইনে

ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা

বসতভিটা ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি, সন্তানের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

ব্রাজিলের মন্ত্রীর মার্কিন ভিসা বাতিল, দায়িত্বজ্ঞানহীন বললেন লুলা

ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে রুমমেটকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ, কী বললেন প্রক্টর

শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ আটক

২৭ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

২৭ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা 

আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে স্বর্ণ

২৭ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১১

কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান কিটোনকে সংবর্ধনা দিল এ্যাব

১২

মাছ ধরার নৌকায় মিলল সাড়ে ৪ লাখ পিস ইয়াবা, আটক ৯

১৩

ভোলায় নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল / এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

১৪

যৌথ বাহিনীর অভিযানে অনলাইন জুয়া চক্রের ২ সদস্য আটক

১৫

জেলেরা হেলমেট পরে মাছ ধরেন যেখানে

১৬

বিমানবাহিনীর আন্তঃঘাঁটি স্কোয়াশ প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

১৭

স্পেনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন

১৮

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

১৯

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

২০
X