

এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব শক্তিশালী বাজার গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন বাজারও খুঁজে বের করতে হবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি এবং কোথায় নতুন সুযোগ তৈরি করা সম্ভব, তা নিয়েও নিয়মিত অনুসন্ধান করা জরুরি।’
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আট দিনব্যাপী এসএমই মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান এবং উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিয়র অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরীন ফাতেমা আউয়াল। ‘এসএমই শক্তি, দেশের অগ্রগতি’ স্লোগানে শুরু হওয়া শতভাগ দেশীয় পণ্যের এই মেলা চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
শিল্প উপদেষ্টা জানান, নতুন বাজার খুঁজে সেই তথ্যের ভিত্তিতে উপযোগী পণ্য উৎপাদন ও পণ্যের বৈচিত্র বাড়াতে হবে, যেন বিভিন্ন বাজারে প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থান নেওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সুষম উন্নয়নে এসএমইর গুরুত্ব অপরিসীম। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে শহরের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে জাতীয় এবং স্থানীয়ভাবে টেকসই শিল্প খাতের বিকাশ জরুরি। দেশে বর্তমানে প্রায় ৯৯ শতাংশ শিল্পই কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত—যা কম পুঁজি বিনিয়োগে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক।
তিনি আরও বলেন, যত্রতত্র শিল্প স্থাপনের পরিবর্তে নির্ধারিত স্থানে শিল্প-কারখানা গড়ে তুললে উদ্যোক্তারা আরও সুবিধা পাবেন এবং পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে। শিল্পনগরীর জলাধার সংরক্ষণ, শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ রক্ষায় মালিকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ফলে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বাজার সম্প্রসারণে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ক্রমেই বাড়ছে। তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে। তিনি জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে দেখছেন। তবে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ দুর্বল হওয়াকে তারা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, এসএমই খাতের জন্য নির্দিষ্ট ডাটাবেজ এবং সেলস ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা জরুরি।
অনুষ্ঠানে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০২৫-এর ছয়জন বিজয়ীর হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এবারের মেলায় প্রায় সাড়ে ৩০০ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। এ ছাড়া তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, পাদুকা, চামড়া, কৃষিপণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৫০টির বেশি সংস্থা মেলায় অংশ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন