ফয়সাল আহমেদ
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:২৬ এএম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

চাল আমদানির প্রভাব নেই খুচরা বাজারে

বাজার পরিস্থিতি
চাল আমদানির প্রভাব নেই খুচরা বাজারে

ভারত থেকে বেসরকারিভাবে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত দুই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৯ হাজার ৬৬২ টন চাল আমদানি হলেও এর প্রভাব নেই রাজধানীর খুচরা বাজারে। দাম না কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ভোক্তারা। এদিকে রমজান সামনে রেখে তেলের বাজারে সংকট জিইয়ে রেখেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

গত দুই দিন রাজধানীর নিউমার্কেট, জিগাতলা কাঁচাবাজার, কাঁঠালবাগান ও পলাশী মার্কেট ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ টাকার নিচে ভালো মানের চাল বাজারে নেই। সর্বনিম্ন গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায়। খুচরা বাজারে ভালো মানের মিনিকেট চালের কেজি ৮৪-৮৫ টাকা, আটাশ ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮০-৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, চিনিগুঁড়া ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা বেশি দামে কিনলে বেশিতেই বিক্রি করি। যারা আমদানি করেন, দাম বৃদ্ধির পেছনে তাদের কারসাজি রয়েছে। সরকার তদারকি করলে দাম ভোক্তার নাগালে আসবে।

নিউমার্কেটের চাল ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন বলেন, যত দিন যাচ্ছে, চালের দাম বাড়ছে। আগে আমদানিতে সরকার কর নিলেও এখন সেটা নিচ্ছে না। সিন্ডিকেট না ভাঙা পর্যন্ত দাম কমবে না।

জিগাতলার এক বিক্রেতা বলেন, গত এক মাসে চালের দাম আকস্মিক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে মিনিকেট চাল কেজি প্রতি ৭২ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত ৬ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত চাল আমদানি করতে পারবে।

গত বছর দুই দফায় আমদানি করা চাল থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুরুতে চালের দাম কমাতে ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল আমদানি শুল্ক। আশানুরূপ ফল না পেয়ে গত ১ নভেম্বর চালের ওপর সব ধরনের আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। ফলে চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৯.৬০ টাকা কমবে বলে আশা করা হলেও উল্টো বেড়েছে।

পলাশীতে বাজার করতে আসা আলতাব বলেন, ভেবেছিলাম এই সরকারের আমলে চাল,

মাছ-মাংসের দাম নাগালে আসবে; কিন্তু হলো না। সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে মানুষ বাজার করে শান্তি পাবে না।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। শুল্ক প্রত্যাহার করলেও কে কীভাবে চাল বিক্রি করছে, এটার খবর কেউ নিচ্ছে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করছে।

এদিকে তেল নিয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ‘তেলেসমাতির’ ফলে ফের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামনে রমজান লক্ষ্য করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় ব্যবসায়ীরা মানুষকে জিম্মি করে তাদের দাবি আদায় করেন। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে যে হারে দাম বাড়ায়, সেই হারে দাম কমায় না। এ ছাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় বছরের পর বছর জিম্মি করে ভোক্তার পকেট লোটেন মুনাফাখোর ব্যবসায়ী।

কাঁঠালবাগানের মুদি দোকানদার আরিফ বলেন, তেলের দাম একই আছে, শুধু তেল নেই। রমজান লক্ষ্য করে বড় ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর ফন্দি এটি। অথচ সংকট খুচরা বাজারে।

বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়, খোলা সয়াবিন ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটার ১৫৭ টাকা এবং বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৮৬০ টাকায়।

স্থিতিশীল রয়েছে শীতকালীন সবজির বাজার। গত সপ্তাহের মতো বাঁধাকপি ও ফুলকপির কেজি ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০, চিচিঙ্গা ৭০, বেগুন ৫০-৬০, কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ৫০, পালংশাক, লালশাক, পেঁয়াজের কলি প্রতি আঁটি ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

গত সপ্তাহের তুলনায় মানভেদে প্রতি কেজি আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা। ৩০-৩৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে এসব পণ্যের বাজার ভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১০ টাকা। ২১০ টাকার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ৩৪০-৩৫০ টাকার সোনালি ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৪০ টাকায়। ৮০ টাকার হাঁসের ডিমের হালিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। অপরিবর্তিত রয়েছে মুরগির ডিম, প্রতি হালির দাম ৪৮ থেকে ৫০ টাকা।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫ কেজি ওজনের রুই মাছের কেজি ৫০০ টাকা, ছোট রুই ২৫০ টাকা কেজি, পাবদা আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ টাকা ও জাটকা ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মূল্য ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ এবং হাড়ছাড়া গরুর মাংস ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দীপাবলিতে জোবায়েদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও প্রার্থনা

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৬ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান করবে : এসএম জাহাঙ্গীর

ভিক্টোরিয়া কলেজে সংঘর্ষের ঘটনার মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ১৭

নানা দাবিতে এইচএসসি উত্তীর্ণদের একাংশের আন্দোলনের ডাক

৭ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য হার 

পীর সাহেব মধুপুর / কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে গণবিস্ফোরণ ঘটবে

জবি শিক্ষার্থী জোবায়েদ হত্যা : জড়িতদের নিয়ে যা বললেন বিএনপি নেতা

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়’

বিমানবন্দরের আগুনে পুড়ল ২০০ কোটি টাকার ওষুধের কাঁচামাল

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

১০

বরগুনায় সওজ শ্রমিকদের তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি

১১

পুঁজিবাজারে যুক্ত হচ্ছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন

১২

জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদলের বৈঠক

১৩

রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঢাকা বিভাগীয় কাবাডি চ্যাম্পিয়ন

১৪

টেকসই বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীরাই আশার আলো : চসিক মেয়র

১৫

এস আলমের শতাধিক কোম্পানির ৫১৩ কোটি শেয়ার জব্দ

১৬

খুবিতে প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

১৭

শহীদ তায়িমের কবর জিয়ারত ও স্বজনদের পাশে বিএনপি

১৮

বিলাসী জীবনযাপনসহ পুরো কার্যক্রমের তথ্য জানাল বাংলাদেশি পর্ন তারকা যুগল

১৯

ইউপি সদস্যের বাড়ির ছাদে শুকানো হচ্ছিল গাঁজা, গ্রেপ্তার ১

২০
X