দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে ধোঁয়াশা ততই কাটতে শুরু করেছে। আসন ছাড়ের বিষয়ে জোট শরিক ও নির্বাচনী মিত্রদের এরই মধ্যে সবুজ-সংকেত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে প্রতিটি দল আলাদাভাবে তাদের পছন্দের তালিকা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিবন্ধিত ২৮টি দল সব মিলিয়ে শতাধিক আসনে ছাড় চাইছে। সব দাবি পূরণ করা সম্ভব না হলেও এ বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের মনোভাব ইতিবাচক বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সামনে রেখে আসন সমঝোতার তৎপরতা বেড়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর দাবি-দাওয়া স্পষ্ট হচ্ছে। শরিক ও মিত্রদের এ-সংক্রান্ত দাবি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন জমজমাট করার কৌশল হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে এ বিষয়টি অনেক আসনে শরিক ও মিত্রদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে অনেক দল ভোটের আগেই জয়লাভের নিশ্চয়তা চাইছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় মিত্র জাতীয় পার্টি। সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গত দুবার বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল তারা। দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে দুদলের মধ্যে দরকষাকষি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হওয়ার ফসল ঘরে তুলতে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে বেশি আসনে সমঝোতা চায়। বিএনএম এবং বিএনপি ছেড়ে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১৫-১৬টি আসনে ছাড় চান। এসব দলকে কত আসনে ছাড় দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
তবে বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নেই, ১৪ দলের শরিক এমন একটি দলকে একটি আসনে ছাড় দেওয়ার আভাস দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাথেও আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের নতুন মিত্র কল্যাণ পার্টি ও বিএসপি একটি
করে আসনে ছাড় পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল এবার তাদের আসন হারাতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে। শিগগির জোটের শরিকদের সঙ্গেও চূড়ান্ত হবে। তবে সব দলই নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করতে একমত।’
এদিকে প্রকাশ্য ঘোষণা না হলেও ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের আসন ছাড়ের বিষয়ে আগামীকাল রোববার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এদিন আওয়ামী লীগের কয়েক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে ১৪ দলের শরিকদের বৈঠকের কথা রয়েছে।
এদিকে গত সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোটের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ১৪ দলের নেতারা। সেই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সমন্বয়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ওই কমিটির সদস্যরা। সেই সিদ্ধান্ত সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে চূড়ান্ত করে রোববার পাঠানো হবে।
১৪ দলের অন্যতম জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কালবেলাকে বলেন, ‘এখনো আসন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। আরও দু-এক দিন সময় লাগতে পারে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ কালবেলাকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের বৈঠকে শরিকদের আসন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি একটি তালিকা ক্ষমতাসীন দলের কাছে হস্তান্তর করেছে। বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তালিকাটি হস্তান্তর করা হয়। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় জাতীয় পার্টি তাদের দাবি করা আসনগুলোতে জয়ের নিশ্চয়তা চায়।
অবশ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ জানিয়েছেন, ‘জাতীয় পার্টি কোনো তালিকা দেয়নি।’
জোটবদ্ধ হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও শরিকরা। ৩০০ নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২৯৮টিতে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের শরিক দলগুলোও আলাদাভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২৮৭ আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলো শুরুতে আলাদাভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৬টি আসনে ১৪ দলের শরিকদের ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচটি, জাসদ ও বিকল্পধারা তিনটি করে, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি দুটি করে এবং বাংলাদেশ জাসদ একটি আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির ২৬টি আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।
গতবারের মতো এবারও জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে। তারা শেষ পর্যন্ত সব প্রার্থী নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে।’