কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৮ এএম
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শীতের দাপট মাসজুড়েই থাকবে

শীতের দাপট মাসজুড়েই থাকবে

পৌষের বিদায়বেলায় শীতে কাঁপছে সারা দেশ। কয়েকদিন ধরে হাড়কাঁপানো শীতের সঙ্গে ঘন কুয়াশার দাপটও বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু হয়ে আছে পুরো জনপদ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল আর নিম্ন আয়ের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। এরই মধ্যে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া দুই বৃদ্ধা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের এ পরিস্থিতি আরও দুদিন চলতে পারে। আর জানুয়ারিজুড়েই থাকবে শীতের দাপট। গত শুক্রবার চার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও গতকাল তা ১৩ জেলায় ছড়িয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁর বদলগাছীতে ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রাজশাহীর বদলগাছিতে ৮ দশমিক ৯, সৈয়দপুরে ৯, তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩, চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫, রাজশাহী ৯ দশমিক ৬, ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭, কুমারখালীতে ১০, রংপুরের ডিমলায় ১০ দশমিক ১, রংপুরে ১০ দশমিক ৩, বরিশালে ১০ দশমিক ৭, যশোর ও রাজারহাটে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে।

গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী সোম ও মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। আর বৃহস্পতিবারের দিকে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টির পর আবার তীব্র শীত নামবে। সে সময় দেশের উত্তরাঞ্চল, সিলেট, যশোর ও চুয়াডাঙ্গাজুড়ে বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। এখন ঢাকার তাপমাত্রা বাড়া ও কমার ব্যবধান মাত্র ৫ ডিগ্রি। এ কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। যদি এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে, তাহলেই শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে।

কুয়াশার কারণেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেটের মতো অঞ্চলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কুয়াশা বিকেল পর্যন্তও থাকে। আবুল কালাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ে সূর্যের কিরণকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় মাটি শীতল থাকে এবং তীব্র শীত অনুভূত হয়।

আবুল কালাম মল্লিক বলেন, মাসজুড়েই শীতের অনুভূতি থাকবে। ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির দিকে দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া, ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বৃষ্টিপাত থেমে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ২০ তারিখের পরে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আবার শুরু হতে পারে।

ঢাকার বাইরে থেকে কালবেলার ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও রংপুরের পীরগাছায় শীত নিবারণের জন্য আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া দুই বৃদ্ধা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। শুক্রবার রাতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জবা রানী নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। তিনি পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কর্ণিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। এদিকে শনিবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আমেনা বেগম নামে আরেক বৃদ্ধা দগ্ধ হয়ে মারা যান। তিনি পীরগাছার গোপাল গ্রামের জালাল উদ্দিনের স্ত্রী।

গত ১২ দিনে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে ৪২ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের কারও কারও শরীরের ১০ থেকে ৪০ শতাংশ আবার কারও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। স্বজনরা জানান, শীত নিবারণ করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কাপড়ে আগুন লেগে যায়। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. শাহ মো. আল মুকিত জানান, চিকিৎসাধীন বেশিরভাগ রোগীই আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে নারী শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা এরই মধ্যে ৬০ হাজার কম্বল বিতরণ করেছি। ছিন্নমূল মানুষের জন্য সাড়ে ৫ হাজার শীতবস্ত্র প্রস্তুত রয়েছে।

গতকাল সারাদিন বগুড়ায় সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষের। আয় রোজগার কমে গেছে ইজিবাইক আর অটোরিকশা চালকদের। শীতে কাজ করতে পারছেন না দিনমজুর ও ক্ষেতমজুররা। শিবগঞ্জের রাঙ্গামটিয়া গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রশিদ বলেন, যখন থেকে কুয়াশার সঙ্গে বাতাস আর শীত নামছে, তখন থেকে কাজ কমে গেছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি। পালিকান্দা গ্রামের দিনমজুর সমশের মোল্লা বলেন, পরিবারের অভাবের তাগিদে শীতের মধ্যেও ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডায় ১ ঘণ্টাও সেখানে টিকে থাকা যাচ্ছে না। ঠান্ডায় হাত-পাসহ শরীর অবশ হয়ে আসছে। এজন্য রোজগারও হচ্ছে না।

দিনাজপুরে কুয়াশার দাপটে সূর্য উধাও হয়ে গেছে। ১০ জানুয়ারি থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পুরো জেলা। সকাল ১০টা পর্যন্ত যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

ঘন কুয়াশায় নওগাঁয় ইরি-বোরো বীজতলা লাল বর্ণ ধারণসহ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। শীতে লোকজন ঘর থেকে কম বের হওয়ায় আয় অর্ধেকে নেমেছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের। এর ফলে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো চাষাবাদ। ইরি-বোরো চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, ঘন কুয়াশা দীর্ঘায়িত হলে বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ইরি বীজ কিনে রোপণ করতে হবে।

এ অবস্থায় দিনে বীজতলা ঢেকে রাখা, সন্ধ্যার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখা এবং এসব বীজতলায় ইউরিয়া, পটাশ সার ছিটানোর পরামর্শ দেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) খলিলুর রহমান। আলু ও সরিয়াক্ষেতে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে কীটনাশক স্প্রে, আলুক্ষেতে পানি দেওয়ারও পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা শহরে মানুষের উপস্থিতি কম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে আসছেন না। তবে পেটের তাগিদে দিনমজুর শ্রেণির মানুষকে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসতে হয়েছে। রিকশা-ভ্যানচালকরা আশানুরূপ যাত্রী পাননি।

চার দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় লালমনিরহাটে তীব্র শীতে ভোগান্তি বেড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও লোকালয়। সেইসঙ্গে হিমেল বাতাসে জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে মানুষের। কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে নিম্ন আয়ের লোকজনের। রাতে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় দুর্ভোগে পড়েছে বয়স্ক ও শিশুরা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্রি ফর্চুন অফার ক্যাম্পেইন চালু

নিয়োগ দিচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, আবেদন করুন অনলাইনে

কষ্টে দিন যাচ্ছে ‘এক টাকার মাস্টারের’, কেউ খবর রাখে না 

স্কোয়াড ঘোষণার পর বড় দুঃসংবাদ পেল আর্জেন্টিনা

সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিকৃতি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বিবৃতি

ইসলামী ব্যাংকে ‘অবৈধ নিয়োগ’ বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন

নাটোরে বাসচাপায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রথম দেখাতেই মানুষ চিনে নিন ৫ মনোবিজ্ঞানভিত্তিক ট্রিকসে

পাচার অর্থ ফেরাতে / ১২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চুক্তি করতে নির্দেশ

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানায় অভিযান, অস্ত্র উদ্ধার

১০

সাতক্ষীরায় সিভিল সার্জনের অপসারণ দাবিতে অফিস ঘেরাও

১১

এভারেস্ট উপত্যকায় শতাধিক পর্যটক আটকা, উদ্ধার অভিযান চলছে

১২

জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবসের আয়োজনে বক্তারা / জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সর্বজনীন করতে আইন সংস্কার অপরিহার্য

১৩

তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক

১৪

ভর্তার স্বাদ বাড়াতে জানুন ছোট্ট কিন্তু দারুণ কিছু টিপস

১৫

ট্রেনে কুবি শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করায় ৫ যুবক আটক

১৬

যাই দেখছি সব নতুন লাগছে, বিসিবি নির্বাচনে ভোট দিয়ে আমিনুল

১৭

ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ঐক্যকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখি : নিলোফার মনি

১৮

নারী সহকর্মীদের নিয়ে বিস্ফোরক দাবি রুনা খানের

১৯

‘উপসর্গ থাকলেও নারীর মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সে নয়’

২০
X