মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৯-এর পরিবর্তে আট করার দাবি জানিয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। এবারের এইচএসসির ফল বিপর্যয়ে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত জিপিএ না পেয়ে মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্ন ভঙ্গের আশঙ্কায় পড়েছে। ফলে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের দাবি তুলেছেন তারা। এ দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৫ অনুসারে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ হতে হবে এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪ থাকতে হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলে দেখা যায়, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম। এবার সারা দেশে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯ হাজার ৯৭ শিক্ষার্থী, যেখানে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১। অর্থাৎ এক বছরে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমেছে ৭৬ হাজার ৮১৪ জন।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, উত্তরপত্র মূল্যায়নে কঠোরতা, ইংরেজি ও হিসাববিজ্ঞানে খারাপ ফল এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ফলে বড় প্রভাব ফেলেছে। ২০০৪ সালের পর এবারই প্রথম এইচএসসিতে পাসের হার এত কম।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভর্তি পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯ নির্ধারণ করায় অনেকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পাবে না। এতে সরকারি তো বটেই, প্রাইভেট মেডিকেলেও ভর্তি হওয়া কঠিন হবে। তাদের দাবি, জিপিএ ৯-এর পরিবর্তে ৮ করা হলে অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে। পাশাপাশি জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪ এর শর্ত বাতিল করে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জিপিএর তুলনায় লিখিত বা এমসিকিউ পরীক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হোক।
শিক্ষার্থীদের এ দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে বিপিএমসিএ। গত ১৯ অক্টোবর সংগঠনের সভাপতি ডা. শেখ মহিউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন স্বাক্ষরিত এক আবেদনে তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন।
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ১ লাখ ৪ হাজার ৪৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়। সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের ৫ হাজার ৩৮০ আসনে ভর্তি সম্পন্ন হলেও বেসরকারি ৬৭টি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৫ আসনের মধ্যে ৪৬৭টি আসন শূন্য ছিল।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভর্তি যোগ্যতা যদি আগের মতো জিপিএ ৯-এ নির্ধারিত থাকে, তবে প্রার্থীর সংখ্যা হবে গত বছরের অর্ধেকেরও কম। এতে অন্তত এক হাজারের বেশি আসন শূন্য থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মারাত্মক আর্থিক ও শিক্ষাগত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
মন্তব্য করুন