সকালের ঘুম ভাঙাতে এক কাপ কফি, আর মন খারাপ হলে একটু মিষ্টি কিছু—এ যেন এখন আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী! কিন্তু জানেন কি, এই দুই অভ্যাসই আমাদের শরীরকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে অকাল বার্ধক্যের দিকে?
২০ বছরের অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় ভোজরাজ জানাচ্ছেন, আমরা যেসব খাবার ‘স্বাভাবিক’ মনে করি, সেগুলোর মধ্যে চিনি আর ক্যাফেইন সবচেয়ে নীরবভাবে শরীরের ক্ষতি করে চলেছে। তার মতে, অনেক সময় আমরা যেটাকে ক্ষুধা বা ক্রেভিং বলি, সেটা আসলে শরীরের একটা সংকেত—আপনি ভুল কিছু খাচ্ছেন!
চলুন দেখে নেওয়া যাক, চিনি আর ক্যাফেইন কীভাবে আমাদের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করছে:
- অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ ওঠানামা করে
- ধমনিতে প্রদাহ তৈরি হয়, যা হার্টের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ
- একসময় ধমনির ক্ষতি হয়, যা বাইরে থেকে বোঝাও যায় না
- চিনির এই প্রভাব শরীরে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে, বার্ধক্যের গতি বাড়িয়ে দেয়।
- স্নায়ুতন্ত্রকে চাপে রাখে, ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ অবস্থায় আটকে রাখে
- এতে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বেড়ে যায়, রক্তচাপও বাড়ে
- ঘুম ঠিকমতো হয় না, বিশ্রাম থেকে শরীর বঞ্চিত হয়
- দেখতে সুস্থ হলেও ভেতরে ভেতরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে।
চিনি আর ক্যাফেইন একসঙ্গে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, শরীরের শক্তি হারিয়ে যেতে থাকে। মনে হতে পারে ‘আমি তো সুস্থ আছি’, কিন্তু শরীর ভিতরে ভিতরে বার্ধক্যের পথে হাঁটছে।
ডা. ভোজরাজ জানাচ্ছেন, খাবার ও জীবনযাত্রার ছোট ছোট পরিবর্তনেই বড় ফল পাওয়া সম্ভব। মাত্র ১২ সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেছে:
- রক্তচাপ কমে এসেছে
- ঘুমের মান বেড়েছে
- রক্ত পরীক্ষায় উন্নতি দেখা গেছে
তিনি বলেন, ‘ক্রেভিং দুর্বলতা নয়, এটা একটা সংকেত। আপনি চাইলে এই সংকেতের জবাব দিতে পারেন—সচেতন পরিবর্তনের মাধ্যমেই।’
- চিনি ও ক্যাফেইনের পরিমাণ কমান
- চিনিযুক্ত পানীয় বাদ দিয়ে পানি বা ফলের রস খান
- সাদা পাউরুটির বদলে হোল গ্রেইন বেছে নিন
- আইসক্রিমের বদলে খান তাজা ফল
এই ছোট ছোট সিদ্ধান্তগুলোই আপনার বয়স থামিয়ে দিতে পারে—অন্তত সময়ের চেয়ে আগেই যেন বার্ধক্যের ছাপ না পড়ে।
শরীরের যত্ন মানেই শুধু অসুখ ঠেকানো নয়, বরং সুস্থভাবে বাঁচা। অকাল বার্ধক্য যেন আপনার জীবনের গতি থামিয়ে না দেয়। আজ থেকেই শুরু করুন—চিনি আর ক্যাফেইনের জাল থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন