

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য। আর ইবাদতের শ্রেষ্ঠতম রূপ হলো নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানের ওপর এই নামাজ ফরজ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা আমার স্মরণোদ্দেশ্যে নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা ত্বহা : ১৪)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের নামাজ (কায়েম কর)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৭৮)
রাব্বুল আলামিন আরও বলছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা আনকাবুত : ৪৫)। অর্থাৎ, প্রকৃত নামাজি সব ধরনের অশ্লীলতা ও অনৈতিকতা থেকে নিজেকে দূরে রাখেন।
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের ঘাটতি থাকলে নফল নামাজ তা পূরণ করে দেয়। তাই তোমরা বেশি বেশি নফল নামাজ পড়।’ (আবু দাউদ : ৮৬৪)
ফরজ নামাজের রাকাত সংখ্যা এবং সময় নির্দিষ্ট। কিন্তু নফল নামাজের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই এবং সময়ও নেই। তবে, দিনের কিছু সময়ে নামাজ আদায় করা অপছন্দনীয়। এই সময়গুলোর মধ্যে আবার তিন সময়ে নামাজ আদায় করা একদমই নিষিদ্ধ।
হজরত উকবা ইবনে আমির জুহানী (রা.) বলেন, ثَلاَثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ أَوْ أَنْ نَقْبُرَ فِيهِنَّ مَوْتَانَا حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتَّى تَرْتَفِعَ وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتَّى تَمِيلَ الشَّمْسُ وَحِينَ تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتَّى تَغْرُبَ .
অর্থ : আল্লাহর রাসুল (সা.) তিন সময়ে নামাজ আদায় এবং মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করতে আমাদের নিষেধ করতেন— সূর্য যখন আলোকজ্জ্বল হয়ে উদয় হতে থাকে তখন থেকে পরিষ্কারভাবে উপরে না ওঠা পর্যন্ত, সূর্য ঠিক মধ্যাকাশে থাকে তখন থেকে ঢলে না পড়া পর্যন্ত এবং সূর্য অস্ত যাওয়া শুরু হলে, সম্পূর্ণরূপে অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত। (মুসলিম : ৮৩১)
এই হাদিসে যে তিন সময়ের কথা বলা হয়েছে এর মধ্যে একটি হলো, দুপুরবেলা সূর্য যখন ঠিক মধ্যাকাশে থাকে তখন থেকে ঢলে না পড়া পর্যন্ত নামাজ পড়া নিষেধ। আর এই সময়টি নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
অনেকে মনে করে, এ সময়টা ঠিক দুপুর ১২টা। তাই প্রশ্ন জাগে, আসলেই কি ঠিক ১২টায় নামাজ পড়া নিষেধ?
এ বিষয়ে মাসিক ইসলামী গবেষণা পত্রিকা আল কাউসারে বলা হয়েছে, দুপুর বেলা সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে থাকে তখন নামাজ পড়া নিষেধ। অনেকে মনে করে এ সময়টা ঠিক দুপুর ১২টা। এ ধারণা ঠিক নয়।
মূলত এ সময়টা হলো সূর্য ঢলার সময়ের পূর্বে আনুমানিক ৫ মিনিট। মৌসুম ভেদে সূর্য ঢলার সময়ের তারতম্যের কারণে এ সময়টিও পরিবর্তিত হতে থাকে। মৌসুম ভেদে সূর্য ঢলার সময়ের মাঝে প্রায় আধ ঘণ্টার ব্যবধান হয়ে থাকে। এক মৌসুমে (ঢাকার সময় অনুযায়ী) সূর্য ঢলার সর্বনিম্ন সময় ১১ টা ৪২ তো আরেক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২ টা ১৩।
এ সময় থেকে পাঁচ মিনিট বিয়োগ করলে দুপুরের নামাজের নিষিদ্ধ সময় হয় এক মৌসুমে সর্বনিম্ন ১১ টা ৩৭, আরেক মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২ টা ০৮। সুতরাং নির্দিষ্ট করে ঠিক ১২টাকে দুপুরে নামাজের নিষিদ্ধ সময় মনে করা ঠিক নয়।
মোটকথা, সূর্য ঢলার সময় যখনই হবে তার পূর্বের পাঁচ মিনিটই হলো দুপুরে নামাজের নিষিদ্ধ সময়।
মন্তব্য করুন