এ জেড ভূঁইয়া আনাস
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০২:৪৮ এএম
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সাক্ষাৎকার

এসএমই খাতে সুদহার সহনীয় রাখবে ব্র্যাক ব্যাংক

এসএমই খাতে সুদহার সহনীয় রাখবে ব্র্যাক ব্যাংক

দীর্ঘদিন ধরে রাখা ৯-৬ সুদহার সম্প্রতি বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সব ধরনের ঋণেই বাড়ছে সুদহার। ১৫ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে সেই সুদহার। এজন্য এসএমই খাতে ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। কেননা এসএমই গ্রাহকদের নিয়েই ব্র্যাক ব্যাংকের বড় ব্যবসা। নিয়মিত গ্রাহকদের আগের নির্ধারিত সুদহারই বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে যারা ৯ বা ১৩ শতাংশে ঋণ নিয়েছেন তারা ওই হারেই সুদ পরিশোধ করবেন। আর এসএমই গ্রাহকরা যাতে ঋণ নিতে সমস্যায় না পড়েন, সেজন্য ব্র্যাক ব্যাংক তাদের ওপর সহনীয় মাত্রায় সুদ নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও এসএমই ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান সৈয়দ আবদুল মোমেন। কালবেলার সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কালবেলা প্রতিবেদক এ জেড ভূঁইয়া আনাস।

কালবেলা: ব্র্যাক ব্যাংকের সিংহভাগ ঋণই এমএমই খাতে। এ খাতে আপনাদের এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কি?

আবদুল মোমেন: আমাদের অর্থনীতি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিয়ে যান সাধারণত এসএমই উদ্যোক্তারা। কিন্তু আমাদের নীতি এবং অর্থনৈতিক সুবিধা অথবা সরকার কর্তৃক নীতি সহায়তা পুরোটাই সাজানো হয় ধনীদের জন্য। কোনো নীতিই এসএমই খাতের জন্য করা হয় না। এটা খুবই হতাশাজনক। আমাদের অর্থনীতিতে তারা যেই অবদান রাখেন, তা নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে। পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংকসহ কিছু ব্যাংক তাদের সহায়তা করছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলোও। কারণ এ খাতে তারা অর্থায়ন করে আমাদের আরও অনেক আগ থেকে। ফজলে হাসান আবেদ প্রথম ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই খাতের গ্রাহকদের অর্থায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলোর ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিত। কিন্তু এই ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা খুব বেশি কাজ করতে পারতেন না। তাই তিনি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব ক্ষুদ্র গ্রাহকদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। এজন্যই তিনি ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত আমরা এসএমই খাতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক কাজ করছে। সবাই যদি এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে তাহলে এসএমই খাত দ্রুত সময়ে এগিয়ে যাবে। সেইসঙ্গে আমাদের দেশীয় জিডিপি দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে।

কালবেলা: এমএমই খাতে বিনিয়োগে তো খরচ বেশি। সেক্ষেত্রে ৯ শতাংশ সুদের হার কার্যকর হওয়ার পর আপনার ব্যবসা কীভাবে করেছিলেন?

আবদুল মোমেন: যখন ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা সমস্যার মধ্যে পড়েছিলাম। কারণ এসএমই খাতে অর্থায়নে ব্যাংকের খরচ অনেক বেশি। তখন ব্যয় থেকে আয়ের অনুপাত অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে যখন ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ কার্যকর হয় তখন আমরা ঋণে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদহার নির্ধারণ করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে এই সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনায় আমাদের খরচ অনুযায়ী আয় অনেক কমে যায়। সে সময় আমাদের ব্যয় থেকে আয়ের অনুপাত ১৭০ শতাংশ দাঁড়ানো। অর্থাৎ আমরা ১০০ টাকা আয় করতে গেলে ১৭০ টাকা খরচ করতে হচ্ছিল। অর্থাৎ ৭০ টাকা নিট লস। অন্য কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান হলে এই ব্যবসা গুটিয়ে নিত। কিন্তু যেহেতু স্যার ফজলে হাসান আবেদ এ ব্যাংকটি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্যই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাই আমরা এ খাতের বিনিয়োগ বন্ধ করিনি। তখন আমাদের বোর্ড থেকে বলা হয়েছিল নিট ৭০ টাকা লস আমরা আগামী ছয় মাস পর্যন্ত নিতে রাজি আছি। এর মধ্যেই কষ্ট ইনকাম রেশিও সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে আসতে হবে। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংক বিভিন্ন বড় অর্থায়নগুলো শুরু করে। তবে আমাদের এসএমই অর্থায়ন আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে।

কালবেলা: জামানতবিহীন ঋণে ব্র্যাক ব্যাংক দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক। জামানতবিহীন ঋণে ঝুঁকি কেমন থাকে?

আবদুল মোমেন: আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা খুবই পরিশ্রমী। করোনার সময় যখন তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়, তখন তারা নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করে। বিশেষ করে অনলাইনে পণ্য পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্ন ব্যবসার শুরু করে। ওই সময় তাদের ব্যবসার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। এজন্য ব্র্যাক ব্যাংক ওই গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে তিন মাস পরেই এসএমই ঋণ বিতরণ করা শুরু করেছিল। আর এসএমই গ্রাহকরা কষ্ট করে হলেও ঋণ পরিশোধ করে দেয়। করোনা মহামারিসহ নানা দুর্যোগের পরও আমাদের এসএমই খাতের ঋণের বিপরীতে খেলাপি মাত্র আড়াই শতাংশ।

কালবেলা: আর্থিক খাতের এ চ্যালেঞ্জিং সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক সিএমএসএমই গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে?

আবদুল মোমেন: গত দুই বছর যাবত দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। এজন্য এসএমই ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা কর্মজীবী—তাদের আয় মূল্যস্ফীতির হার অনুযায়ী বৃদ্ধি না হওয়ায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে এসএমই খাতেও। এসএমই উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যে বা তৈরি পণ্য বিক্রি আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এজন্য নতুন ব্যবসা সৃষ্টি হচ্ছে না। এজন্যই এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা এখন ঋণ নিতে চাচ্ছেন না। এজন্য চলতি বছর বাজারে ঋণের চাহিদা কমে গেছে। এই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে আমাদের বছরের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

কালবেলা: এখন তো ধীরে ধীরে ঋণের সুদের হার বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এসএমই গ্রাহকদের ঋণ বিতরণে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?

আবদুল মোমেন: ৯ শতাংশ সুদহার যখন নির্ধারণ করা হয়েছিল তখন এসএমই খাতের জন্য সুপারভিশন চার্জ বসানো হয়েছে। বর্তমানে বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করায় সেই চার্জ তুলে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই গ্রাহকদের নিয়ে বড় ব্যবসা, সেক্ষেত্রে আমরা এসএমই ঋণে সুদহার ওই অর্থে বৃদ্ধি করব না। অর্থাৎ এসএমই ঋণে ১৭-১৮ শতাংশ সুদহার ওঠার সম্ভাবনা নেই। পাশাপাশি আমাদের নিয়মিত গ্রাহকদের এখন যেই সুদ কার্যকর আছে, তাই থাকবে। অর্থাৎ গত মাসে যারা ১৩ শতাংশে ঋণ নিয়েছে তারা ১৩ শতাংশেই পরিশোধ করবে। আর যারা ৯ শতাংশ সময়ে ঋণ নিয়েছিলেন, তারা ৯ শতাংশ সুদই পরিশোধ করবেন। আর এসএমই গ্রাহকরা যাতে ঋণ নিতে সমস্যায় না পড়েন সেজন্য আমরা তাদের ওপর সহনীয় মাত্রায় সুদ নির্ধারণ করব। যেহেতু আমরা বর্তমানে সাড়ে ১৩ শতাংশের কাছাকাছি সুদ নির্ধারণ করছি, সেহেতু খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই হার পরিবর্তন করব না। তবে ট্রেজারি বিল বন্ডের সুদহার যদি আরও বাড়ে এবং আমাদের ব্যয় থেকে আয়ের অনুপাত বাড়তে থাকে, তাহলে তো কিছুই করার থাকবে না। সেক্ষেত্রে আমরা মার্জিন রেখেই গ্রাহকদের জন্য সুদহার নির্ধারণ করে দেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জেনেভা ক্যাম্পের হত্যা মামলায় ২৬ আসামিকে গ্রেপ্তার  

রিয়ালের চুক্তির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ভিনি

মাউশির চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সচিবালয়ের সামনে জুলাই শহীদ পরিবার ও আহতদের অবস্থান

শিক্ষার্থীদের রাতের আড্ডা বন্ধে চৌদ্দগ্রাম ইউএনওর অভিযান

কাজে আসছে না কোটি টাকার নৌ অ্যাম্বুলেন্স

আইপিএলের পর দ্বিতীয় সেরা হতে চায় যে টি-টোয়েন্টি লিগ

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে সেমিস্টার ডে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন

ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন : আইন উপদেষ্টা

নাটোরে ভাঙা রেললাইনে বস্তা গুঁজে চলছে ট্রেন

১০

ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

১১

বেড়েছে পদ্মার পানি, ডুবেছে ৩১ গ্রাম

১২

ভূমিকম্পে কাঁপল আফগানিস্তান, নজর রাখছে জার্মান সংস্থা

১৩

নোয়াখালীতে পুকুরে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু

১৪

ঝগড়া থামাতে গিয়ে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

১৫

মোহাম্মদপুরের কুখ্যাত ছিনতাই চক্রের প্রধান ভাগনে বিল্লাল গ্রেপ্তার

১৬

কোন কোন শর্ত মেনে ছেলেদের চীনাবাদাম খাওয়া উচিত

১৭

যাবজ্জীবন দণ্ড ভোগ করে মুক্তির পর দোকান পেলেন দুলাল

১৮

রাজস্থান থেকে মিস ইউনিভার্স বিশ্বমঞ্চে মনিকা বিশ্বকর্মা

১৯

জুলাইয়ে সড়কে ঝরেছে ৪১৮ প্রাণ

২০
X