কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৩১ পিএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তারেক রহমান। ছবি : সংগৃহীত

বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার এ শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ অন্যরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

এর আগে গত ১ জুন এ মামলায় তারেক রহমান ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এর আগে মামলায় সব আসামির খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।

উল্লেখ্য, আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অধস্তন আদালত যে বিচার করেছিলেন তাকে অবৈধ ঘোষণা ও বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স খারিজ করে এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেওয়া হয়। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ফলে এ মামলায় অধস্তন আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পান।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘দ্বিতীয় চার্জশিট (সম্পূরক অভিযোগপত্র) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পরিবর্তে বিচারিক আদালত আমলে নিয়েছেন। এটা আইনবহির্ভূত। আইনবহির্ভূত চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন থেকে শুরু করে এ মামলার পরবর্তী বিচার কার্যক্রম ছিল অবৈধ।’

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়। সে ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলা দুটি নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

দুটি মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন। এ ছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

রায়ের পর ২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এটি সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আইনজীবীরা বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে, তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর হাইকোর্টে গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। গতকাল এর ওপর রায় দেওয়া হয়।

খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন—অধস্তন আদালতে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডবিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় তাদের। এই ১৯ আসামির সবাই খালাস পেয়েছেন। খালাসপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, পিন্টুর ভাই হরকাতুল জিহাদ নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মাদ, শেখ আব্দুস সালাম, কাশ্মীরি নাগরিক আব্দুল মাজেদ ভাট, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মুফতি হান্নানের ভাই মুহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাক্তার জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলুবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মাইনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন।

তা ছাড়া মামলায় অধস্তন আদালত ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। তারা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ, হরকাতুল জিহাদ নেতা আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মো. খলিল, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, শাহাদত উল্যাহ ওরফে জুয়েল, আরিফ হাসান সুমন, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও লিটন ওরফে মাওলানা লিটন। এরা সবাই হাইকোর্টের রায়ে খালাস পেয়েছেন।

১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন অধস্তন আদালত। এর মধ্যে চারজনের তিন বছরের জেল দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিকের তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান ও এএসপি আব্দুর রশীদ। এ ছাড়া পাঁচজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা ও আইজিপি শহিদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, ডিজিএফআইর সাবেক পরিচালক এ টি এম আমিন আহমদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার। এ ছাড়া দুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান এবং উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাইদ হাসান। এই ১১ আসামিকেও খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের এ হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হন আরও প্রায় ৩০০ জন। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত আগস্টে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন। এখন তিনি ভারতের আশ্রয়ে আছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তির দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে’

জোটে ভাঙন, ইসরায়েলে পতনের মুখে নেতানিয়াহুর সরকার

মোদিকে আম পাঠানোর প্রশ্নের জবাব দিলেন প্রেস সচিব 

ব্যবসা সম্প্রসারণে কমলো নীতি সুদহার

মার্কিন শুল্কনীতি নিয়ে কাজ করবে বিএনপি : আমীর খসরু 

স্বাচিপ নেতাকে বিভাগীয় প্রধান করতে হাসপাতাল পরিচালককে চাপ

ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে টিকটক করায় যুবকের কারাদণ্ড

ভূমি অফিসের নথিপত্রের ছবি তোলার সময় আ.লীগ নেতা ধরা

দরপতন ঠেকাতে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রিয় মানুষের সঙ্গে একটা দিন অযথাই বকবক করতে চান চমক

১০

চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘দেয়ালের দেশ’

১১

পরীক্ষার সিটে বসা নিয়ে সংঘর্ষ, আটক ১৮

১২

১০ হাজার বাস রিজার্ভ, রাজধানীতে ঐতিহাসিক সমাবেশের প্রস্তুতি জামায়াতের

১৩

১৪ হাজারে বিক্রি হলো দুই ইলিশ

১৪

মুজিববাদী আদর্শ ৫০ বছর ধরে দেশকে বিভাজিত করে রেখেছিল : নাহিদ ইসলাম 

১৫

বনশ্রীতে আবাসিক ভবনে আগুন

১৬

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হস্তক্ষেপ বন্ধে গণভোট চায় বিএনপি

১৭

শান্তির হ্যাটট্রিকে দুই ভেন্যুর ম্যাচে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়

১৮

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে বিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন

১৯

বকা দেওয়ায় মা-মেয়ের বিষপান

২০
X