যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া টেক গবেষণা সংস্থার রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক গ্রেগ লিউ এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে পলিথিন থেকে বের করে আনা যাবে সাবান তৈরির উপাদান। তার এ গবেষণার বৃত্তান্ত সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে ন্যাচার জার্নালে।
পলিথিন ও সাবানের বাহ্যিক মিল না থাকলেও আণবিক বন্ধনে এ দুটির মিল অনেক। পলি-ইথিলিনের রাসায়নিক কাঠামো অনেকটাই সাবানের ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো—দুটোই কার্বন অণুর বড় একটা চেইন। তবে পার্থক্য হলো, ফ্যাটি অ্যাসিডের এ চেইনের শেষপ্রান্তে থাকে একগুচ্ছ বাড়তি পরমাণু। গবেষক গ্রেগ লিউ জানালেন, কোনোভাবে এ বড় চেইনকে অনেক ছোট চেইনে এমনভাবে ভাগ করতে হবে, যাতে প্রক্রিয়াটা সাশ্রয়ী ও উপকারী হয়। আবার এত ছোটও করা যাবে না যাতে করে পলিমার থেকে গ্যাসীয় বস্তুকণা তৈরি হয়ে যায়।
গ্রেগ লিউ তার গবেষণার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন চিমনির ধোঁয়া দেখে। কাঠের ওই ধোঁয়া মূলত পলিভার থেকে ভেঙে তৈরি হওয়া সেলুলোজ। আর এ প্রক্রিয়ায় পলিমারকে ছোট ছোট চেইনে আগে ভাঙতে হয়। তারপর সেটা গ্যাস হয়ে যায়।
গ্রেগ বললেন, ‘এখন আমরা যদি একইভাবে সিনথেটিক পলি-ইথিলিনকে ভাঙতে থাকি এবং গ্যাসে পরিণত হওয়ার আগেই প্রক্রিয়াটা থামাতে পারি, তখন আমরা ছোট চেইনবিশিষ্ট পলি-ইথিলিন মলিকিউল পাব।’
এমন ভাবনার পরই নিজের আরও দুই পিএইচডি শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রেগ তৈরি করেন ওভেনের মতো একটি রিয়েকটর। যাতে পলিইথিলিনকে টেম্পারেচার গ্র্যাডিয়েন্ট থার্মোলাইসিস প্রক্রিয়ায় উত্তপ্ত করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় ওভেনের নিচের দিকে থাকবে একটি চেম্বার। ওটা এমন তাপ তৈরি করবে যাতে পলিমারটা ভেঙে যায়। আবার ওপরের অংশে থাকবে শীতল চেম্বার। সেটা এমনভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে পলিমার একটি নির্দিষ্ট সীমার পর আর ভাঙবে না। এ প্রক্রিয়ায় পলিমারকে উত্তপ্ত করে গ্রেগ লিউ ও তার দল পেয়েছেন শর্ট-চেইন পলিইথিলিন। যা কি না অনেকটা মোমজাতীয় একটি পদার্থ। এ উপাদানটিকে স্যাপোনিফিকেশন নামের আরেকটি প্রক্রিয়ার ভেতর নিয়ে গেলেই তৈরি হবে ফ্যাটি অ্যাসিড।
গ্রেগ লিউর মতে, এখানে বড় বিষয়টা হলো এ প্রক্রিয়ায় নামিদামি কোনো প্রভাবক বা জটিল কোনো প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়নি। যার ফলে এ গবেষণা প্লাস্টিক আপসাইক্লিং নিয়ে চলমান গবেষণাকে করবে আরও বাজারবান্ধব।
মন্তব্য করুন