কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৩, ০১:২১ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের বিচার শুরু

গ্রামীণ টেলিকম
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের বিচার শুরু

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনিসহ চারজন বিবাদী নিজেদের নিরপরাধ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান। তার আবেদন শুনানি শেষে খারিজ করে দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী না করা, শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন না করা, এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি।

এসব অভিযোগে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামানের করা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত।

২০২২ সালের ১৩ জুন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে দুই মাস স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই বছরের ১৭ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

পরে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলা কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুল খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়।

গত ৮ মে এই আপিল খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। সে সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নূরুজ্জামানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান। এই তিন আসামিও পৃথকভাবে মামলার আবেদন করেন।

ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার ঘটনা দেওয়ানি প্রকৃতির। অথচ ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। তবে অভিযোগ গঠনের আদেশের হুবহু অনুলিপি সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তবে আদালত এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ দেননি।

কর ফাঁকির মামলায় নতুন বেঞ্চ অন্যদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাঁচ বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা কর ফাঁকি ও ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত ১৩ মামলার শুনানি করতে নতুন বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে এটির শুনানি হবে।

এর আগে সোমবার বিচারপতি ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের দ্বৈত বেঞ্চ জানান, কনিষ্ঠ বিচারপতি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেছিলেন, কাজেই তারা এটি শুনতে পারবেন না। পরে নথি পাঠানো হয় প্রধান বিচারপতির কাছে।

গত ৭ মে হাইকোর্টকে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১২-১৭ এ পাঁচ বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এর আগে, ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ১১শ কোটি টাকার আয়কর রিটার্নের মামলা চালুর জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সরকারের পাওনা অর্থগুলোর মধ্যে একটি হলো গ্রামীণ কল্যাণ ৫৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। গ্রামীণ কল্যাণের আরেকটিতে ৩৫৪ কোটি ৭৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫৪৭ টাকা এবং গ্রামীণ টেলিকমের একটিতে সরকারের পাওনা ২১৫ কোটি টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

১৩ ডিসেম্বর থেকে সিনেমা হলে ‘840’

লাখো মানুষের কষ্ট ডিএনডির অভ্যন্তরীণ খালের পচা পানি

বেগম রোকেয়া দিবস / শীতে শিক্ষার্থীদের সাড়ে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখলেন অতিথিরা

জয়পুরহাটে পুলিশ পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি

পায়ুপথে সোনার বার, কারবারি আটক

বাচসাসের সঙ্গে পরিচালক সমিতির মতবিনিময় সভা

দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইরানে হামলার পাঁয়তারা করছে ইসরায়েল

সিরিয়ায় এখন কী করবেন এরদোয়ান?

দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের’ অভিযোগ বিরোধীদের

আসাদকে জবাবদিহি করতে হবে : বাইডেন

১০

মামলা বাণিজ্যে জড়িত থাকায় এসআই প্রত্যাহার

১১

ঝড় থামছেই না পুষ্পা টুর, প্রথম সপ্তাহেই লক্ষ্য হাজার কোটি

১২

নিউ ইয়র্ক থেকে জায়েদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ, কেন জানেন?  

১৩

খবর না দিয়েই এফডিসিতে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

১৪

এবার কারাগারে হাই কমোড চাইলেন পলক

১৫

থানায় জিডির ১ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা 

১৬

মেসি ও নিজের মানসিক অবসাদ নিয়ে মুখ খুললেন এমবাপ্পে

১৭

সাদা পোশাকে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যাবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৮

কলকাতা মাতালেন ব্রায়ান অ্যাডামস

১৯

দুদক ও বিচার বিভাগ শেখ হাসিনার দাসে পরিণত হয়েছিল : আসিফ নজরুল

২০
X