ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেজন্য আজ বুধবার থেকেই সবাইকে নির্বাচনের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, এবার আমাদের সর্বশেষ দায়িত্ব পালনের পালা। নির্বাচন অনুষ্ঠান। আজ এই মহান দিবসে আপনাদের সামনে এ বক্তব্য রাখার পর থেকেই আমরা আমাদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করব। আমরা এবার একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করব। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিচারকাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে। বিচারের আনুষ্ঠানিক শুনানি পর্বও শুরু হয়েছে। ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞে যারা জড়িত তাদের বিচার এ দেশের মাটিতে হবেই। বিচার প্রক্রিয়া ও এর ফল ক্রমান্বয়ে মানুষের কাছে প্রকাশিত হতে থাকবে। বিচারের পুরো প্রক্রিয়া দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছ ও দৃশ্যমান রাখা হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা তার দীর্ঘ ভাষণে ফ্যাসিবাদ পতনের পর ১২ মাসে তার সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা অনেকদূর পথ অতিক্রম করে এসেছি। আমাদের জাতীয় জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে, সংকট দূর হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা সফলতার সঙ্গে শুল্ক আলোচনা সমাপ্ত করেছি। এর ফলে আমাদের অর্থনীতির সম্ভাবনা বহু গুণ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তে বহু হতাহতের ঘটনাকে স্মরণ করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের সম্পর্কে দু-একটা কথা বলতে চাই। এবারের নির্বাচন হবে ঈদের উৎসবের মতো, যা হবে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। তবে একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। এবার আমরা প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার আয়োজন নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, যেন সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে এ দেশের সব নাগরিক একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার কাজে সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেজন্য সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করব।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন যেন আনন্দ-উৎসব, শান্তি-শৃঙ্খলা, ভোটার উপস্থিতি, সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকে, সেজন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করতে আগামীকাল (আজ) থেকে আমরা সবাই মানসিক প্রস্তুতি ও প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন শুরু করব। নির্বাচন আসছে। যদি আপনি আপনার নির্বাচনী এলাকা থেকে দূরে বসবাস করেন, তবে এখন থেকে নিয়মিত নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করুন। যাতে সেরা ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে আপনি প্রস্তুত হতে পারেন। ১২ মাস ধরে আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জুলাইয়ের দাবি পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসুন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই—এই জাতিকে আমরা আর কখনো বিভক্ত হতে দেব না। আমরা সব নাগরিকের প্রতি মর্যাদাশীল থাকব, তিনি যেই পরিচয়েরই হোন না কেন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে সাময়িকভাবে যদি পথভ্রষ্ট হয়েও পড়ি, প্রতি বছর জুলাই আমাদের নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে শক্তি জোগাবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই তরুণদের অছিলায় জাতির আত্ম-আবিষ্কারের মাস। ভুল ভ্রান্তি শুধরে নেওয়ার মাস। গর্তে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার মাস। জুলাই গ্রামগঞ্জে, সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফসলের মাঠে, ঘরে বাড়িতে, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের কাছ থেকে তাদের আকাঙ্ক্ষাগুলো জেনে নেওয়ার মাস। যাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের এই অতি মূল্যবান অধিকার ফিরে পেলাম, ভোটটা দেওয়ার আগ মুহূর্তে যেন তাদের চেহারা আমাদের চোখে ভেসে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারি বেশি দূরে নয়। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই ভোটের দিন এসে পড়বে। বহু বছর আমরা কেউ ভোট দিতে পারিনি। এবার আমরা সবাই ভোট দেব। কেউ বাদ যাবে না। সবাই যেন বলতে পারি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে রওনা করার জন্য আমি আমার ভোটটা দিয়েছিলাম। আমার ভোটেই দেশটা সে পথে রওনা হতে পেরেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে সব নাগরিকের কাছে আমার আহ্বান—আসুন, ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রথম বড় পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হই।’

ড. ইউনূস গতকাল ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে’ জাতির উদ্দেশে রাত ৮.২০ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন, যা শেষ হয় ৮.৫৫ মিনিটে। তিনি ভাষণের শুরুতেই দেশবাসী, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানান। ৫ আগস্ট, জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় দিন। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। গত বছরের জুনে আদালতের একটি রায়ে সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল হলে দেশের তরুণ শিক্ষার্থী সমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের এই ক্ষোভ দাবানলে পরিণত হয় স্বৈরাচারের তুচ্ছতাচ্ছিল্যে, দমনপীড়নে, নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, নির্মম হত্যাযজ্ঞের কারণে। স্বৈরাচারী শাসকের নির্দেশে পরিচালিত হত্যাযজ্ঞের সামনে নির্ভীকচিত্তে দাঁড়িয়ে ছিল এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা। তাদের সম্মুখভাগে ছিলেন আমাদের অদম্য নারীরা। দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন তারা। আমি জাতির সূর্যসন্তান জুলাই শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিয়েছেন, জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত এক বছরে আমরা অনেক সংকট ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে পার করেছি। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা আমাদের গভীরভাবে বেদনাহত করেছে। সর্বশেষ মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ঝরে গেছে আমাদের কোমলমতি শিশুসহ বেশকিছু মানুষের প্রাণ। আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন অনেকেই। এ ঘটনা আমাদের সবাইকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। যারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সিঙ্গাপুর, চীন, ভারতসহ কয়েকটি দেশের যেসব চিকিৎসক ও নার্স আহতদের সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যারা রক্ত দিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাদের প্রতিও।

অথর্নীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন এক বছর আগে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৬ বছরব্যাপী একটানা ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটে বিধ্বস্ত এক অর্থনীতির দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন কারোরই মনে হচ্ছিল না এই বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে আবার সহজে চালু করা যাবে। মাত্র এক বছরের মধ্যে আমরা এতদূর রাস্তা অতিক্রম করতে পারব, যা চিন্তাই করা যায়নি। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পালা।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছি। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করব। তবে নির্বাচনের আগে আমাদের অত্যাবশ্যকীয় কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে (৫ আগস্ট), সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জাতির কাছে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেছি। এই ঘোষণাপত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের তিনটি দায়িত্ব ছিল—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার প্রত্যাশার লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার। সে লক্ষ্যে আমরা বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিলাম। তাদের মধ্যে প্রধান প্রধান সংস্কার কমিশনগুলো যে সুপারিশ পেশ করেছে, সেগুলোর মধ্যে স্বল্প সময়ে আশু বাস্তবায়নযোগ্য বহু সংস্কার আমরা এরই মধ্যে সম্পন্ন করেছি। এই সংস্কারগুলোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাত, বিচার ব্যবস্থা ও জনপ্রশাসনে গতিশীলতা আসবে; স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি হ্রাস পাবে।

ড. ইউনূস বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারকাজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছিলাম। এই কমিশনে ৩০টিরও অধিক রাজনৈতিক দল ও জোট স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের মতামত দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রায় দুই মাস ধরে দলগত ও জোটগতভাবে আলোচনা করেছিল। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলো বাদ দিয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে ১৯টি মৌলিক সংস্কারের বিষয় চিহ্নিত করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ দিন ধরে আলোচনা শেষে ১৯টি বিষয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে, যদিও কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঐকমত্য কমিশনের পরিচালনায় দেশের সব রাজনৈতিক দল মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে এসেছে, যা একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এটা শুধু আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে নয়, বৃহত্তর পরিমণ্ডলের রাজনৈতিক ইতিহাসেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই দলিল প্রণয়নের জন্য সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং ঐকমত্য কমিশনের সদস্যবৃন্দ বিশেষ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে জাতির পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আশা করছি ঐকমত্যের ভিত্তিতে অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে এবং এর বাস্তবায়নেও ঐকমত্যে পৌঁছাবে। জুলাই সনদ বাংলাদেশে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও সক্ষমতা, নাগরিক অধিকারের সত্যিকারের বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সামর্থ্যের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে ভবিষ্যতের কোনো সরকারই যেন আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে। আর যেন ১৬ বছরের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়। বহু মানুষকে প্রাণ দিতে না হয়। আমাদের যেন আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন না হয়।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিধস্ত বাংলাদেশ যে আবার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে তার বড় কারণ হলো আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ঐতিহাসিক অবদান। নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। নারী ভোটাররা যেন দেশের সর্বত্র নির্দ্বিধায় আনন্দ-উৎসাহ সহকারে তাদের ভোট দিতে পারে, এটা নিশ্চিত করতে চাই। এবার যেন কেন্দ্রে কেন্দ্রে নারী ভোটারের ঢল নামে, আমরা সেই লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এবারের ভোট মহাআনন্দে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণে ১৫ বছর ধরে দেশের নাগরিকরা ভোট দিতে পারেনি। এবারের নির্বাচনে আমরা আমাদের বকেয়া আনন্দসহ মহাআনন্দে ভোট দিতে চাই। এবারের নির্বাচনে জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে যাবে এরকম ভোটাররা নানা উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে, তাদের এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এর মধ্যে নতুন নারী ভোটার থাকবে, নতুন পুরুষ ভোটার থাকবে। তাদের মধ্যে এমন ভোটার থাকবে, যারা ১৫ বছর আগে থেকেই ভোট দিতে পারত; কিন্তু জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে আসবে যারা ১০ বছর আগে, ৫ বছর আগে ভোট দিতে পারত; কিন্তু পারেনি। আর আসবে ভাগ্যবান ও ভাগ্যবতীর দল, যারা এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার যোগ্যতা লাভ করল এবং সঙ্গে সঙ্গে ভোট দেওয়ার সুযোগও পেয়ে গেল। নির্বাচনের দিনকে আমরা ঈদের উৎসবের মতো করতে চাই। আপনারা সবাই বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। নাগরিক অধিকার প্রয়োগের মহাআনন্দ পরবর্তী বংশধরদের কাছে তুলে ধরার জন্য। এখন থেকে প্রতিদিন আলাপ করুন, আপনার এলাকায় ভোটদান ব্যবস্থা কেমন হলে সুন্দর হয়, কেমন হলে আনন্দমুখর হয়, সেটি আগে থেকে ঠিক করার জন্য। নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজের ভিত্তি রচনা হবে এবারের নির্বাচনে। তার জন্য প্রস্তুতি নিন।

একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায় মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যত বড় সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সবেরই নেপথ্যে কারণ ছিল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কোনো দল যদি গায়ের জোরে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে, তার চূড়ান্ত পরিণতি কী তা জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইতিহাসের কলঙ্কিত কোনো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি আর করতে চাই না। আপনারা প্রত্যেকেই অবগত আছেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে দেশের বাইরে বসে এবং ভেতরে থেকে নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে, তারা যেন নির্বাচনকে সংঘাতময় করে তোলার কোনো রকমের সুযোগ না পায়। কেননা, পরাজিত শক্তি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে; কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন করা গেলে অপশক্তির পরাজয় চূড়ান্ত হবে।

নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ নেওয়া হবে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিনিয়ত পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নেব। এজন্য একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছি। দ্রুত এই অ্যাপটি চালু হবে। আপনারা আপনাদের সব পরামর্শ, সব মতামত, সব আশঙ্কা এবং উদ্যোগের কথা এই অ্যাপের মাধ্যমে জানাবেন। আমরা তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেব, সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নেব।

প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে, আপনাদের প্রতিশ্রুতি-প্রতিজ্ঞা-পরিকল্পনায় কোনোকিছুতেই যেন তরুণরা বাদ না পড়ে। নারীরা বাদ না পড়ে। মনে রাখবেন, যে তরুণ-তরুণী বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, তারা বিশ্বকেও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আপনার দল থেকে তাদের সে সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নিন। আগামী নির্বাচনে সবাই নিরাপদে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে, এটা নিয়ে কারও কোনো আপত্তির সুযোগ রাখা যাবে না। আমরা সবাই সবার পছন্দের প্রতি সম্মান দেখাব—এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা হয়েছিল। তবে যথাযথ পদক্ষেপ, নজরদারি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর ফলে এটি এড়ানো গেছে। বিশেষ করে এ বছরের পবিত্র মাহে রমজান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও বন্যার কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল প্রায় ১৪ পার্সেন্ট। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে এটি ৬ শতাংশে নেমে আসবে। জুন মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ নিয়ে চার মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ক্রমান্বয়ে কমেছে।

দেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর ফলে টাকা শক্তিশালী হয়েছে। অনেক বছর পর ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়ছে। গত ১১ মাসে বৈদেশিক পাওনাদারদের পাওনা সুদ ও আসল বাবদ ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪০০ কোটি ডলার অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আগের বকেয়া দায় পরিশোধের পরও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। আগামীতে এ ধারা বজায় থাকবে বলে আমরা আশা করি। বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার ফলে এ বছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটা দ্বিগুণের বেশি। আর অক্টোবর থেকে হিসাব করলে ছয় মাসে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট এসেছে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত সরকারের আমলের শেষ ছয় মাসের তুলনায় দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম বড় লক্ষ্য। সম্প্রতি হংকংভিত্তিক শিল্প গোষ্ঠী হানডা বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে আড়াইশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, যা এ খাতে চীনা কোনো কোম্পানির একক সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। ফলে ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং আরও চীনা কোম্পানিকে এদেশে বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করবে। এর মাধ্যমে আমাদের তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের পথ খুলবে।

সরকারের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে দেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন দেশে ফ্যাসিবাদী-দুর্বৃত্তদের অনেক সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরও কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মজবুত করতে হলে আমাদের চিন্তায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। নদী ও বিশাল সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে সমান্তরালভাবে ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই। বর্তমান সরকার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। নৌবাহিনীকে নিউ মুরিং টার্মিনাল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়ায় প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ২২৫টি বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে। দেশে আরও অনেক শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে বলে জানান তিনি।

ড. ইউনূস জানান, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে সরকার গভীরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে অন্তত ১ লাখ বাংলাদেশি তরুণদের পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করেছি। ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ কর্মীদের পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনা করে দেখছি যাতে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের জন্য সেগুলো স্বস্তিদায়ক হয়। চলতি বছর হজের ব্যয় অন্য বছরের তুলনায় কমানোর ফলে প্রায় ৮৭ হাজার বাংলাদেশি সুষ্ঠুভাবে হজ পালন করতে পেরেছেন। ‘লাব্বাইক’ নামে অ্যাপ চালু করেছি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় আমাদের হজ ব্যবস্থাপনা প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তরুণ শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের বাবা-মা ও শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবর্তে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের জোর করে রাজনৈতিক দলের প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হতো। প্রশাসন ও শিক্ষকরা সবই জানতেন, অথচ কেউ এটি থামাতে পারেননি, চেষ্টাও করেননি। কারণ শিক্ষকদের একটি বড় অংশ প্রমোশনের ও সুবিধার জন্য দলীয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। নিপীড়কের ভূমিকায় ছিলেন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দলীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ আর অমানুষিক নির্যাতন চলত। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছিল টর্চার সেল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমরা আর কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন কোনো রাজনীতি দ্বারা কলুষিত হতে দেব না, যা পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট ও তরুণদের জীবন ধ্বংস করে।

ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন দশম গ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শূন্য সাড়ে ছয় হাজার প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহত যোদ্ধাদের জন্যও আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৭৭৫টি শহীদ পরিবারকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা বাবদ ব্যাংক চেক দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্টদেরও কয়েকটি আইনগত বিষয় নিষ্পত্তি সাপেক্ষে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি আহত ১৩ হাজার ৮০০ জন জুলাই যোদ্ধাকে তিনটি ক্যাটাগরিতে নগদ ও চেক বাবদ মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ৭৮ জন অতি গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং চিকিৎসা ব্যয় বাবদ এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আহতদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সবকটি মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট বিচারক নিয়োগসহ যেসব কাজ এ সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে করে যেতে পারবে, সেসব কাজের অধিকাংশই এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়ে গেছে, বাকি কাজ চলমান। ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি।

দেওয়ানি আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ বিভিন্ন আইনগত সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। ফলে এখন থেকে কোনো ব্যক্তিকে আটকের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব পরিবারকে জানাতে হবে।

তিনি বলেন, অতীতে মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে কাজ করেছে সরকার। অন্তর্বর্তী সরকার এসব বাধা অপসারণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা সমালোচনাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা করা যাচ্ছে। নিকট অতীতে যা ছিল অকল্পনীয়। সাংবাদিকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সরকার এরই মধ্যে প্রেস কাউন্সিল পুনর্গঠন করেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে গুজব। অপতথ্য মোকাবিলা করার জন্য সাংবাদিকদের সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্বৈরাচারী সরকার আমলে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় বাধা ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যা পরে সাইবার নিরাপত্তা আইনরূপে আবির্ভূত হয়েছিল। আমরা এ আইনটি বাতিল করেছি। এই আইনের অধীনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা বাতিল করা হয়েছে। নতুন আইনে আগের আইনের নিবর্তনমূলক ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নতুন এই আইন প্রণয়নের পর সাংবাদিকদের আইনি হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার মান ভালো করতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।