শেখ হারুন
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩১ এএম
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩২ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্রাধিকারের মেগা প্রকল্পে গুরুত্ব কমেছে

অগ্রাধিকারের মেগা প্রকল্পে গুরুত্ব কমেছে

সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার দেশের আট মেগা প্রকল্পকে ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। অর্থ সংকটের কারণে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতিতে হলেও কোনো প্রভাব পড়েনি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পগুলোতে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্পের কাজ চলছিল বেশ জোরেশোরেই। বাজেটে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো এসব প্রকল্পে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

পাশাপাশি প্রকল্পগুলো তদারকি বাড়াতে গঠিত হয় ফাস্টট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ছিলেন এ কমিটির সভাপতি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গুরুত্ব হারিয়েছে এসব অগ্রাধিকার প্রকল্প। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো চালু রাখার বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দিলেও কার্যত প্রকল্পগুলো এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্ধ না হলেও গুরুত্ব কমেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো।

ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আগে তিন মাস পর পর মনিটরিং কমিটির বৈঠক হতো। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। নেই কোনো পর্যালোচনাও। প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও দেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। তদারকিও গেছে কমে। সাধারণ অন্য প্রকল্পগুলোর মতোই বাস্তবায়ন হচ্ছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলো। অর্থ ছাড়েও নেই গতি। এমতাবস্থায় বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে থাকলেও দেখা দিয়েছে ধীরগতি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, ফাস্টট্র্যাকভুক্ত ৮টি প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। চলমান সাতটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে। শুরু থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত গড় ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৯০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। প্রকল্পগুলোর আওতায় খরচ হয়েছে মোট বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ১৬ শতাংশ অর্থ। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত ৭ প্রকল্পের মধ্যে কয়েকটির কাজ পুরোপুরি সমাপ্তির পথে। বাকিগুলোও বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।

ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পিআরএল ভোগরত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আলাদা করে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলোর বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। তবে আগের মতো অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, গুরুত্বও কিছুটা কমেছে। কারণ, আগের মতো প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির কোনো বৈঠকও হচ্ছে না।

বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরী কালবেলাকে বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বর্তমান সরকার। সে ক্ষেত্রে আগের সরকারের আমলে নেওয়া অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর বিষয়ে গুরুত্ব কম পেতে পারে। তবে প্রত্যাশা থাকবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন কাজ দ্রুত শেষ করা। ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগের রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথের কাজ শেষ ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ শেষ ৯৩ দশমিক ২২ শতাংশ, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ হয়েছে ৯০ শতাংশ, মহেশখালী-মাতারবাড়ীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এগিয়েছে ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় একটি রেল প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ‘দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প থেকে বাদ গেছে রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ অংশের নির্মাণকাজ। প্রকল্পটির রামু-ঘুমধুম অংশ বাস্তবায়নে এডিবির অর্থায়নে অপারগতা এবং মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে ট্রান্স এশিয়ান রেল সংযোগ স্থাপন আপাতত সম্ভব নয় বলে বাদ দেওয়া হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মঙ্গলবার কখন দেশে পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া

এসিল্যান্ড না থাকায় ভোগান্তিতে লক্ষাধিক মানুষ

প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ভেষজ শাক কাঁটানটে

‘প্যালেস্টাইন-২’ দিয়েই ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস 

এলপি গ্যাসের নতুন দাম নির্ধারণ বিকেলে

মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিন : বাবুল

পরমাণু আলোচনা নিয়ে খামেনির উপদেষ্টার কড়া বার্তা

গাজায় ক্ষুধায় কাঁদছে মানুষ, মৃত্যু ৫৭

০৪ মে : টিভিতে আজকের খেলা

১০

০৪ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১১

দক্ষিণ লেবাননে একাধিক ইসরায়েলি ড্রোন হামলা

১২

বখাটেদের ভয়ে দুই ছাত্রীর মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ

১৩

পঞ্চগড়ে মাদকসহ মা-ছেলে গ্রেপ্তার

১৪

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

১৫

০৪ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

পেকুয়ায় ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত

১৭

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই নেতা বহিষ্কার

১৮

রাজনৈতিক তৎপরতা ছাড়া শ্রমিকের ভাগ্যোন্নয়ন সম্ভব নয় : ফজলুল হক

১৯

জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া রাখাইনে করিডোর নয়: বিএসপি

২০
X