দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টিও এই শ্বেতপত্রে উঠে আসার কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ২৪ অক্টোবর এ বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এনসিটিবি। এ ছাড়া এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে এনসিটিবির আরও চার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গলদটা গোড়াতেই ছিল। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের দিয়েই এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রতিবেদন। কালবেলার হাতে আসা এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এখানে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্রই নেই। বিগত সময়ে প্রশিক্ষণ ও বই ছাপানো বাবদ কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও তার কোনো উল্লেখ নেই। নাশতা ও আপ্যায়ন ভাতা হিসেবে কোটি টাকা ব্যয় দেখালেও তার তথ্য নেই। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতির অনেক তথ্য না আসায় এই শ্বেতপত্র গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা গবেষকরা। তাদের মতে, অর্থনৈতিক সুবিধাভোগীদের সরানো না হলে এনসিটিবিতে স্বচ্ছতা আসবে না।
এনসিটিবির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম। সদস্য রয়েছেন উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু নাসের টুকু, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (প্রাথমিক) মো. আব্দুল মুমিন মোছাব্বির, বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. হাফিজুর রহমান। সদস্য সচিব হিসেবে আছেন বিশেষজ্ঞ (মাধ্যমিক) মীর রাহাত মাসুম। কমিটিকে এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করতে রয়েছেন এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) সাইফা সুলতানা, গবেষণা কর্মকর্তা (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ (মাধ্যমিক) ড. প্রবীর চন্দ্র রায়, গবেষণা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) শাহ মো. জুলফিকার রহমান। তবে অভিযোগ উঠেছে, তাদের প্রায় সবাই বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন। এ ছাড়া শ্বেতপত্রটি মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার আগে এনসিটিবির সচিব স্বাক্ষর করবেন। কিন্তু সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি আগে থেকেই এনসিটিবিতে উপসচিব (প্রশাসন) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই কর্মকর্তা একাই চার চারবার এনসিটিবিতেই পদায়ন নিয়েছেন। শুধু এনসিটিবিতে নয়, আওয়ামী আমলে পুরো শিক্ষা প্রশাসনে ফিরোজ আল ফেরদৌস সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাগ্নে পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।
এসব কর্মকর্তা যে আওয়ামী লীগ আমলে সুবিধাভোগী ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় শ্বেতপত্রের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। দুর্নীতির অনেক তথ্যই গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। শ্বেতপত্রের আলোকে এনসিটিবির দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, শিক্ষাক্রম পরিমার্জন ও উন্নয়ন, পাঠ্যপুস্তক উন্নয়ন, মূল্যায়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত চার অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি ৬৩ লাখ ৮ হাজার ৪৫৯ টাকা। প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যয় ১ কোটি ৪২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮৬ টাকা। আর প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত ব্যয় (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত) ৩ হাজার ২৩১ কোটি ৫২ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৬ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই মুদ্রণ সংক্রান্ত বিগত ১৫ বছরের ব্যয় ৮ হাজার ৪২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৩১ টাকা। অথচ বই ছাপানোর অনিয়ম নিয়ে প্রতি বছর অভিযোগ থাকলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই শ্বেতপত্রে।
সূত্র বলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে এনসিটিবির খরচের বাইরে মাউশির প্রকল্প থেকে খরচকৃত আরও সাড়ে ১২শ কোটি টাকার কোনো তথ্য প্রতিবেদনে দেওয়া হয়নি। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১০টি কর্মশালায় ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা খরচ দেখালেও অন্য প্রশিক্ষণ বা কর্মশালার নামে পাঁচ তারকা হোটেল বা রিসোর্টে কত টাকা খরচ হয়েছে, সেই চিত্র নেই শ্বেতপত্রে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান কালবেলাকে বলেন, এটি প্রাইমারি সামারি (প্রাথমিক সারসংক্ষেপ)। এটির বিস্তারিত করতে গেলে প্রচুর সময় লাগবে। এই স্বল্প সময়ে সেটি করা সম্ভব হয়নি।
তবে শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, গত ১৫ বছরে শিক্ষা খাতে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা এখনো এনসিটিবিতে বহাল রয়েছেন। এর ফলে অনিয়মের প্রকৃত চিত্র প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। কর্মশালার নামে এখনো অর্থের অপচয় বন্ধ হয়নি। সেই সঙ্গে গত ১৫ বছর প্রতিষ্ঠানটি ছিল এনজিওনির্ভর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বিগত সময় এনসিটিবি ফাঁকা থাকলেও পাঁচ তারকা হোটেলে প্রশিক্ষণ বা কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা খরচ করা হয়েছে। এগুলো সামনে আসা উচিত। তিনি বলেন, রাজনীতির বিষয়টিরও একটি সম্ভাবনা থাকে। কারণ, বিগত সময়ে যারা এনসিটিবির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদের দিয়েই শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছে।
নাশতা ও আপ্যায়ন বিলের নামে কোটি টাকা লোপাট
আগামী বছরের জন্য স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরির সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্র উন্মোচন হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর ১০০টি দরপত্র ইজিপি পদ্ধতিতে উন্মুক্ত করতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘কমিটিকে কষ্টসাধ্য, শ্রমসাধ্য ও গভীর রাত পর্যন্ত অতিরিক্ত কাজ করতে হওয়ায় এ সময়ে পারিতোষিক হারে রাতের খাবার ও আপ্যায়ন ভাতা বাবদ নামের পাশের বর্ণিত পারিশ্রমিক দেওয়া যেতে পারে।’
তথ্য বলছে, সরকারি উৎস কর কেটে রাখার পর ওই কমিটিতে থাকা চেয়ারম্যান ১০ হাজার ৮০০ টাকা; সদস্য (পাঠ্যপুস্তক), সদস্য (শিক্ষাক্রম), সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং সচিব ৯ হাজার ৯০০ টাকা পেয়েছেন। সর্বনিম্ন পেয়েছেন অফিস সহায়করা, সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে। কর বাদে মোট খরচ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০ টাকা।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর উৎপাদন শাখায় ৭টি, বিতরণ শাখায় ৬টি, অর্থ শাখায় ৭টি—এভাবে বেশ কয়েকটি শাখায় নাশতা ভাতা হিসেবে টাকা তোলা হয়েছে। এমন কমিটি সভা বা কমিটির জন্য আড়াই থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ ছিল। বিগত সরকারের সময়েও এভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হতো। অথচ রুটিন কাজকে বিশেষ কাজ দেখিয়ে এই ভাতা নেওয়া হয়েছে। যার কোনো আর্থিক ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে অডিট আপত্তি আছে জানা সত্ত্বেও এমনটা করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন কর্মশালার জন্য যে সম্মানীর হার নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
তবে গত মাসে এ নিয়ে কথা বললে এনসিটিবি সচিব শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস কিছু জানেন না বলে কালবেলাকে জানান। তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ এক মাস পর গত বুধবার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়, অর্থ শাখার সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ এই টাকা পেয়েছেন কি না ও কমিটিতে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকায় অনেকেই তো আছেন। তবে এ বিষয়ে না জেনে বলতে পারব না।’
পরে এ নিয়ে কথা হয় এনসিটিবির অর্থ শাখার রুটিন দায়িত্বে থাকা সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি তো এই পদে নতুন এসেছি। তেমন কিছু জানি না। চেয়ারম্যান এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’ এরপর যোগাযোগ করা হয় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা দিনরাত পরিশ্রম করে, তাদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছরই এমনটি হয়ে আসছে। এর জন্য তেমন অডিটে সমস্যা হয় না। যেহেতু এটিকে (এনসিটিবি) স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বলা যায়, সে কারণে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু বিষয় কাজে গতি আনার জন্য করতে হয়।’
এনসিটিবি চেয়ারম্যানের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘সরকারি টাকা চাইলেই খরচ করা যায় না। স্বায়ত্তশাসিত হলেও সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যয়ের একটি বিধি রয়েছে। এর বাইরে গিয়ে চাইলেই খরচ করতে পারবে না, অনুমোদন লাগবে।’
এনসিটিবিতে বহাল আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগীরা
সূত্র বলছে, এনসিটিবিতে এখনো আওয়ামী শাসনামলের সুবিধাভোগীরা বহাল রয়েছেন। যে কারণে শ্বেতপত্রে দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকেও বই ছাপাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিপাকে ফেলতে চান তারা। সূত্র আরও বলছে, রিয়াজুল হাসান সম্রাট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর মামাতো ভাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বামপন্থি ছাত্রসংগঠন করতেন। পরবর্তী সময়ে হয়ে যান খাস আওয়ামী লীগ। আওয়ামী অনুসারী পরিচয়ে শেরপুর সরকারি কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় একাধিকবার তার সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি এনসিটিবির প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ শাখার সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান ও সদস্যের (শিক্ষাক্রম) সঙ্গে শিক্ষাক্রম বিষয়ে কিছুটা মনোমালিন্য থাকায় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছিল। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে এনসিটিবি চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এখন নিজের প্রভাব ধরে রাখতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঘনিষ্ঠদের এনসিটিবিতে পদায়ন করছেন।
এনসিটিবির এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, এনসিটিবির গাড়ি মেরামতের জন্য খরচ নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু দ্বিগুণ বা তিন গুণ খরচ দিয়ে গাড়ি ঠিক করানো হচ্ছে। এই ফান্ড কীভাবে সমন্বয় করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আবার মনিটরিং কর্মকর্তাদের টিএ/ডিএ প্রদান করা সত্ত্বেও টেন্ডার করে গাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে। ফলে সরকারের অনেক টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
এ নিয়ে আবারও কথা হয় এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে। তিনি এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘একটি পক্ষ চায় না এনসিটিবিতে ভালো কোনো কাজ হোক। সে কারণে তারা এসব তথ্য ছড়াচ্ছেন। আমরা সরকারি চাকরি করেছি বিগত সময়ে। এখনো করছি। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল না।’
অন্যদিকে আওয়ামী আমলে পুরো শিক্ষা প্রশাসনে ফিরোজ আল ফেরদৌস সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ভাগ্নে পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিরও ঘনিষ্ঠ তিনি। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তার পিএস শাহগীরের সঙ্গেও ছিল ফিরোজ আল ফেরদৌসের গভীর সখ্য। তিনি শিক্ষা ক্যাডারে শাহেদুল খবির, রতন কুমার মজুমদার, নিজামুল করিম সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে পরিচিত।
বিগত সময়ে একটি প্রেসের বিরুদ্ধে নিম্নমানের বই দেওয়ার অভিযোগ ও পাঠ্যবইয়ের কাভারে বিতর্কিত ধর্মীয় বিষয় থাকার বিষয়টি তদন্তে গঠিত কমিটিতে ছিলেন এই ফিরোজ আল ফেরদৌস। কিন্তু তাকে কোনো শাস্তি না দিয়ে শুধু সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ২০২১ সালে এনসিটিবি সচিব হওয়ার আবেদনে ১৩ জন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীর সুপারিশ এনেছিলেন। এখন তিনি নিজেকে বৈষম্যবিরোধী প্রমাণে মরিয়া।
এমন অভিযোগের বিষয়ে শাহ মুহাম্মদ ফিরোজ আল ফেরদৌস বলেন, ‘এনসিটিবির যেসব পদ বই ছাপার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল কিংবা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো পদে ছিলাম না। এখন সচিব হয়ে শুধু দাপ্তরিক কাজ করছি। এখানে আমার কাজ শুরু ওপরের আদিষ্ট হয়ে সাইন করা আর সেবা দেওয়া।’
এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক রিয়াদ চৌধুরী নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আত্মীয়। তিনি লম্বা সময় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। সরকার পতনের পরে তাকে এনসিটিবিতে পদায়ন করা হয়। রিয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘দাদার বাড়ির দিকের কোনো আত্মীয় যদি রাজনীতিবিদ হন, সেটি কি দোষের।’