নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তার অনুমোদন নিতে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ আমদানির সারাংশ তৈরি করা হয়েছে। শিগগির এটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে জয়েন্টভেঞ্চার প্রকল্প, উৎপাদন খাতে আঞ্চলিক বিনিয়োগ, প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিষয়ে গৃহীতব্য কার্যক্রম যথা দ্রুত বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিতে গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারে নয়াদিল্লি সম্মতি দিয়েছে। গত জুনে ভারত ও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে এই সম্মতি দেওয়া হয়। ফলে এখন ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে কোনো বাধা নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পেলে আমদানির জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন কালবেলাকে বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য শিগগির সারাংশ পাঠানো হবে। নেপাল থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে, তা দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের চেয়ে কম দাম হবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করা হবে। এটিতে বেশি সময় লাগবে না। কারণ, এ বিষয়ে ভারত তাদের ভূখণ্ড ব্যবহারের সম্মতি ইতোমধ্যে দিয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেড়ামারার এইচভিডিসি সাব-স্টেশনের এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে এই সাব-স্টেশনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। সাব-স্টেশনটির অব্যবহৃত ক্ষমতা ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে উভয়পক্ষ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। ভারত এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন বিদ্যুতের ট্যারিফ বা দাম ও ট্রেড মার্জিন নিয়ে নেগোশিয়েশন করতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নেপাল থেকে আমদানি করা ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের সম্ভাব্য ব্যয় হবে ৬ থেকে ৭ টাকা। এর মধ্যে ভারতের গ্রিড ব্যবহারের খরচও রয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে নেপালের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি শীতকালে একই সঞ্চালন লাইন দিয়ে রপ্তানির চিন্তাভাবনা চলছে। ওই সময় নেপালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের সম্মতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। ওই চিঠির জবাবেও সম্মতি দিয়েছে ভারত।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) নেপালের ইলেকট্রিসিটি অথরিটি এবং ভারতের বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের সঙ্গে গত মে মাসে বিদ্যুতের মূল্য ও ট্রান্সমিশন ফি নিয়ে বৈঠক ও সমঝোতা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভারতকে ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি পরিশোধ করতে হবে। ভারতের বিদ্যুৎবিষয়ক কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ক্রেতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ চার্জ নিচ্ছে, তার সমপরিমাণ হবে ট্রান্সমিশন চার্জ। এটি ধার্য করা হবে ভারতের উন্মুক্ত নিয়ম অনুযায়ী।
জানা গেছে, ভারতের সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসায় ট্রান্সমিশন চার্জ ও সার্ভিস ফি দিতে হবে দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসিকে (ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়া কোম্পানি)। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে, ইউনিটপ্রতি ট্রান্সমিশন চার্জ ৪০-৪৫ পয়সা (ভারতীয় রুপি) হতে পারে। এ ছাড়া ৪ থেকে ৭ পয়সা পরিষেবা চার্জ যুক্ত হতে পারে।
মন্তব্য করুন