সুশোভন অর্ক
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ এএম
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মব ভায়োলেন্সে দেশে উদ্বেগ বাড়ছে

সবশেষ ঢাবি ও জাবিতে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা
মব ভায়োলেন্সে দেশে উদ্বেগ বাড়ছে

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এক ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে বিচার)। উচ্ছৃঙ্খল জনতা ‘বিচার করার নামে’ মারধর এবং পিটিয়ে হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটাচ্ছে। কেউ প্রকাশ্যে হামলা করছে, কেউ দলবদ্ধভাবে অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে খুন করছে। অনেকেই নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত অন্তত ২০ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে লুটপাট, জমি দখল এবং বাসাবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

সর্বশেষ বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কার ওপর কখন মব জাস্টিসের খড়গ আছড়ে পড়ে, সেই দুশ্চিন্তা ভর করছে সবার মনে। অবশ্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশি কার্যক্রম অকার্যকর হয়ে পড়লে অস্থিতিশীল অবস্থার তৈরি হয়। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, বগুড়া, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এই মব জাস্টিজের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকেও কড়া বার্তা দেওয়া হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম জানিয়েছিলেন, ‘মব জাস্টিসের বিষয়ে সরকারের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত এবং হামলা করছে, তাদের ব্যাপারে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই মব জাস্টিজ নিয়ে সবাইকে সতর্ক করে বলেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রকৃত দোষী হলেও তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দুঃখজনক মন্তব্য করে তিনি বলেন, মব জাস্টিস ঠেকাতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ইনোসেন্ট লোক যেন কোনো অবস্থায়ই কোনো হেনস্তার শিকার না হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চলমান সময়ে যে ধরনের খুনোখুনি এবং অস্থির অবস্থা চলছে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা। মব জাস্টিসের নামে জোটবদ্ধ হয়ে হামলা-ভাঙচুরের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটছে পরিকল্পিতভাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা, মারপিট করে তাড়িয়ে দেওয়া, আদালত এলাকায় আসামিদের ওপর হামলা—এসবই হচ্ছে প্রতিশোধের মানসিকতা থেকে। কেউ কেউ মনে করছেন, এখন চাইলেই যে কোনো কিছু করা যাবে, কোনো বিচার হবে না। এ পরিস্থিতি নাগরিক জীবনে খুবই উদ্বেগজনক।

এদিকে এক রাতেই দেশের স্বনামধন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পিটিয়ে হত্যার মতো নির্মম ঘটনার কয়েকদিন আগেই গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার মাত্র চার দিন আগে কন্যাসন্তানের পিতা হন তিনি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজানকে কুপিয়ে হত্যার পর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে লেদো নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় দুজনকে কুপিয়ে হত্যার পর স্থানীয় জনতার গণপিটুনিতে আবু তালেব মিয়া নামে একজন নিহত হন। ৪ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের দপ্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতেই গণপিটুনির শিকার হন উৎসব মণ্ডল নামে এক তরুণ। পরে সেনাসদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রাণ রক্ষা করেন। ১৪ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কথিত ধর্ষণের অভিযোগ এনে স্থানীয় জনতা সাইফ আরাফাত শরীফ ও সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনসহ ৩ জন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করে। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন।

গত ৫ আগস্ট ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজিত কুমার সরকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় এবং তাকে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ মেলেনি। মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) তথ্যমতে, গত আগস্টে ২০টি পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মব জাস্টিসের নামে গণপিটুনিতে হত্যা ও হামলার মতো ঘটনা সম্পূর্ণরূপে আইনের পরিপন্থি এবং আইনের বরখেলাপ। কেউ যদি অপরাধী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোক্রমেই তাকে আক্রমণ করা যাবে না, তার গায়ে হাত তোলা যাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক কালবেলাকে বলেন, বর্তমানে আমরা নাগরিকরা একটি সুন্দর দেশে সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু এই মব জাস্টিসের মতো ঘটনা আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা ভাবছে এমন কিছু করলে তাদের কোনো শাস্তি হবে না। এসব ঘটনাকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তাই এসব ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টিয়া পাখি নিয়ে ভিডিও করে বিপাকে শিক্ষিকা 

গ্রিন কার্ডের আবেদনে আসছে বড় পরিবর্তন

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

গাজাবাসীর জন্য রোজা থাকছেন বিশ্বের ১৫০ আলেম

ডেনমার্ক দূতাবাসে চাকরির সুযোগ

সকালে উঠেই কোন ভুলের কারণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি 

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছে ইসরায়েলিরা

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, ভরিতে কত?

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত?

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

১০

নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ও বিটাক দখলে নিলেন ববি শিক্ষার্থীরা

১১

আইভরি কোস্ট  / প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়াতে চান ৬০ জন

১২

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

১৩

গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জাতিসংঘের

১৪

আজ আপনার ভাগ্যে কী আছে, দেখে নিন রাশিফলে

১৫

২৮ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৬

২৮ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

১৭

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

১৮

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৯

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প কর্মসূচি দিয়ে জবি ছাত্রীসংস্থার আত্মপ্রকাশ

২০
X