দিন দিন রাজশাহীতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯১ জন। এর মধ্যে ২১ সেপ্টেম্বর শাকিলা নামে এক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা কার্যক্রম চালু রেখেছে। আর রোগীদের চিকিৎসার জন্য আজ শনিবার রামেক হাসপাতালে এক্সক্লুসিভ ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করছে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে দুজন। তবে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন চারজন। বুধবার সকাল পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে গত এক মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ৯১ জন। এদের মধ্যে ৬৯ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন মারা গেছেন।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ বিভিন্ন ওয়ার্ডে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিনিয়ত এ কার্যক্রম চালাচ্ছে। সচেতনতার জন্য মসজিদের মাইকে বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে প্রচারণার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার উপপরিচালককে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসেও নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
রাসিকের মশক কর্মকর্তা (মনিটরিং) সৈয়দ জুবায়ের হোসেন মুন বলেন, ‘চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবারও নগরীর ১, ১৯ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আমাদের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলেছে। গত কয়েকদিনে ২৩২টি ড্রেন, রাস্তা ও স্থাপনা পরিদর্শন করেছি। এগুলোর মধ্যে ২৩টি স্থানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আমরা ধ্বংস করেছি। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু রেখেছি। এ ছাড়া মশক শাখার ব্লকভিত্তিক কাজ যেমন ড্রেন পরিষ্কারকরণ, জঞ্জাল কর্তন এবং পরিষ্কারকৃত ড্রেনে লার্ভি সাইড স্প্রেকরণ কাজ চলমান রয়েছে।’
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. শেখ মামুন ডলার বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিদিন এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করছেন। অক্টোবরের শুরু থেকেই আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নগরীর কোথাও কেউ যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তাহলে ওই বাড়ির চারপাশে অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি বাড়ি ও এর আশপাশে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে তাৎক্ষণিক স্প্রে করার জন্য আমাদের একটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএফএম আঞ্জুমান আরা বেগম কালবেলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাসিক শুরু থেকে সতর্ক রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০টি ওয়ার্ডের সচিব, মশক পরিদর্শক ও সুপারভাইজারদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর ব্যাপারে মহানগরবাসীকে সতর্ক করতে অ্যাডভোকেসি সভা করা হচ্ছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, জনসচেতনতা এবং মশার বংশবিস্তার রোধের বিকল্প নেই। যেসব কার্যক্রম চলছে, তা আরও বাড়ানো হবে। ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো বাড়ি, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নগরীতে আরবান ক্লিনিকগুলোতে (নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র) বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
রাজশাহী মেডিকেল (রামেক) কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ কালবেলাকে বলেন, রাজশাহীতে কয়েকদিন ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে একজন মারাও গিয়েছে। তবে সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। গত বছর ডেঙ্গুর রোগীদের জন্য আলাদা বিশেষায়িত ওয়ার্ড ছিল। এবারও ডেঙ্গু রোগীদের জন্য এক্সক্লুসিভ ওয়ার্ড চালু হতে যাচ্ছে। ওয়ার্ডটি প্রস্তুতের কাজ চলছে। বিশেষায়িত এই ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এসিসহ উন্নতমানের বেড থাকবে। পাশাপাশি কেবিনেরও ব্যবস্থা থাকবে।’