প্রযুক্তি থেকে সামরিকায়ন, এমনকি দক্ষিণ চীন সাগরের তৎপরতার পরও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা দেশটি থেকে সরবরাহকৃত মাদক ফেন্টানিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই ভয়াবহ মাদক প্রবেশের পেছনে চীন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রভাবে প্রতি বছর হাজারো মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই এই ভয়াবহ মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। তবে চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, ফেন্টানিলের বিস্তার যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের অভিমত, চীন বাদেও বিশ্বজুড়ে ফেন্টানিল উৎপাদনের প্রক্রিয়া বাড়তে শুরু করেছে। আর এ জন্যই এ মাদকের সরবরাহ বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
২০১৯ সালে চীন ফেন্টানিলকে মাদকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এর সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। তবে মাদকচক্রগুলো দ্রুতই কৌশলে পরিবর্তন আনে। মূলত মেক্সিকোর কার্টেলগুলো চীনের অনুমোদিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ফেন্টানিলের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অনুমোদিত সংস্থাগুলোর ওপরও নজরদারি বাড়ায় চীন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই মাদকের বিস্তার রোধে চীনের ভূমিকা আরও বেশি হতে পারত। কারণ, মেক্সিকো ও অন্য দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফেন্টানিল সরবরাহ করে চীন।
গত মার্চ মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ফেন্টানিল সম্পর্কিত শুল্ক বাড়িয়ে চীনের সব আমদানির ওপর ২০ শতাংশ আরোপ করে, তখন চীনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাস্তবসম্মত সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত। তবে ফেন্টানিলকে অজুহাত করে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং হুমকির তীব্র বিরোধিতা করছি।’ এ ছাড়া নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে তারা ২ হাজার পৃষ্ঠার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। শ্বেতপত্রে তারা ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণে নিজেদের পদক্ষেপের সব তথ্য উপস্থাপন করে। তারা জানায়, চীনে কমিউনিস্ট পার্টি সমাজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। ফলে দেশটিতে ফেন্টানিলের মতো মাদকের বিস্তার কম। একই পদক্ষেপ তারা বিশ্ববাজারে সরবরাহের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করে বলে জানায়। কিন্তু তাতেও যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ কমেনি। এর কয়েক মাস পর এখনো এই শুল্ক বহাল রয়েছে। নিজেদের পূর্বতন অবস্থান ধরে রাখলেও সম্প্রতি এ বিষয়ে চীন আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এরপরও গত মাসে চীন ফেন্টানিল প্রস্তুত করার আগের পূর্ববর্তী দুই ধরনের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণাধীন পদার্থের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। পাশাপাশি কিছুদিন আগে নিটাজেনজ নামক আরেকটি মাদকদ্রব্যের ওপর তারা নজরদারি বাড়িয়েছে। ফেন্টানিলের পাশাপাশি এই মাদকও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে। চীনা কূটনীতিকরা আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এই পদক্ষেপকে মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশটির সক্রিয় অংশগ্রহণ বলে উল্লেখ করছে।
সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রণে চীনের এই অবস্থানের পর বেইজিংয়ের কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, বাণিজ্য শুল্ক কমানোর বিষয়ে দুই দেশের আলোচনায় এই পদক্ষেপ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। প্রশ্ন হচ্ছে, দুই পক্ষ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে চীনের এই পদক্ষেপকে কৌশলগত বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য না করে ট্রাম্প প্রশাসন অনেকটা সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পথে হাঁটছেন।
মন্তব্য করুন