বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সবার নজর শেখ হাসিনার রায়ে

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
সবার নজর শেখ হাসিনার রায়ে

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত তারা। এ মামলার অন্য দুই অভিযুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। মোট পাঁচটি অভিযোগে অভিযুক্ত তিন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে এ মামলায় সাক্ষ্য ও জবানবন্দি দিয়েছেন।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চেয়েছেন তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী। এ ছাড়া রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের খালাস চেয়েছেন তার আইনজীবী। রায়টি ঘিরে সারা দেশে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবার নজর আজ ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিকে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী রায় হতে যাচ্ছে, সেটা জানতে মুখিয়ে আছে পুরো জাতি। এ ছাড়া বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে বিশ্বের অনেক মানুষও। তাই এ রায় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, পূর্বঘোষিত তারিখ অনুযায়ী রায় ঘোষণার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করবেন। এই ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রায়ের বিষয়ে গতকাল রোববার প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বেলা ১১টায় এজলাসে উঠবেন। আমরা আসামিদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি এবং সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দিক না কেন, প্রসিকিউশন সেটা মেনে নেবে।’ তিনি আরও বলেন, এই রায়টি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সেই সঙ্গে বিটিভি থেকে দেশের অন্য টেলিভিশন তা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে। এ ছাড়া বিটিভি থেকে রায়টি রয়টার্স সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। অন্যদিকে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বড় পর্দা বসাবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে ঢাকাবাসী সহজেই এই রায় ঘোষণা দেখতে ও শুনতে পারবেন।

এদিকে, ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর আবারও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। গতকাল ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাসহ আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সেটা শহীদ পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার জন্যও তারা আবেদন করেছেন। আমরা ট্রাইব্যুনালে তার (শেখ হাসিনা) সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থনা করেছি। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে মামলায় যারা ভিকটিম বা শহীদ আছে, আহত পরিবার আছে—তাদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনা জানিয়েছি।’

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে উত্তেজনা। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে। চারটি জেলায় র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি আজও সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে গতকাল সেনা সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

রায় ঘোষণার আগের দিন পূর্ণ ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজের ফেসবুক পেজে এ-সংক্রান্ত এক পোস্টে গতকাল তিনি বলেন, ‘আগামীকাল (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যেখানে গত বছরের ঢাকায় সংঘটিত প্রাণঘাতী সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা পূর্ণ ন্যায়বিচার এবং স্বচ্ছতা দাবি জানাই।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল বলেছেন, ‘রায় যা-ই হোক না কেন, তা কার্যকর হবে। এ নিয়ে দেশে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলে তা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে।’

যে পাঁচ অভিযোগে অভিযুক্ত

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো আমলে নিয়ে বিচার করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগগুলো হচ্ছে।

অভিযোগ-১

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

অভিযোগ-২

আসামি শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।

অভিযোগ-৩

শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

অভিযোগ-৪

শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদেও দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

অভিযোগ-৫

শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাদের অধীন ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ-নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে, তাদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

মামলার পূর্বাপর:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারায় এই আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এই পাঁচ অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন (১০ জুলাই) সাবেক আইজিপি মামুন গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন। এরপর ঐতিহাসিক এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতাসহ স্বজনহারা পরিবারের অনেকে। এছাড়া স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। সর্বমোট ৫৪ জন সাক্ষী এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার শুনানিতে উঠে এসেছে জুলাই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দিয়ে গৃহযুদ্ধ লাগানোর চেষ্টাও করেছিলেন। তাদের সাক্ষ্যে জুলাইয়ের গণহত্যা, নৃশংসতা, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার গুম-খুনসহ নানা ভয়ংকর নির্যাতনের চিত্র উঠে আসে।

গত ১২ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি যুক্তিতর্কে এ মামলা থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের খালাস আবেদন করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনেরও খালাস আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাঙামাটিতে বন্যহাতির আক্রমণে নিহত ২

গণতান্ত্রিক আন্দোলনভিত্তিক গবেষণায় ডাকসুর বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা

রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট, পুলিশের তল্লাশি

জবিতে ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটি

নাশকতার প্রস্তুতির সময় আ.লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার 

উপদেষ্টা রিজওয়ানার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ 

দেশের প্রথম এআই প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রদর্শনী

স্থানীয়দের ভালোবাসায় সিক্ত বিএনপির প্রার্থী রবিন 

আবু সাঈদের মৃত্যু কীভাবে, জানালেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী

সাবেক এমপি হারুনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাল পূজা উদযাপন পরিষদ

১০

২০ বছরেও নির্মাণ হয়নি ধসে পড়া সংযোগ সড়ক

১১

৩৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি

১২

দুই কৃষকের আড়াই লাখ টাকার পেঁয়াজ চারা নষ্ট

১৩

র‍্যাবের অভিযানের সময় সন্ত্রাসীর এলোপাতাড়ি গুলি, গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ

১৪

মহাসড়কের বিভাজকে লাগানো গাছ কেটে ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার

১৫

তৃণমূল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান সেলিমুজ্জামানের

১৬

কেরানীগঞ্জে থানায় আগুন

১৭

রাজধানীতে বিদেশি রিভলভারসহ ১ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার 

১৮

মারুফার সেই কান্না নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন জ্যোতি

১৯

আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো মাদকসেবী দেখতে চাই না : বাবর

২০
X