আইএমএফের ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ছাড়ের জন্য ডলারের দাম-নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অনেক দিন ধরে তাদের এ শর্ত মানতে নারাজ ছিলেন। তাদের মত ছিল, এখন ডলারের দাম নির্ধারণ পুরোপুরি বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে অ্যাগ্রিগ্রেটর ও ম্যানিপুলেটরদের তাণ্ডবে হুহু করে ডলারের দাম বেড়ে ১৭০-১৮০ টাকায় পৌঁছে যেতে পারে। অথচ, এখন বাংলাদেশে ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। গভর্নর বলছেন, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে বিপদে পড়েছে, পাকিস্তানে এক ডলারের দাম ২৮০ রুপি এবং শ্রীলঙ্কায় ৪০০ রুপি। আমিও আইএমএফের এ শর্তের বিরোধী। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অ্যাগ্রিগ্রেটর ও ম্যানিপুলেটরদের প্রভাবকে আইএমএফ যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না। উপরন্তু, হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের চাহিদা-কাঠামোকে আইএমএফ যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে না বলেই বাজারীকরণকে সমস্যার সহজ সমাধান মনে করছে। গত ১৫ মে পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, অবশেষে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়েছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, জুন মাসে আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়ে যাবে বাংলাদেশ।
২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন। তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে ২৩.৪১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকারের উৎখাতের পর গত ৯ মাস ধরে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় বিদেশে পুঁজি পাচারে ধস নামায় বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ অভূতপূর্বভাবে বেড়ে গেছে, যার ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৯-৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বাড়তি রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন থামানো গেছে, ডলারের দামকে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা গেছে এবং ব্যালান্স অব পেমেন্টসের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি প্রায় দূর করা সম্ভব হয়েছে। অথচ ২০২৪ সালের জুনের পর বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে কোনো ঋণের অর্থ পায়নি। ঋণের অর্থ না পাওয়া সত্ত্বেও যদি ওপরে উল্লিখিত সাফল্যগুলো অর্জিত হয়ে থাকে, তাহলে আইএমএফের ঋণের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, সে প্রশ্নটিই এখন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসউজ্জামান চৌধুরী এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন, আইএমএফ ডলারের দামের বাজারীকরণ নিয়ে বেশি চাপাচাপি করলে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে বাকি ঋণের কিস্তি না নেওয়ার চিন্তা করবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়।
আমিও এ মতের সঙ্গে ঐকমত্য ঘোষণা করছি। আইএমএফের ঋণের জন্য যখন পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার সময়ে সরকার হন্যে হয়ে উঠেছিল, তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে যাচ্ছিল। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে সরকারের হিসাব অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে (আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মোতাবেক ওই সময়ের রিজার্ভ ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলার)। কিন্তু সরকারের মারাত্মক ভুল নীতির শিকার হয়ে পরবর্তী দুই বছরে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে চলে আসায় সরকার বাধ্য হয়েছিল আইএমএফের কাছে ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে। এরপরও রিজার্ভের পতন থামানো যায়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট যখন স্বৈরশাসকের পতন হয়, তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারে এবং নিট রিজার্ভ ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। ওই ধারা বজায় থাকলে ২০২৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো ‘ইকোনমিক মেল্টডাউনে’ পতিত হতো নিঃসন্দেহে। ওই সরকারের পতনের পর প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অভূতপূর্ব জোয়ার দেশকে ওই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে। হুন্ডি প্রক্রিয়া দুর্বল হওয়ায় এখন হুন্ডি ডলারের দাম ১২৩-১২৪ টাকার বেশি হচ্ছে না, যার ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা শক্তিশালী রয়েছে।
অবশ্য দেশের বেশিরভাগ প্রবাসী স্বৈরাচারী সরকারের পতনের আগে হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ করায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হুন্ডি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু দেশপ্রেমের ধোয়া তুলে তাদের এ ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে সহজে দমন করা যাবে না। ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সরকার আগে ২.৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করত, সম্প্রতি এ প্রণোদনাকে ৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতদ্সত্ত্বেও প্রবাসীদের ফরমাল চ্যানেলগুলো ব্যবহারে যথেষ্ট উৎসাহিত করা যাচ্ছিল না। কারণ, হুন্ডি প্রক্রিয়ায় পুঁজি পাচারের চাহিদা শক্তিশালী থাকলে হুন্ডিওয়ালারাও ডলার ক্রয়ের সময় ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে হুন্ডির আকর্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করত। আমার দৃঢ় অভিমত হলো, হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামোতে অবস্থানকারী পুঁজি পাচারকারীদের প্রতি সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু পতিত স্বৈরশাসক হাসিনার সরকারের কর্তাব্যক্তিরা, হাসিনার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজন এবং ওই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলারা প্রায় সবাই পুঁজি পাচারে সক্রিয় থাকায় পুঁজি পাচার দমনে সরকারের কোনো কঠোর প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়নি।
বহুদিন ধরেই আমি বলে চলেছিলাম, হুন্ডি ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে দমন না করলে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহকে বাড়ানো কঠিন থেকে যাবে। কারণ, হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছিল। এর মানে দেশের পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স-প্রেরণেচ্ছু প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাগুলো (প্রধানত ডলার) বিদেশের হুন্ডিওয়ালাদের এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এর প্রধান কারণ, ডলারপ্রতি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক-নিয়ন্ত্রিত বাজারের ডলারের দামের চেয়ে ৫-৭ টাকা বেশি দাম পাচ্ছিলেন। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা হুন্ডিওয়ালাদের এ দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে ওই বর্ধিত দামে প্রেরিত রেমিট্যান্সের সমপরিমাণ টাকা অতিদ্রুত পেয়ে যাচ্ছিলেন কোনো ঝুট-ঝামেলা ছাড়া। হুন্ডি পদ্ধতিতে কোনো কাগজপত্র স্বাক্ষর করার প্রয়োজন হয় না। হুন্ডিওয়ালাদের স্থানীয় এজেন্ট প্রায়ই রেমিট্যান্স-প্রেরক এবং রেমিট্যান্স-গ্রহীতাদের পূর্বপরিচিত থাকার কারণে এসব লেনদেনে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কাও তেমন থাকে না। আরও যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের কেউ জানতেও পারে না যে পরিবারে রেমিট্যান্স এসেছে। টেলিফোনে খবর পেয়ে যথাস্থানে গিয়ে বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পেয়েই রেমিট্যান্স-গ্রহীতারা যথাসম্ভব দ্রুত তা নিকটবর্তী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে আমানত হিসেবে জমা করে দেন, তাই আগের দিনের মতো চোর-ডাকাত-মাস্তানদের আক্রমণের শিকার হতে হয় না পরিবারকে। যেহেতু বিশ্বস্ততাই হুন্ডি ব্যবসার সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই সাধারণত রেমিট্যান্সের টাকা মার যায় না, লেনদেনের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয় সযতনে। ওপরে প্রবাসীদের জন্য হুন্ডি পদ্ধতির সাধারণ সুবিধাগুলোর যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদত্ত হলো, তার সঙ্গে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স-প্রেরণ পাল্লা দেওয়া সুকঠিন।
হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত অর্থ প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদের ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে ব্যাপক অবদান রাখত। এক কোটি টাকার বেশি আমানত রক্ষাকারী ব্যাংক-অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দেশে এখন ১ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং এসব অ্যাকাউন্টের উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রামীণ এলাকার ব্যাংক-শাখাগুলোতে। বিবেচনা করুন, সারা দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রবাসীদের পরিবারের পাকা বাড়ি নির্মাণের যে হিড়িক চলেছে, তার খরচের কত শতাংশ ফরমাল চ্যানেলে দেশে এসেছে? স্বীকার করতেই হবে, ফরমাল চ্যানেল বা হুন্ডি পদ্ধতি—যেভাবেই রেমিট্যান্সের অর্থ অর্থনীতিতে প্রবাহিত হোক, তার বহুবিধ সুফল পাচ্ছে অর্থনীতি। হুন্ডি পদ্ধতিতে প্রেরিত রেমিট্যান্সের বৈদেশিক মুদ্রা (প্রধানত ডলার) যদিও দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য পুঁজিপাচারকারীরা অপব্যবহার করে চলেছে, তবুও এ ব্যাপারটা অর্থনীতির জন্য পুরোপুরি নেতিবাচক নয়। একঅর্থে এ বিপুল রেমিট্যান্সের অর্থ বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের একটা তাৎপর্যপূর্ণ বিকল্পের ভূমিকা পালন করছে। চীন ও ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ যে ভূমিকা পালন করেছে তার অনুরূপ ভূমিকা বাংলাদেশে পালন করছে ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্স প্রবাহ। বাংলাদেশের অনেক এলাকার গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতিতে যে বিপুল গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে, তার পেছনে প্রধানত অবদান রেখে চলেছে এলাকার প্রবাসী-বাংলাদেশিদের সংখ্যাধিক্য। আমার মতে, হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া রেমিট্যান্স ও অন্যান্য ব্যবস্থায় দেশে নিয়ে আসা বিদেশে উপার্জিত আয়-উপার্জন ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাচ্ছিল প্রতি বছর।
স্বৈরশাসক হাসিনার সাড়ে পনের বছরের শাসনামলে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল বলে মতপ্রকাশ করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। পুঁজি পাচারের বহুলপ্রচলিত পদ্ধতি আমদানির ওভারইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডারইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার পাশাপাশি তখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বহুল-ব্যবহৃত হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণের অভ্যাস বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারকারীদের একটি সহজ বিকল্প উপহার দিয়েছিল। বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, তখন আগের তিনটি প্রধান পদ্ধতিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল হুন্ডি প্রক্রিয়ায় পুঁজি পাচার। যে ‘হুন্ডি ডলার’ বিদেশেই রয়ে যাচ্ছে, সেগুলোর চাহিদা জোগাচ্ছিল প্রধানত দেশের দুর্নীতিবাজরা ও কালো টাকার মালিকরা এবং ব্যাংকের ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার ‘কালচার’ সৃষ্টিকারী ব্যবসায়ীরা। মার্জিনখোর রাজনীতিক বলুন, দুর্নীতিবাজ সিভিল আমলা-প্রকৌশলী বলুন, রাঘববোয়াল ঋণখেলাপি বলুন, ডাকসাইটে ব্যবসায়ী-শিল্পপতি বলুন—হুন্ডি ডলারের সহায়তায় গড়ে উঠছে প্রবাসীদের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপাতি, কানাডার টরন্টোর বেগমপাড়া, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ফ্রেটারনিটি কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমগুলো। পুরোনো পদ্ধতিগুলোর পাশাপাশি হুন্ডি ব্যবসা পুঁজি পাচারকে বাংলাদেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত করেছিল। এ ক্রমবর্ধমান পুঁজি পাচারের কারণেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ বিপজ্জনকভাবে কমে ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছিল। স্বৈরশাসকের পতনের পর পুঁজি পাচারের জন্য হুন্ডি ডলারের চাহিদা অনেকখানি কমে গেলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে আবার যদি হুন্ডিওয়ালাদের দাপট বাড়তে শুরু করে, তাহলে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রাখা যাবে না। সেজন্য আমি মনে করি, ডলারের দাম নির্ধারণ এখনই বাজারের হাতে ছেড়ে না দিলেই ভালো হতো। হাসিনার স্বৈরশাসন উৎখাতের পর মাত্র কয়েকজন ছাড়া লুটেরা ও পুঁজি পাচারকারীদের প্রায় সবাই নানাভাবে দেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। কয়েক লাখ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এসব পলাতক লুটেরা একেকজন দেশের আন্তর্জাতিক সীমানার নানা গোপন পথে বিজিবি-বিএসএফ এবং সংগঠিত চোরাকারবারি-সিন্ডিকেটের মদদে প্রধানত ভারতে পাড়ি দিয়েছেন। ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর এখন তাদের বেশিরভাগেরই সাময়িক অর্থ-সংকটে পড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতএব, তাদের পরিবারের সদস্য-সদস্যা ও আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় তাদের বিদেশে অবস্থানের অর্থায়ন সংকট কাটানোর জন্য ওইসব দেশে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ তাদের জন্য প্রয়োজন হওয়াই স্বাভাবিক। তাদের কারণে আবার হুন্ডি ব্যবসা চাঙা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় গত সাড়ে নয় মাসে ২৭ হাজার সন্দেহজনক লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সাধু সাবধান!
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এবং
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি
মন্তব্য করুন