শেখ হারুন
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:০৮ এএম
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন

১২ হাজার টাকার যন্ত্র কেনা হয় ১ লাখ ৩৩ হাজারে

বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প ‘শতরঞ্জি’র উন্নয়নে নেওয়া একটি সরকারি প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃক বাস্তবায়িত এ প্রকল্পে ১১ গুণ বেশি দামে নিম্নমানের তাঁতযন্ত্র (পিটলুম) কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাব ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রেও অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রমাণ মিলেছে। সম্প্রতি বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পটির মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এসব অনিয়মের বিস্তারিত চিত্র উঠে এসেছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১৫টি পিটলুম কেনা হয়েছে, যার প্রতিটির দাম পড়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। অথচ বাজারে প্রতিটি পিটলুমের প্রকৃত দাম মাত্র ১২ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি পিটলুমের পেছনে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা বেশি খরচ করা হয়েছে। শুধু অতিরিক্ত দামেই নয়, অধিকাংশ পিটলুমই ব্যবহার অনুপযোগী। প্রকল্পের আওতায় কেনা ১৫টি পিটলুমের মধ্যে মাত্র ছয়টি কার্যকর, বাকি ৯টি পিটলুমে কাঠের অবকাঠামো থাকলেও কোনো যন্ত্রাংশ নেই।

সরেজমিন পরিদর্শন করে আইএমইডি আরও জানতে পারে, বিসিকের কেনা পিটলুমের কাঠ অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনুযায়ী এসব পিটলুম তাঁতিদের প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনের জন্য ব্যবহারের কথা থাকলেও অধিকাংশই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। একইভাবে প্রকল্পের অধীনে কেনা অন্যান্য যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ওভারলক মেশিন কেনা হয়েছে, যা পরিদর্শনে অকেজো অবস্থায় পাওয়া গেছে। একইভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা ফটোকপি মেশিনটিও দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা বিভিন্ন আসবাব অব্যবহৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এদিকে প্রকল্পের অংশ হিসেবে রংপুরে একটি প্রশিক্ষণ ও উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আইএমইডির পরিদর্শনে দেখা গেছে, নির্মিত ভবনটি কোনো কাজে আসছে না এবং সেখানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। আইএমইডি কর্তৃপক্ষ শিল্প মন্ত্রণালয়কে দ্রুত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দিলেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সরকারি কেনাকাটার নিয়ম ভঙ্গ করেও প্রকল্পের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুসারে এই ধরনের বড় কেনাকাটার জন্য উন্মুক্ত দরপদ্ধতি (OTM) অনুসরণ করার কথা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নে রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (RFQ) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি RFQ পদ্ধতিতেও নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি। মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রেও একই অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রকল্পের অধীনে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে পাঁচটি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে, যা উন্মুক্ত দরপদ্ধতির পরিবর্তে সরাসরি উত্তরা মটরস লিমিটেড থেকে কেনা হয়।

আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘনের কারণে এসব অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে এক মাসের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অকার্যকর মেশিন ও আসবাব পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনজন প্রকল্প পরিচালক (PD)। ২০১৭-২০১৯ মেয়াদে মো. খায়রুল আলম আলমাজী, ২০১৯-২০ মেয়াদে আ ফ ম জালাল উদ্দীন এবং প্রকল্প সমাপ্তির সময় বর্তমান বিসিকের রংপুর জেলার উপমহাব্যবস্থাপক মো. এহেছানুল হক দায়িত্বে ছিলেন। শেষ প্রকল্প পরিচালক মো. এহেছানুল হক জানান, প্রকল্পের কেনাকাটাসহ অন্যান্য কাজ তার পূর্বসূরিদের আমলে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন।

শতরঞ্জি বাংলাদেশের কুটির শিল্পের একটি সম্ভাবনাময় খাত। সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতা ও অনিয়মের কারণে এই শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিল্পের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হলে সরকারি প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।

কেনাকাটাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক মো. এহেছানুল হক কালবেলাকে বলেন, আমার আগে দুজন পিডি ছিলেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই প্রকল্পের কেনাকাটাসহ অন্যান্য সব কাজ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে যতটুকু জেনেছি উন্নত মানের কাঠের পিটলুম কেনার কারণে খরচ বেশি হয়েছে, আর প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এমন কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকেই। যদিও আইএমইডি বলছে কাঠের অবকাঠামোগুলো নিম্নমানের। আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং আসবাব অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম না থাকার কারণে এগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করা জন্য আমি চেষ্টা করছি; কিন্তু এখন পর্যন্ত শুরু করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘৯ মাসেও গণহত্যাকারী দল নিষিদ্ধ হলো না কেন’

বাদ জুমা বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আবদুল্লাহর

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা / নিহত ৪ জনের দুজন ছিলেন মসজিদের ইমাম

রাতে শিবির মাঠে নামায় পাল্টে গেল দৃশ্যপট

যমুনার সামনে রাতভর যা যা হলো

কয়টি রাফায়েল আছে ভারতের, একেকটির দাম কত?

ফের গোলাগুলি শুরু, উত্তেজনা তুঙ্গে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে নাক গলাতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র

দুপুরের মধ্যেই আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ড. মাসুদের

সকালেও বিক্ষোভ চলছে যমুনার সামনে

১০

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে কোমলমতি শিশুরা

১১

আগুনে ঘি ঢালা নয়, শান্তি চাই : এরদোয়ান

১২

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৩

আরব সাগরে ভারতের অভিযান, টার্গেটে পাকিস্তান

১৪

০৯ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৫

০৯ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৬

অবশেষে গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী

১৭

১৭ দিন পর রাজশাহী পলিটেকনিকে খুলল তালা

১৮

শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষার্থীদের স্লোগান, প্রধান শিক্ষককে শোকজ

১৯

স্বাস্থ্য পরামর্শ / মায়ের গর্ভেই থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

২০
X