দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির বাজারের বর্তমান অবস্থা, চলমান সংকট এবং আগামীর সম্ভাবনা নিয়ে কালবেলার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইক্যুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং কন্টিনেন্টাল সার্জিক্যাল হাউসের স্বত্বাধিকারী শরিফউদ্দিন আহমেদ। তার এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার মৃত্তিকা সাহা -
কালবেলা: দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির বাজার সম্পর্কে কিছু বলুন।
শরিফউদ্দিন আহমেদ: ডিসপোজেবল যেগুলো একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়, সেগুলোর কিছু কিছু দেশে তৈরি হচ্ছে। যেমন সিরিঞ্জ, ক্যাথেড্রাল ইত্যাদি। অন্যদিকে সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট যেগুলো সবসময় ব্যবহৃত হয়, সেগুলো পুরোপুরি আমদানি করা হয়। অর্থাৎ, দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির বাজার এখনো পুরোপুরি আমদানিনির্ভর।
কালবেলা: বর্তমান ডলার সংকটের কারণে এই আমদানিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?
শরিফউদ্দিন আহমেদ: বড় ধরনের সংকটে এই খাতটি। কেননা ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে একদিকে আগের চেয়ে খরচ অনেক বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোও আমাদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে চাইছে না। আগে যেখানে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মার্জিন আরোপ করত, বর্তমানে সেখানে ১০০ ভাগ মার্জিন আরোপ করছে ব্যাংকগুলো, যা বাস্তবে ১১০ শতাংশ হয়ে যাচ্ছে। এর পরও চাইলেই এলসি খোলা যাচ্ছে না। এজন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আমদানি আগের চেয়ে কমে গেছে।
কালবেলা: এই সংকট সমাধানে করণীয় কী?
শরিফউদ্দিন আহমেদ: এই সংকট সমাধানে সরকারকে খাতটির জন্য একটা তহবিল গঠন করে দিতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিতে কড়াকড়ি তুলে নিতে হবে। নতুবা আমাদের শঙ্কা, আগামী দিনে এ খাতে আরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। ফলে দেশে চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট তৈরি হবে এবং দামও বাড়বে।
কালবেলা: স্থানীয় উৎপাদন বাড়লে আমদানিনির্ভরতা কাটানো সম্ভব হবে কি?
শরিফউদ্দিন আহমেদ: দেশীয় উৎপাদন না বাড়ার অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন ভারত, পাকিস্তান, চীনের বাজারের তুলনায় আমাদের রপ্তানির জায়গা কম। ফলে আমরা উৎপাদন করলেও রপ্তানি করতে পারব না। কারণ, তাদের সঙ্গে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাব। এ খাতে তাদের অনেক বড় বিনিয়োগ করা হয়, যা আমাদের দেশে নেই। দ্বিতীয়ত, একটা এলসি খুলতে গেলেই দেশে সরকারের যে প্রতিবন্ধকতা, সেখানে ইন্ডাস্ট্রি করতে গেলে অনেক ঝামেলা হবে। যে কারণে এসব ঝামেলার কথা চিন্তা করে অনেকে সাহস করে এগিয়ে আসতে পারছে না। আর আমলাতন্ত্রের কারণে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তদুপরি নানা জায়গা থেকে অনুমোদন নিতে হয়। এসব কারণে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হবে না। ফলে আমদানির ওপরেই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে। এখন এই আমদানি যদি সহজ হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো।
কালবেলা: কোন কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়?
শরিফউদ্দিন আহমেদ: আমাদের মূল আমদানি বাজার হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান এবং চীন। বাংলাদেশের চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য এই তিন দেশই আমদানির বড় বাজার। এ ছাড়া কোরিয়া ও জাপান থেকেও আমদানি হচ্ছে।
মন্তব্য করুন