কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ এএম
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যয়

ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যয়

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের গৌরবোজ্জ্বল কাহিনি তুলে ধরেছেন। সেইসঙ্গে তিনি টেকসই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। আর গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় বিশ্বকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ড. ইউনূস ভাষণে ফিলিস্তিনে গণহত্যা এবং বাংলাদেশের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও সামনে এনেছেন। ফলে দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার এই অবস্থান প্রশংসিত হচ্ছে।

শুক্রবার রাতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণের পর অনেকেই তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ড. ইউনূস বলেছেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুপ্রাণিত তরুণ প্রজন্ম তাদের পূর্বসূরিদের অনুসরণ করে বাংলাদেশ থেকে স্বৈরতান্ত্রিক ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থাকে বিদায় জানিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোর আমূল সংস্কারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। টেকসই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় বিশ্বকে পাশে চায় বাংলাদেশ।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের বিষয় উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেছেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছেন। গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ায়। এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত, যা বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে। এই গণআন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনগণ একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, যার জন্য নতুন প্রজন্ম জীবন উৎসর্গ করেছিল। বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল ছাত্র-জনতা। অবৈধ রাষ্ট্রক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রবলভাবে সোচ্চার হয়েছিল দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিঃশঙ্কচিত্তে উৎসর্গ করেছিল তাদের জীবন। শত শত মানুষ চিরতরে হারিয়েছে তাদের দৃষ্টিশক্তি। স্বৈরাচারের গুলিতে নিহত হয়েছে দেড় সহস্রাধিক মানুষ। শেখ হাসিনার সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মম দলীয়করণের আবর্তে বন্দি করে রাখা হয়, জনগণের অর্থসম্পদকে নিদারুণভাবে লুটপাট করা হয়, একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সব ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যায়ভাবে নিজেদের হাতে কুক্ষিগত করে দেশের সম্পদ অবাধে পাচার করে। এককথায়, প্রতিটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো আমরাও মনে করি, অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে সবার প্রত্যাশা। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের সব স্তরের মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৯ হাজার রান করা মারকুটে ব্যাটার এবার বিপিএলে

হাদিকে হত্যাচেষ্টা / মির্জা আব্বাসকে নিয়ে ‘মিথ্যা সংবাদ’ প্রচারের অভিযোগে মামলা

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ালেন লায়ন খোরশেদ আলম

এআইইউবির ২৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সৈকতে বন্দুক হামলা, বহু হতাহতের আশঙ্কা

শিক্ষাবিদ কাজী আজহার আলীর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার

হাদিকে গুলির ঘটনায় যেভাবে আটক হলেন হান্নান

হাসিনা শাসনামলে বুদ্ধিজীবীদের দাবিয়ে রাখা হয়েছিল : রাশেদ প্রধান

থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে কারফিউ জারি

খাঁচা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসে সিংহী, তদন্তে যা জানা গেল

১০

চা বিক্রেতাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা, গ্রেপ্তার ২

১১

আইএসইউতে শিক্ষার্থীদের জন্য এসআইসিআইপি–বিজিএমইএ’র অন ক্যাম্পাস নিয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত

১২

রহস্যজনকভাবে মারা গেলেন ‘দ্য মাস্ক’ খ্যাত অভিনেতা

১৩

হাদির ছবি আঁকা হেলমেট পরে বিশ্বরেকর্ড গড়ায় অংশ নেবেন আশিক চৌধুরী

১৪

বাসে আগুন

১৫

পোস্টাল ভোট : সরকারি চাকরিজীবীদের নিবন্ধনের সুযোগ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত

১৬

বড় চমক রেখে বাংলাদেশের দল ঘোষণা

১৭

ঘন কুয়াশায় একের পর এক দুর্ঘটনা, ব্যাপক যানজট

১৮

সুদানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ

১৯

দিনাজপুরে সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার

২০
X