যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিশ ডিগ্রির ওপরে গরমেও শীতল সেলিব্রেশনে মগ্ন পালমার। অপ্রতিরোধ্য পিএসজিকে মাটিতে টেনে নামিয়ে প্রমাণ করলেন, কেন তাকে লোকে কোল্ড পালমার বলে ডাকে। আইস কোল্ড পালমার কিন্তু এক দিনে তৈরি হয়নি। বয়স আর কত! সবে ২৩, তবে এর মধ্যেই দেখে ফেলেছেন অনেক চড়াই-উতরাই। ব্যর্থ ভালোবাসাকে পেছনে ফেলেই এখন উড়ছেন এই ইংলিশ মিডফিল্ডার।
মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকেই ম্যানসিটির ইয়ুথ একাডেমির হয়ে খেলেছেন তিনি। প্রিয় দলটির হয়ে মাতাতে চেয়েছিলেন মাঠ। তবে অবহেলা, অনাদরেই যেন বেড়ে উঠেছেন ক্লাবে। যখন তার বয়সীরা অনূর্ধ্ব-২১-এর দলে নিয়মিত খেলছিল, তখনো তাকে সিটি খেলিয়ে গিয়েছিল অনূর্ধ্ব-১৮ তেই। পরে প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে মূল দলে সুযোগ পেলেও স্থায়ী হতে পারেননি। মাহারেজ, ডি ব্রুইনাদের ভিড়ে পালমারের কি আর জায়গা হয়!
তবে আশা হারাননি পালমার। যতটুকু পেরেছেন নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছেন। তবে তাকে ৫ সিজনে মাত্র ৪১ ম্যাচে সুযোগ দিয়েছিলেন গার্দিওলা। তবে আশ্বস্ত করেছিলেন, মাহারেজ চলে গেলে তখন হয়তো আরও সুযোগ পাবেন পালমার। তবে, এবারে আর বাঁধ মানল না, নিজের ওপর ভরসা রাখলেন পালমার। সাফ জানিয়ে দিলেন, নিয়মিত খেলতে চান তিনি। ছেড়ে গেলেন নিজের শৈশবের ক্লাব। যখন চেলসিতে যোগ দিলেন, প্রিমিয়ার লিগে তখন ধুঁকছিল ব্লুসুরা। ছিল টেবিলের ১২ নম্বর পজিশনে।
সেখান থেকেই হয়ে উঠলেন চেলসির ত্রাতা। একের পর এক ম্যাচ আর পালমার ম্যাজিকে চেলসি আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে। ক্লাবটির হয়ে এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ৪৩ গোল, ২৯ অ্যাসিস্ট। ব্যর্থতা, প্রত্যাখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এখন পুরো বিশ্বে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখছেন এই তরুণ।
গল্পটা কি কোনো কিংবদন্তির সঙ্গে মিল পাচ্ছেন? জি, ডি ব্রুইনাও ছিলেন চেলসি রিজেক্ট, পরে সিটিতে এসে হয়ে গেছেন প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা ফুটবলার। পালমারও কি এগোচ্ছেন সেদিকেই?
পিএসজি দলটা ছিল অপ্রতিরোধ্য, একটা সিস্টেম। একটা সিস্টেমিক মেশিনকে ভাঙতে প্রয়োজন ইন্ডিভিজুয়াল ব্রিলিয়ান্স। এনরিকের মেশিনের সামনে এবার পড়েছিল এক উদ্যমী, রগচটা, রিজেক্টেড এক ম্যাজিকম্যান। পিএসজিকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলে দিলেন, দুমড়েমুচড়ে দিলেন পিএসজির দম্ভ।
অথচ এখনো ম্যানসিটিতে পড়ে থাকলে হয়তো এসবের কিছুই করা হতো না তার। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে মূল্যায়ন নেই সেটা যত বড় বা পারফর্মিংয়ের জায়গাই হোক না কেন, নিজের ভালোর জন্য কখনো কখনো সরে দাঁড়ানোটাই সেরা সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়। হোক সেটা প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ বা কর্মস্থল। ২৩ বছরের পালমারই যেন সেটাই আরও একবার শিখিয়ে গেলেন পুরো বিশ্বকে।
মন্তব্য করুন