জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:৫৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে স্বস্তি

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। ছবি : সংগৃহীত
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। ছবি : সংগৃহীত

সড়ক বন্ধ ও জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে সভা-সমাবেশ করা যাবে না—এমন যুক্তিতে গত বছর ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। দফায় দফায় বৈঠক এবং নানা দেন-দরবারের পরও নিজ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। পরে নানা নাটকীয়তার পর সমাবেশটি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কমলাপুর রেলস্টেশনের কাছে গোলাপবাগ মাঠে। সে সময় সরকারের একগুঁয়েমি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে বিভিন্ন মহলে। এবার আর তেমন কোনো ধরনের বাধা না দিয়ে সরকার বিএনপিকে সেই নয়াপল্টনেই জনসভা করতে দেয়। একই দিন বিএনপির সমমনা ৩৬টি রাজনৈতিক দলও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করে। শুধু তাই নয়, একই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট বরাবর সড়কে শান্তি সমাবেশ করে। পাশাপাশি মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা। তবে এতে কোনো উসকানি বা সংঘাতেরও চেষ্টা লক্ষ করা যায়নি। অনেক বছর পর রাজধানীতে বড় দুই রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান দেখেছে দেশবাসী। বিরোধী দলের দাবি একদফা।

ভোটের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারি দলের দাবি, তারা ক্ষমতায় থেকেই ভোট করবে। যদি বিরোধী দল বাধা দেয়, দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। গত ডিসেম্বরে বিএনপির সমাবেশের দিনটি ছিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ওই দিন মানুষের বিড়ম্বনাও ছিল তুলনামূলক কম। আর এবার সরকারি ও বিরোধী দল মিলে অফিস চলাকালেই সড়ক-মহাসড়কে যে সমাবেশ করেছে, তাতে জনভোগান্তি ছিল চরমে। তবে জনভোগান্তি ছাপিয়ে সবার মুখে মুখে ছিল দুই দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং রাজপথে সহাবস্থানের বিষয়টি। হঠাৎ কেন রাজপথের চিত্র বদলে গেল? সমালোচকদের কারও কারও দৃষ্টিতে বাংলাদেশে বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাই প্রোফাইল প্রতিনিধিদল সফর করছে। তাদের দেখাতেই সরকার ও বিরোধী দলের এমন শান্তিপূর্ণ অবস্থান। কেউ বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সরকারের মনোভাবেরও পরিবর্তন ঘটেছে। রাজপথের বিরোধী দলকে সুযোগ দিতে চায় সরকার। তবে মনোভাব যাই হোক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের যে রাজনৈতিক সংকট তা ক্রমান্বয়েই সমাধানের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করি। না হলে একই সময়ে খুব কাছাকাছি জায়গায় সরকার ও সরকারবিরোধী বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণ হয় সেটা রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শুধু নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে। এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোকেই লক্ষ রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমালোচকদের অনেকেই মনে করেন, দেশে বর্তমানে বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকায় দুই দলের সহাবস্থান ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে এবং তারা কোনো সংঘাতে যায়নি। আমি বিশ্বাস করি, দলগুলো বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশের মানুষের ওপরই নির্ভরশীল হবে। সেজন্যই তারা দেশের মানুষের আস্থা অর্জনের জন্যই রাজপথে সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশিরা নানা কারণেই বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, নির্বাচন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও

ভূ-রাজনৈতিক নানা বিষয় তাদের উদ্দেশ্য থাকে। তাদের সফরকে কেন্দ্র করে দলগুলোর নীতি পরিবর্তন হবে, সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আমার বিশ্বাস, দলগুলো জনগণের কথা চিন্তা করেই তাদের নীতি গ্রহণ ও পরিবর্তন করবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সবার কাছে স্বস্তির বিষয়। আমরা যদি সত্যিকারার্থেই এভাবে নিজেদের আচরণ বদলাতে পারি তবে ভালো। আর সেটি যদি বিদেশিদের দেখানোর জন্য হয়ে থাকে তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সত্যিকারার্থেই এ দেশের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিদেশিরা। কারণ, আমাদের ভোটাধিকার নেই। আমরা অসহায়। সেজন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। কিন্তু বিদেশিরা নিষেধাজ্ঞাসহ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।’

সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পরামর্শ দিয়ে এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচন পদ্ধতির সমাধান করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে আমাদের পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জনগণের আকাঙ্ক্ষা না বুঝা দলের কোনো ভবিষ্যৎ নাই : আমীর খসরু 

জনগণের পাশে দাঁড়ানোই প্রকৃত রাজনীতি : শরীফ উদ্দিন 

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু

‘এশিয়া কাপ জিতবে ভারত’

মৎস্য রপ্তানি বাণিজ্যে ই-ট্রেসিবিলিটি : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত

যে যাকে ভালোবাসে হাশরের ময়দানে তাকে পাবে?

বন্ধ হচ্ছে কুমিল্লার সেই ইউটার্ন

দুর্ভিক্ষেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা, আরও ১২ মৃত্যু

যে কারণে অভিনয় ছেড়ে জ্যোতিষী হলেন টিউলিপ

‘রাগিনী এমএমএস থ্রি’ সিনেমায় তামান্না ভাটিয়া (রিপিট)

১০

রিমান্ড শেষে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির আদালতে 

১১

লাইনচ্যুত যমুনা এক্সপ্রেস রেলে উঠেছে, ঢাকা থেকে দেরিতে ছাড়ছে ট্রেন

১২

সাংবাদিক বিভুরঞ্জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন, মেলেনি আঘাতের চিহ্ন

১৩

মেসিদের সফরে ভারতের বিশাল খরচ, কত টাকা লাগছে আর্জেন্টিনাকে আনতে?

১৪

আইটেম গানে নুসরাতের বাজিমাত

১৫

সৈকতে ভেসে এলো লাল কম্বল মোড়ানো অজ্ঞাত মরদেহ

১৬

বিয়ের আগে প্রবাসীর জীবনে নেমে এলো ভয়াবহ বিপর্যয়

১৭

গাজীপুরে অবৈধ গ্যাস সংযোগে রমরমা বাণিজ্য

১৮

ঢাকায় পৌঁছেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী

১৯

অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুই ট্রেনের হাজারো যাত্রী

২০
X