দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা আগামী জুনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দায়ের হওয়া এ ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য সময় বেঁধে দিয়ে ঢাকার চারটি ভ্যাট কমিশনারেটে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এসব মামলা কেন দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে আছে, সেই ব্যাখ্যাও চেয়েছে এনবিআর। এক্ষেত্রে শাখা সহকারী থেকে কমিশনার পর্যন্ত কার কী দায়িত্ব ছিল, তা উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ভ্যাট মামলা ঝুলে থাকায় রাজস্ব আটকে আছে। একই সঙ্গে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন ভ্যাট আইনে ১২০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশনা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে ভ্যাটের মামলার সংখ্যা নিষ্পত্তির পরও কমছে না। বাড়ছে মামলার জট। সম্প্রতি এনবিআরের মূসক নীরিক্ষার সদস্য ড. সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে নিষ্পত্তি হয়নি এমন ভ্যাট মামলা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আলটিমেটাম দেন ঢাকার চার ভ্যাট কমিশনারেটকে। এ সময় ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল ভ্যাট ফাঁকির মামলা নিষ্পত্তি বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চান এনবিআরের এই সদস্য। আর এসব মামলার ক্ষেত্রে শাখা সহকারী থেকে কমিশনার পর্যন্ত কার কী দায়িত্ব রয়েছে, তা প্রতিবেদন আকারে এনবিআরে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট এখনো মামলা নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেনি। বৈঠকে প্রতিবেদন দাখিল না করার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সংক্রান্ত সর্বোচ্চ রাজস্ব জড়িত—এমন ২৫ মামলার তথ্য এনবিআরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত যেসব মামলা নিষ্পত্তি হয়নি, সেগুলো আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করতে হবে। আর ২০২১ সালের মামলাগুলো চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। আর ২০২২ সালের মামলা আগামী জুনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এনবিআর থেকে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ১০ হাজার ৩০১ ভ্যাট মামলায় সরকারের ২৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা আটকে আছে। প্রতি মাসেই বড় সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তির সঙ্গে নতুন মামলা হচ্ছে। আদালত নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া বা এডিআর কিংবা এনবিআরের অধীন কাস্টম ও ভ্যাট-সংক্রান্ত আপিলাত ট্রাইব্যুনাল কোনো কিছুই মামলার জট কমাতে পারছে না। সবচেয়ে বেশি মামলা ভ্যাট সার্টিফিকেট নিষ্পত্তিতে। এ খাতে মামলার সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫৯। এর বিপরীতে রাজস্ব আটকা ২৬৪ কোটি টাকার। এ ছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল কমিশনারেটে ২৭ মামলার বিপরীতে আটকে আছে ৮৩ কোটি টাকা। আপিলাত ট্রাইব্যুনালে ২০২ মামলার বিপরীতে আটকা ২৪৮ কোটি, হাইকোর্ট বিভাগে ৩ হাজার ৪৮৬ মামলার বিপরীতে ১৮ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা আটকে আছে। আপিল বিভাগে ১৩৯ মামলার বিপরীতে ১ হাজার ২৭৯ কোটি, মূসক ১৪.১ এ ১ হাজার ৫৮২ মামলার বিপরীতে ১ হাজার ৫৩২ কোটি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) ৩৫ মামলার বিপরীতে ৩৮৬ কোটি ও অন্য ১ হাজার ২৭১ মামলার বিপরীতে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে আছে। সব মিলিয়ে ১০ হাজার ৩০১ মামলার বিপরীতে আটকে আছে সরকারের ২৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।