শেখ হারুন
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০২:২৮ এএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ভবন হয় উঁচু সেবা তলানিতে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা হয় গোহারুয়া ২০ শয্যার হাসপাতাল। খরচ হয় ৬ কোটি টাকা। এরপর ১৮ বছর পার হলেও হাসপাতালটিতে স্বাস্থ্যসেবা চালু হয়নি। ব্যবহার ও যত্নের অভাবে মূল ভবন, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পাঁচটি আবাসিক ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে জঙ্গলে ঢেকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত হাসপাতালটির ভবনগুলো মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ২০ শয্যার হাসপাতালের দরজা-জানালা ভাঙা ও মাকড়সার বাসা। বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও পাখা ও বাতি নেই। পুরো ভবন অন্ধকার। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে ফাটল। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ৫টি আবাসিক ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কক্ষের ভেতরের দরজা-জানালা ভাঙা ও মাকড়সার বাসা। আবাসিক ভবন এলাকা জঙ্গলে ভরে গেছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় পরিণত হয়েছে গরু-ছাগলের বিচরণ ক্ষেত্রে।

শুধু কুমিল্লার এই হাসপাতাল নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে আছে এ ধরনের অসংখ্য হাসপাতাল— যেখানে ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হলেও চালু করা হয়নি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে ভবন। বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কিংবা চুরি হয়ে যাচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি। শতকোটি টাকার সরকারি সম্পদের অপচয় হলেও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট গোহারুয়া হাসপাতাল সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় বহিরাগতরা এখানে মাদক সেবন করে এবং টিকটক ভিডিও তৈরি করে। এলাকার মধ্যে এটি একটি মাদকের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটিতে আড্ডাখানা বন্ধ করে চিকিৎসাসেবা চালু করার দাবি জানান তারা।

নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক কর্মকর্তা ডাক্তার দেবদাস দেব কালবেলাকে বলেন, ‘হাসপাতালটি পুরোদমে চালু করার জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে হাসপাতালটির সংস্কার ও মেরামত করে পূর্ণাঙ্গ সেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

অনুসন্ধানে সারা দেশে এমন ২৭টিরও বেশি হাসপাতালের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হাসপাতালে অবকাঠামোসহ সব রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হলেও দীর্ঘ সময়েও চালু হচ্ছে না সেবা কার্যক্রম। নির্মাণের পর ৩ থেকে ২০ বছর কাটলেও অব্যবহৃত রয়েছে এসব হাসপাতাল ভবন ও যন্ত্রপাতি।

জানা গেছে, জনবলের অভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে দেশের ২১টি ট্রমা সেন্টার। এসব হাসপাতাল নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। অর্ধশতাধিক হাসপাতালে চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণকাজ চলছে ঢিমেতালে। বিশাল ব্যয়ের দৃষ্টিনন্দন হাসপাতাল ভবনগুলো পড়ে থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে হাসপাতাল। কিন্তু সেগুলোর বেশিরভাগই অপরিকল্পিত। এ ক্ষেত্রে মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেয়ে ভবন নির্মাণেই বেশি মনোযোগ থাকে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তাদের। নির্মাণে আগ্রহের কারণে কেনাকাটা ও ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার বিপরীতে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে সেবা ছাড়াই হাসপাতাল ভবনগুলো এভাবে পড়ে থাকে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল কালবেলাকে বলেন, ‘হাসপাতাল চালু করতে গেলে অবকাঠামো হবে; যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল থাকবে। এসব মিলিয়ে একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল নির্মিত হয়। কিন্তু নির্মাণের ক্ষেত্রে সেগুলো মানা হয়নি। এ কারণে কাজ শেষ হওয়ার পরও পরে আছে অনেক হাসপাতাল। সঠিক পরিকল্পনা অনুযয়ী এগুলো করা হয়নি। এখানে খুব মহৎ উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয়নি, এগুলো বরং অসৎ উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা এসব হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন তাদের আসল উদ্দেশ্যই ছিল ভবন বানানো, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন। এটা একটা অপচয় এবং পরিকল্পিত দুর্নীতি। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। আর জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করে হাসপাতালগুলো চালু করা দরকার। যাতে পুরোটাই ক্ষতি না হয়।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন কালবেলাকে বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়েছি মাত্র দুই মাস। অবশ্যই এগুলো দেখব। আমি কিছুটা জানিও। তবে কেন চালু হয়নি, সেটা বিষদভাবে না জেনে এখনই কিছু বলতে পারছি না। তবে যেগুলো নির্মাণ হওয়ার পরও চালু হয়নি, সেগুলো দ্রুত চালু করার ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

১৮-২০ বছরেও চালু হয়নি বগুড়ার তিন হাসপাতাল: ১৮ থেকে ২০ বছর আগে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌরসভার রথবাড়ি, শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট ও নন্দীগ্রামে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যার তিনটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। তবে দুই দশক কেটে গেলেও জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আজও চালু হয়নি এসব হাসপাতাল। অবকাঠামোসহ সব সুবিধা থাকলেও নেই শুধু চিকিৎসাসেবা। পূর্ণাঙ্গভাবে হাসপাতাল চালু না হওয়ায় দেড় যুগ ধরে সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, নষ্ট ও চুরি হচ্ছে সরকারি সম্পদ।

এক দশক ধরে পড়ে আছে ফেনীর মঙ্গলকান্দি হাসপাতাল: ফেনীর সোনাগাজী ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৮৮৭ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। কিন্তু এক দশক পার হলেও পুরোপুরি চালু হয়নি হাসপাতালটি।

শার্শায় কেটে গেছে ১০ বছর: ১০ বছর আগে যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। তবে এক দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে হাসপাতাল চত্বর। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটি পড়ে থাকায় মাদকসেবীদের আখড়া বসে প্রতিনিয়ত।

৪ বছর ধরে চালুর অপেক্ষায় রংপুর বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল: কাজ শেষে ৩১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালটি ২০২০ সালের মার্চে জেলা সিভিল সার্জনকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুরের বিশেষায়িত ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালে এখনো সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি।

রংপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী কালবেলাকে বলেন, ‘হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু এখানে জনবল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিছুই নেই। প্রয়োজনীয় জনবল এবং যন্ত্রপাতির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

দিনাজপুরের খানসামা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র: ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দিনাজপুরের খানসামা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি সেবা কার্যক্রম। ভবনের অধিকাংশ স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল।

নিজেই রুগণ লালমনিরহাটের দহগ্রাম হাসপাতাল: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামবাসীর কোনো উপকারে আসছে না দহগ্রাম আঙ্গরপোতা ২০ শয্যার হাসপাতালটি। আধুনিক অবকাঠামো, যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই কার্যক্রম। চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ওয়ার্ডবয় বেতন নিলেও কর্মস্থলে যান কালেভদ্রে। অস্ত্রোপচার কক্ষে ধুলার আস্তরণ, দরজায় তালা, সেখানকার যন্ত্রপাতি ‘লুটপাট কার্যক্রম’ আগেই সারা। একটি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার না করতে করতে অচল। আরেকটিতে রোগীর বদলে যাত্রী পরিবহনে খাটছে ভাড়ায়। বছরে বিনামূল্যের ২১ লাখ টাকার ওষুধ যাচ্ছে ‘ভূতের পেটে’।

পড়ে আছে নীলফামারী হাসপাতালের ৬ তলা ভবন: ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নীলফামারী ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় সম্প্রসারণের জন্য ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। তবে কাজ শেষ হলেও ওই ভবনে কোনো চিকিৎসা কার্যক্রম নেই।

একই চিত্র জেলায় জেলায়: একইভাবে চার বছরেও চালু হয়নি লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল, দেবিদ্বারের ১০০ শয্যার হাসপাতাল এবং বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার ১০ শয্যা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। হাসপাতালটি চারটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। চালু না হওয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওই এলাকার মানুষ।

ভবন নির্মাণের তিন বছরেও চালু হয়নি দিনাজপুরের খানসামা ২০ শয্যা হাসপাতাল, নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বান্দারবানের লামা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। এ তিনটি হাসপাতাল নির্মাণে খরচ হয়েছে মোট ৪৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ভবনসহ সব ধরনের অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই শুধু চিকিৎসক। সেবা কার্যক্রম না থাকায় অবকাঠামোসহ নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি।

১২২ বছর আগের পুরোনো রাজশাহী সদর হাসপাতালটি ৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে সংস্কার করা হয়। কিন্তু এখনো সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। এদিকে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালটি উদ্বোধনের এক বছরের অধিক সময়েও চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় ভবনের ৬৭টি এসিসহ বেশকিছু সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়।

মহাসমারোহে আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয় মেহেরপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের নবনির্মিত ৮ তলা ভবন। ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সাড়ে চার মাস পরও চালু করা যায়নি স্বাস্থ্যসেবা। ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল চত্বরে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫০ শয্যার ৯ তলা ভবনের হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয় প্রায় তিন মাস আগে। তবে এখনো শুরু হয়নি চিকিৎসাসেবা।

২০২৩ সালের জুন মাসে নরসিংদী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাজ শেষ হলেও এখনো সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। সাড়ে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটির নতুন ৮ তলা ভবন এখনো বুঝে নেয়নি হাসপাতল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নরসিংদী নার্সিং কলেজও চালু হয়নি। নওগাঁয় ২৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ হলেও জনবলের অভাবে এখনো ১০০ শয্যার লজিস্টিক দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা।

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে প্রায় বছরখানেক আগে ভবন নির্মাণ শেষ হলেও কার্যক্রম চালু হয়নি। ৯ বছরেও পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হয়নি ময়মনসিংহের গৌরীপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে।

নির্ধারিত মেয়াদের ৪ বছর পরে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো হস্তান্তর হয়নি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের নতুন ভবন। ফলে এখানে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। নতুন করে ১৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও দীর্ঘ কয়েক বছর অপেক্ষার পর গত বছর উদ্বোধন করা হয় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ শয্যাবিশিষ্ট ৭ তলা ভবনটি। নতুন করে ১৫০ শয্যা যুক্ত হওয়ায় হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। নামে ২৫০ শয্যার হলেও ৫০ শয্যার সেবা পান রোগীরা।

পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে ট্রমা সেন্টারগুলো: সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দিতে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ট্রমা সেন্টার। এগুলো নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল দুর্ঘটনা ঘটলে আহতদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকলেও ট্রমা সেন্টারগুলো কাজে লাগছে না।

জানা গেছে, প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের পাশে ২১টি ট্রমা সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনার আটঘরিয়া, বগুড়ার শেরপুর, সিরাজগঞ্জ সদর ও উল্লাপাড়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, গোপালগঞ্জ সদর, মাদারীপুরের শিবচর, মানিকগঞ্জের শিবালয়, শরীয়তপুরের জাজিরা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা (মধুখালী), মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, সাভারের ধামরাই, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, হাটহাজারী ও রাউজান, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ফেনীর মহিপাল, ময়মনসিংহের ভালুকা, সুনামগঞ্জের ছাতক এবং হবিগঞ্জের বাহুবলে ট্রমা সেন্টারগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। তবে উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জনবল নিয়োগ হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ কারণে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও দুই-তিনটি বাদে বাকিগুলো এখনো চালু হয়নি। যেগুলো চালু হয়েছে সেগুলোতেও নামকাওয়াস্তে শুধু বহির্বিভাগ দেওয়া হচ্ছে। বলা যায়, পঙ্গু ও দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে বছরের পর বছর নিজেই যেন পঙ্গু হয়ে পড়ে রয়েছে ট্রমা সেন্টারগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেবা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ট্রমা সেন্টারগুলোর বেশিরভাগ জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে অবকাঠামো। নষ্ট ও চুরি হচ্ছে দামি যন্ত্রপাতি। অব্যবহৃত ভবনগুলোতে বসছে মাদকসেবীদের আখড়া।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে নির্মিত লোহাগাড়া ট্রমা সেন্টারটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি ট্রমা সেন্টারটি। কোনো প্রকার সেবা কার্যক্রম ছাড়াই পড়ে আছে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী ট্রমা সেন্টারটিও তিন বছর আগে উদ্বোধন করা হলেও এখানে শুরু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম।

লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হানিফ কালবেলাকে বলেন, ‘ট্রমা সেন্টার উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার জনবল নিয়োগ হয়নি। জনবল নিয়োগের জন্য সংশ্নিষ্ট দপ্তরে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারটি চালু থাকলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত লোকজন তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসা পেত। এখন তাদের চট্টগ্রাম শহরে দৌড়াতে হয়।’

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা এলাকায় প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চারতলা ভবনের ট্রমা সেন্টারের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। তবে জনবল নিয়োগ না হওয়ায় এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি সেবা কার্যক্রম। লোকবল না থাকায় চুরি হয়ে গেছে বেশকিছু যন্ত্রপাতি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় জঙ্গলে পরিণত হওয়া ট্রমা সেন্টারটিতে বসত মাদকসেবীদের আখড়া। তবে সম্প্রতি এখানে আউটডোর সেবা চালুর কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মো. জিল্লুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘ট্রমা সেন্টারটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। লোকবল না থাকায় মাঝখানে ট্রমা সেন্টারের এসি এবং এক্সরে মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকায় ট্রমা সেন্টারটি জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল, মাদকসেবীদের আখড়া বসত। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি জঙ্গল পরিষ্কার করে আউটডোর সেবা চালু করা হয়েছে। কিন্তু জনবল এবং যন্ত্রপাতির অভাবে পুরোপুরি সেবা চালু করা যায়নি।’

প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের সিরাজগঞ্জের শেখ হাসিনা ট্রমা সেন্টারটিও কোনো কাজে আসছে না। তিন বছর আগে নির্মিত ট্রমা সেন্টারটিতে চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি না থাকায় এখনো চালু করা হয়নি সেবা কার্যক্রম। চুরি হচ্ছে ট্রান্সফরমাসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অব্যবহৃত থাকায় বসছে মাদকসেবীদের আখড়া।

প্রায় একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্য ট্রমা সেন্টারগুলো। কোনোটি ৩ বছর তো কোনোটি ১১ বছর, কোনোটি আবার ১৮ বছরেও চালু হয়নি সেবা কার্যক্রম। অযত্ন আর অবহেলায় অলস পড়ে থাকছে ট্রমা সেন্টারের ভবনগুলো। বছরের পর বছর অব্যবহৃত থাকায় সেবা কার্যক্রম শুরুর আগেই নষ্ট হতে বসেছে।

পূর্ণাঙ্গ সেবা দিতে পারছে না অর্ধশতাধিক হাসপাতাল: অন্যদিকে চালু থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং যন্ত্রপাতি না থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে দেশের অর্ধশতাধিক হাসপাতালে। এসব হাসপাতালে ভবনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকলেও চিকিৎসক রয়েছে অর্ধেকেরও কম। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যে অন্যতম হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল। নামে আড়াইশ শয্যার হাসপাতাল হলেও বাস্তবে চিকিৎসা নেই ১০ শয্যারও। ৫৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪ জন। চিকিৎসক সংকটের কারণে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা। জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও।

চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা। ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ২১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ জন। এদিকে টেকনিশিয়ান থাকলেও ১৩ বছর ধরে অচল অবস্থায় পড়ে আছে কোটি টাকা মূল্যের এক্সরে মেশিন।

চিকিৎসকসহ অর্ধেক জনবলে চলছে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কোটালিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ গোপালগঞ্জের বেশিরভাগ হাসপাতাল।

মাত্র চারজন চিকিৎসক ও সামান্য কিছু কর্মচারী দিয়ে চলছে রাজীবপুর উপজেলার ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা। অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে ৪০ বছর আগে কেনা একমাত্র এক্সরে মেশিনটিও। দুই যুগের অধিক সময় ধরে টেকনিশিয়ানের অভাবে কুলাউড়ায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনটি এক্সরে মেশিন পরিত্যক্ত। এক্সরে কক্ষটিও এখন গুদাম রুমে পরিণত হয়েছে।

২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ কুড়িগ্রাম জেলার সব হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের কারনে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। জেলায় বর্তমানে চিকিৎসকের চাহিদা রয়েছে ২৪২ জনের। বর্তমানে নিয়োজিত আছেন মাত্র ৯৮ জন।

বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ২৮১ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৬৮৮ জন। নির্ধারিত পদ অনুযায়ী চিকিৎসক না থাকায় সেবার মান ঠিক নেই। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। ২৮টি পদের চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন। ভোলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ৬১ জন ডাক্তারের মধ্যে নেই ৩৮ জন।

নির্মাণকাজেই সময় পার, ভোগান্তি সাধারণ মানুষের: দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলায় নির্মাণ করা হচ্ছে হাসপাতাল। কিন্তু সবক্ষেত্রেই নির্মাণকাজ শেষ করতেই লেগে যায় অতিরিক্ত সময়। ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও শেষ হচ্ছে না ভবন নির্মাণ। এতে একদিকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ, অন্যদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়ছে নির্মাণ খরচ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ বছর আগে চালু করার কথা থাকলেও এখনো চালু হয়নি ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ের ২৫০ শয্যার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল।

একইভাবে তিন বছর আগে চালুর কথা থাকলেও এখনো নির্মাণকাজই শেষ হয়নি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নির্মাণকাজ। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০২১ সালে শেষ করার কথা থাকলেও ৫ বছরেও শেষ হয়নি। এতে প্রতিদিন বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। বিপুলসংখ্যক রোগীর ভিড়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কালবেলার সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা।)

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নারীদের শারীরিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ববি ভিসিকে ছাত্রদলের স্মারকলিপি 

২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি / মনোহরগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে ১০ দোকান পুড়ে ছাই

দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মকারীরা ‘দুর্বৃত্ত’ : শরীফ উদ্দিন জুয়েল

অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ২৮ ছাত্র সংগঠনের মতবিনিময় / দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখায় প্রত্যয়

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলে কোন শব্দ থাকতে পারে না : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা 

ঢাকায় ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি সম্মেলন’ করার প্রস্তাব ধর্মীয় নেতাদের

মাকে না জানিয়েই আন্দোলনে, গুলিতে খুলি উড়ে যায় রিজভীর

‘স্বৈরাচার পতন দিবসের শপথ, কর্তৃত্ববাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে’

কলকাতায় শিল্পী রেজওয়ানার অনুষ্ঠান বাতিল, বিতর্ক

স্বর্ণের বিনিময়ে যৌনতা : অবৈধ খনির অন্ধকার জীবন

১০

কারো দয়ার দানে আমাদের বিজয় আসেনি : শেখ বাবলু

১১

কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি, থানায় অভিযোগ

১২

ভারত-পাকিস্তানের আইসিসি ইভেন্ট হচ্ছে হাইব্রিড মডেলেই!

১৩

অসীম উকিল ও অপু উকিলের বিরুদ্ধে মামলা

১৪

চবিতে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

১৫

কীর্তনখোলায় স্পিডবোট-ট্রলার সংঘর্ষে যাত্রী নিহত, নিখোঁজ ৪

১৬

আরও এক মামলায় গ্রেপ্তার শাহজাহান ওমর

১৭

শেখ হাসিনার ইন্ধনে মিথ্যাচার-প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে ভারত: নিরব

১৮

চিন্ময় ব্রহ্মচারীর জন্য লিগ্যাল টিম গঠনের আহ্বান এইচআরসিবিএমের

১৯

পেনাল্টি নষ্ট করা ‘হতাশ’ এমবাপ্পেতেই ভরসা আনচেলত্তির

২০
X