শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫২ এএম
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিএনপির ‘আগ্রহী’ তৃণমূল কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে

স্থানীয় সরকার নির্বাচন
বিএনপির ‘আগ্রহী’ তৃণমূল কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে

বাস্তবতা বিবেচনায় সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিএনপির তৃণমূলের একটি অংশ। এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডকে তাগাদাও দিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে অতীতে দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে ভোট করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও রয়েছেন। তাদের যুক্তি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিলে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। নেতাকর্মীদের মাঝেও উদ্দীপনা দেখা দেয়। এতে সংগঠন শক্তিশালী করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তা ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন বলেও তাদের ধারণা। এ অবস্থায় ভোটের মাঠে সক্রিয় হতে কেন্দ্রের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

যদিও এখন পর্যন্ত উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বর্তমান সরকারের অধীনে সবরকম নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা থাকায় এ নিয়ে নতুন করে আলোচনারও প্রয়োজন মনে করছেন না তারা। তবে নেতাকর্মীদের কেউ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে গেলে এবার কোনো ধরনের ব্যবস্থা নাও নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে দলে দুই ধরনের মত রয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত থাকলেও নির্বাচনে গিয়ে কোনো অর্জন হবে না—এমন মতও এসেছে। তবে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিলেও কেউ ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হলে দল তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নাও নিতে পারে।

এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলেও এর পরপরই অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির স্থানীয় নেতারা অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর প্রথম দিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়া হয়। তবে ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, ‘আগামীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।’

তখন থেকেই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন বর্জন করছে বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে সিটি নির্বাচনে অংশ নেন কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু ও নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকার। স্থানীয় পর্যায়ের আরও কিছু নেতাও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন করেন। তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

এবারো দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার। বিগত মেয়র নির্বাচনে অংশ নিয়ে বহিষ্কৃত হলেও দুজনই এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতাসীন দলকে মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত তারা কেমন ফল করেন, তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেও আগ্রহ রয়েছে। আবার আগে থেকেই বহিষ্কৃত দুই নেতার নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপির ভূমিকা নিয়েও অনেকের আগ্রহ রয়েছে। এ কারণে কুমিল্লার নির্বাচনকে অনেকেই বিএনপির জন্য ‘এসিড টেস্ট’ মনে করছেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে নিজাম উদ্দিন কায়সার গতকাল কালবেলাকে জানান, ‘স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। এখন কুমিল্লার জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিলে এবং নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে বিজয়ী হব। আমি দলের হয়ে ভোট করে জয়ী হলে স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীরা লাভবান হবেন। তারা প্রটেকশন পাবেন। তা ছাড়া বিএনপির বা বিরোধী দলের কেউ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে সরকার চাইলেও নিজের মতো সবকিছু করতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের ইস্যু এখন নেই। তা ছাড়া নাগরিক হিসেবে কারো পক্ষেই স্থানীয় নির্বাচনকে অস্বীকার বা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, জন্ম-মৃত্যুসনদসহ নানা কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে যেতে হবে। তাই এ নির্বাচনের অংশগ্রহণ করা সব দিক থেকেই যুক্তিযুক্ত। সার্বিক বিবেচনায় এ বিষয়ে হাইকমান্ড নমনীয় হলে দল এবং নেতাকর্মীরা উপকৃত হবেন।’

যে কারণে নির্বাচনের পক্ষে তৃণমূল:

রংপুর, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, নেত্রকোনা, বগুড়াসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন সাবেক জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির পদধারী নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলে অনেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। স্থানীয়ভাবে সংগঠন ধরে রাখার জন্য এ বিষয়ে ইতিবাচক হওয়া দরকার বলে তারা মনে করেন।

তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সেই আন্দোলনে ইস্যু করা ঠিক হবে না। কারণ, স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না। তা ছাড়া এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীদের কোনো প্রতীক দিচ্ছে না। ফলে এই নির্বাচনে সরকারি দলের একতরফা প্রভাবও কমতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাদের মতে, আন্দোলন ঠেকাতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে তৃণমূলে বিএনপি অনেকটা পর্যুদস্ত। এই অবস্থা থেকে দলকে ফের চাঙ্গা করতে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কারণ, এবার একেকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের কয়েকজন করে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে (আওয়ামী লীগ ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী) যে বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তা সহসাই মিটবে না। নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির প্রার্থীরা একটা সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতে পারবেন। ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন। তা ছাড়া অতীতে যারা উপজেলা চেয়ারম্যান বা মেয়র হয়েছেন, তারা এক দিনেই এমন অবস্থানে আসেননি। এলাকায় নিজের ও দলের ভিত্তি গড়ে তুলেই জনগণের সমর্থন পেয়েছেন। সেই ভিত্তি ধরে রাখতে হলেও নির্বাচনে যাওয়া দরকার।

তারা বলছেন, সিলেট বিএনপি নেতা আরিফুল হক ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পরে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এতে জাতীয়ভাবে সরকারের পরিবর্তন না হলেও সাংগঠনিকভাবে বিএনপি লাভবান হয়েছে। স্থানীয়ভাবে নেতাকর্মীরা সক্রিয় ও চাঙ্গা হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে নির্বাচনে দলীয় বিবেচনা ছাড়াও আত্মীয়তা ও এলাকাভিত্তিক বিবেচনাও কাজ করে। নির্বাচন না করলে এসব ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে পারে।

বিএনপির জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কথা বললেও দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। ময়মনসিংহ বিভাগের একটি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক ও নির্বাচমুখী রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে গেলে নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণ সঞ্চার হয়। উদ্দীপনা কাজ করে। সবার মাঝে ঐক্য তৈরি হয়। এ কারণে সংগঠনের স্বার্থেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। তবে নির্বাচন বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে সিদ্ধান্ত নেবেন, নেতাকর্মীরা সেটাই অনুসরণ করবে।’

তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে নতুন কিছু ভাবার অবকাশ নেই বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন কখনোই শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু হবে না। সুতরাং তার অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ নেই। এ নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আপনারা কি তামাশা করেন, প্রশ্ন আবিদের

ডাকসু নিয়ে সিবগাতুল্লাহ সিবগার পোস্ট

দেব-শুভশ্রীর পাল্টাপাল্টি জবাব, নায়িকার সম্মানহানি চাননি নায়ক

চবিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর স্থানীয়দের সাত দফা দাবি

ডাকসু নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই : ঢাবি প্রশাসন

দেশে স্বৈরাচার ঠেকাতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে : মনি

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়ার সমাধিতে যুবদলের শ্রদ্ধা

নিজ হাসপাতালে পড়ে ছিল চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ

হ্যারি পটার সিরিজে নতুন চমক

এলাকাবাসীর মাঝে হিজড়াদের মিষ্টি বিতরণ

১০

বিশ্বকাপজয়ী মার্টিনেজ নয়, অখ্যাত এক বেলজিয়ানের ওপর ভরসা ম্যানইউর

১১

জশনে জুলুসকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে চলছে দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা

১২

গুজবে কান না দিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সেনাপ্রধানের আহ্বান 

১৩

ডাকসু-জাকসু-রাকসু-চাকসু হতেই হবে : সারজিস

১৪

টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের, দেখে নিন একাদশ

১৫

শ্রাবন্তীর বোল্ড লুক, নিজের মতো খুশি থাকার শিক্ষা

১৬

কেন ক্ষমা চাইব? আমি তো কোনো অন্যায় করিনি : বাকৃবি উপাচার্য

১৭

একটা লোককে ভিপি বানাতে ডাকসু আয়োজন করা হচ্ছে, অভিযোগ মেঘমল্লার বসুর

১৮

নদীতে গোসলে নেমে তলিয়ে গেল দুই শিশু

১৯

হঠাৎ হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া কীসের ইঙ্গিত? যা বলছেন চিকিৎসক

২০
X