বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০১:২৮ পিএম
আপডেট : ১৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা

বিপিএমসিএর লোগো। ছবি : সংগৃহীত
বিপিএমসিএর লোগো। ছবি : সংগৃহীত

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন জয়েন্ট স্টক কোম্পানির নিবন্ধিত। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ১৫ বছরে এই সংগঠনে কোনো নির্বাচন হয়নি। সব সময় সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালনা পরিষদ গঠন ও পরিচালনা হতো। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করলেও যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগে আবেদন করলে ২ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত তিন (৩) মাসের সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে আবারও ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৬ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। তবে বিগত কমিটির ১৩ জন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী ১৬ জুলাই ২০২৫ বুধবার নির্বাচন হওয়ার কথা। দুটি প্যানেল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। ২১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে একটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে যেখানে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন রয়েছেন। পক্ষান্তরে অন্য প্যানেলটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা অতীতে কখনো কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেননি।

এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন মুকিত পরিষদের সাংগঠনকি সম্পাদক প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ আব্দুস সবুর বলেন, ২১টি পদে নির্বাচন হবে, এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল ভোট করছে। বর্তমান কমিটির ১৩ জন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিগত ১৬ বছরে সংগঠনে কোনো শৃঙ্খলা তৈরি হয়নি, বরং সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করতে হয়েছে। একই ব্যক্তি বারবার দায়িত্বে থেকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছেন। সংগঠনের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফরোজা-মোয়াজ্জেম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অধ্যাপক ডা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও তিনি ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪ ও ২০১৪-২০১৬ মেয়াদে তিন টার্ম সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো. হাবিবুল হক বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিরও অর্থ সম্পাদক। এর আগের ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি অর্থ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬, ২০১৬-২০১৮ ও ২০১৮-২০২০ মোট পাঁচ মেয়াদে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সহসভাপতি পদপ্রার্থী ডা. মোস্তাফিজুর রহমানও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। সহসভাপতি প্রার্থী ডা. গাজী মিজানুর রহমান বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক। এর আগে ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক এবং আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৮ তিন মেয়াদে। সহসভাপতি পদপ্রার্থী সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে আসীন। যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী নিলু আহসান বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এর আগেও তিনি এই পদে দায়িত্বে আসীন ছিলেন ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৮ চার মেয়াদে। তার স্বামী মো. নাজমুল আহসান সরকার আরেকটি যুগ্ম সম্পাদক পদপ্রার্থী ও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতেও যুগ্ম সম্পাদক পদে আসীন। এর আগে ২০২১-২০২২ মেয়াদেও তিনি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১০-২০১২, ২০১২-২০১৪, ২০১৪-২০১৬ মোট তিন মেয়াদে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কয়েকজন মালিক জানান, অতীতে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী সংগঠনের দায়িত্বে থেকে সাধারণ সদস্যদের জন্য কিছুই করেনি। তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন অথচ সাধারণ সদস্যরা ভুগছেন বিভিন্ন সমস্যায়। ফলে এ বছরও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৪৬৭টি আসন ফাঁকা রয়েছে। সরকার বাধ্য করেছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফিস কিস্তিতে নিতে।

তারা জানান, ক্ষমতায় থেকে লাভবান হওয়ার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা। অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের মালিকানাধীন ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত, আর আসন সংখ্যা ১২৭। মো. হাবিবুল হকের মালিকানাধীন তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত ২০০১ সালে, আসন সংখ্যা ১০৭। ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের মালিকানাধীন পপুলার মেডিকেল কলেজ ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আসন ১০৫। ডা. গাজী মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন গাজী মেডিকেল কলেজ ২০১২ সালে স্থাপিত হলেও আসন সংখ্যা ১০০। সৈয়দ মো. মোরশেদ হোসেনের চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ ২০০৬ সালে স্থাপিত ও আসন সংখ্যা ১১৫। নিলু আহসান ও নাজমুল আহসান সরকার দম্পতির মালিকানাধীন রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত ২০০৮ সালে, আসন ১১৫টি।

অন্যদিকে, ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সময়ের মাঝে স্থাপিত বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সিট সংখ্যা ১০০ থেকে ১৩৫ পর্যন্ত। পক্ষান্তরে ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা ৫০টি; ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হেলথ সায়েন্সের আসন ৮০টি এবং ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন্সের আসন ৯৫টি।

এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি ডা. মঈনুল আহসান বলেন, নির্বাচন প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এরা সবাই শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত। আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন, আসছে বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বনশ্রীতে আবাসিক ভবনে আগুন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে হস্তক্ষেপ বন্ধে গণভোট চায় বিএনপি

শান্তির হ্যাটট্রিকে দুই ভেন্যুর ম্যাচে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে বিভক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন

বকা দেওয়ায় মা-মেয়ের বিষপান

গণঅভ্যুত্থানে ‘মহাকাব্যিক’ বীরত্বগাথা রচনা করে গেছেন জুলাই শহীদরা : প্রধান উপদেষ্টা

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

সিআইডি পরিদর্শক ইকরাম আলীর ৫ কোটি টাকার সম্পদ ফ্রিজ

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মোহাম্মদপুরে ইয়াডিয়া নতুন ফ্ল্যাগশিপ স্টোর 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিসেফের মধ্যে চুক্তি 

১০

কর্মীদের অপরাধের দায়ভার বিএনপিকেই নিতে হবে : চরমোনাই পীর

১১

দুই বিভাগে ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস

১২

মামলার শুনানি চলাকালীন আইনজীবীর মৃত্যু

১৩

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৪

মার্কিন কোম্পানির তেল ক্ষেত্রে ভয়াবহ ড্রোন হামলা

১৫

১৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

১৬

ক্রিকেট ফিরছে অলিম্পিকে, কবে শুরু হবে খেলা?

১৭

চাকরি হারালেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের এমডি ওয়াসেক আলী

১৮

প্রসূতির পেটে ১৮ ইঞ্চি কাপড় রেখে সেলাই

১৯

হাসিনামুক্ত দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় প্রয়োজন নেই : জাগপা

২০
X