এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রায় সবার পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। অভিভাবকদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে উচ্ছ্বাস একটু বেশিই লক্ষ করা যায়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা চাপ ও হাইপ তৈরি করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যদিও বাংলাদেশের ভর্তি পরীক্ষা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জিং এবং চাপপূর্ণ হতে পারে। ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র করে কোচিং সেন্টার, সমাজ ও পরিবার শিক্ষার্থীদের ওপর এমন অদৃশ্য চাপ তৈরি করে যেন মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা বাঁচা-মরার লড়াই। অথচ একটি ভর্তি পরীক্ষা জীবনের সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারণা পরিলক্ষিত হয়। প্রায় প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় আমরা লক্ষ করি অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল অর্জন করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। শুধু কি তাই! অনেক শিক্ষার্থী চান্স না পাওয়ায় এবং প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় আত্মহত্যার মতো কঠিন ও বিপদগামী পথ বেছে নেয়। এ অবস্থা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে যথেষ্ট। সমাজ ও পরিবারের উচ্চপ্রত্যাশা পূরণ করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের ব্যর্থ ভাবতে শুরু করে। একটি পরীক্ষায় সফলতা মানে জীবন সফল ও ধন্য আরেকটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য মানে জীবন শেষ! এমন ধারণা শিক্ষার্থীদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়। এটি একজন শিক্ষার্থীকে নেতিবাচকভাবে ভাবতে শেখায়। তাকে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে পড়তে প্ররোচিত করে। একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতার চেয়ে প্রত্যাশা বেশি করে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে চাপ প্রয়োগ বা অযথা হাইপ থামানো না গেলে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
হাইপ কমানোর জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনয়ন করতে হবে। কোচিং সেন্টারনির্ভরতা কমানোর জন্য পাঠ্যসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সমর্থন ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে তারা মানসিক চাপ মোকাবিলায় সক্ষম হতে পারে। অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে সন্তান কী চায়? সেইসঙ্গে সন্তানকে বোঝাতে হবে জীবনের সফলতা কখনো একটি পরীক্ষায় আটকে থাকে না। জীবন বহমান নদীর মতো। টোপাপানায় নদীর প্রবাহ যেমন থমকে যায় না; ঠিক তেমনি একটি পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করতে না পারলেও জীবন থমকে যাবে না। তবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফলের লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রস্তুতি গ্রহণ অবশ্যই জরুরি। একটি পরীক্ষা কখনোই সবকিছু নির্ধারণ করে না। অযথা হাইপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক ও সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে বিশেষ করে অভিভাবকদের ইতিবাচক সমর্থন অত্যন্ত জরুরি।
খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
মন্তব্য করুন