আলম রায়হান
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

অনন্য এক আকবর হোসেন

অনন্য এক আকবর হোসেন

মৃত্যু মানুষকে আড়ালে নিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চোখের আড়াল, তারপর দ্রুত স্মৃতির আড়ালে চলে যেতে থাকে মৃত ব্যক্তিটি। একটি অদৃশ্য দেয়ালের আড়ালে মৃত মানুষটি ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে যায়। কিন্তু এ সাধারণ ধারার বাইরে যারা থাকেন, যাদের মনে হয় তিনি আছেন, যার মৃত্যুর দিনটি মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা, তেমনই এক ব্যক্তিত্ব লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন বীরপ্রতীক। যিনি রাজনীতিক, বিএনপি নেতা এবং সাবেক এমপি-মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আসলে তিনি সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি যত না রাজনীতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক দার্শনিক। জগৎসংসারে ক্ষণজন্মা এ জীবনের সূচনা ১৯৪১ সালের ১৮ জানুয়ারি। এ জগতের পাট চুকিয়ে তিনি আকস্মিকভাবে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ২০০৬ সালের ২৫ জুন, ৬৫ বছর বয়সে। সে হিসাবে গতকাল ছিল তার ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী।

আকবর হোসেনের সঙ্গে আমার শেষ দেখা হয় মৃত্যুর মাত্র ছয় ঘণ্টা আগে সচিবালয়ে তার অফিস কক্ষে। তখন তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রী। দুপুর ২টার দিকে আমার একটি দ্বিধান্বিত প্রস্তাবের জবাবে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন, ‘ধরো, আমি মইরা গেলে, আবার কার পিছে ঘুরবা!’ কিন্তু তার সেই মরণ যে মাত্র ছয় ঘণ্টার সীমানায়, তা তখন জানতাম না। কিন্তু জানলাম রাত সোয়া ৮টার দিকে শফিক ভাইয়ের (জনসংযোগ কর্মকর্তা) ফোনে, ‘আলম ভাই, তাড়াতাড়ি আসেন। স্যারের পালস পাওয়া যাচ্ছে না।’ তখনো ভাবিনি, এটি আসলে মৃত্যু সংবাদ। আধা ঘণ্টার মধ্যে ৭৫ নম্বর গুলশানের বাসায় প্রবেশের মিনিটখানেক পর দেখলাম একটি লাশবাহী গাড়ি ধীরে ধীরে বাড়ির আঙিনায় প্রবেশ করছে। বুঝতে বাকি থাকল না, একটি বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের নিশ্চিত অবসান! স্ত্রীসহ স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠল গোটা পরিবেশ। কিছুক্ষণের মধ্যে এলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তখনো পুরো বাড়ি লোকে-লোকারণ্য। তাদের মধ্যে অসংখ্য সাংবাদিক ছিলেন। উল্লেখ্য, আকবর হোসেন ছিলেন সাংবাদিকবান্ধব। এর অর্থ এই নয় যে, তিনি মিডিয়া কাভারেজের জন্য লালায়িত ছিলেন। পেশাগত অনিশ্চিত জীবনের কারণে তিনি সাংবাদিকদের প্রতি ছিলেন সহানুভূতিশীল। তিনি প্রায়ই বলতেন, সাংবাদিকদের জীবন আসলে কোনো জীবন না, এ এক ধরনের আসক্তি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার সমাপ্তি হয় খুবই বেদনাদায়ক।

অনেকেই জানেন, কর্নেল আকবর হোসেন ছিলেন অকল্পনীয় মাত্রায় জনসম্পৃক্ত এবং মানবিক প্রবণতার মানুষ। তার সঙ্গে নানান পেশার মানুষের ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমিও এ ধারায় সম্পৃক্ত হয়েছিলাম ১৯৮১ সালের দিকে, পেশার শুরুতে আমার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জনকথার সুবাদে। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা হয় আরও অনেক পরে, ১৯৮৮ সালের প্রথমার্ধে। সে সময় সাপ্তাহিক সুগন্ধায় কাজ করি। তখন এরশাদবিরোধী আন্দোলন নতুন বাঁক নেওয়ার সময়ে বিএনপির দুর্দিন চলছে। এমনই দুর্দিন যে, খালেদা জিয়ার গাড়ির ড্রাইভারের বেতন দেওয়ার লোকেরও আকাল ছিল। এ প্রসঙ্গে আর বিস্তারিত না বলাই ভালো। বিএনপির সেই দুর্দিনে আকবর হোসেনকে দেখেছি পুরো সামর্থ্য নিয়ে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে। তখন তিনি বনানী ডিওএইচএসে ৬ নম্বর লেনে শ্বশুরের বাসায় থাকতেন। সাদামাটা জীবনযাপন।

আকবর হোসেন পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে পাস করার জন্য নির্বাচনের আগে তাকে গলদঘর্ম হতে হতো না। করতে হতো না ছোটাছুটি। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কোনো এলাকায় একবারের বেশি যেতেন না। এজন্য রসিকতা করে তাকে বলা হতো, ‘একবার হোসেন’। সারা বছরের জনসম্পৃক্ততাই সংসদ নির্বাচনে তাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছিল। নেপথ্যে বুস্টার হিসেবে কাজ করেছে আওয়ামী লীগের বাহার গ্রুপের সঙ্গে অন্যদের চরম বিরোধ। তার আচার-আচরণে কখনো ভাব ভর করেনি। তিনি ছিলেন স্বচ্ছ রাজনীতিক। আর শুধু মুক্তিযোদ্ধা-মন্ত্রী-রাজনীতিক নন, আকবর হোসেন কূটনীতিতেও ছিলেন বেশ চৌকস। ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তিনি প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সময় জাপানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। তিন বিঘা করিডোর, ফারাক্কা ও চাকমা সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত কমিটিরও সদস্য ছিলেন আকবর হোসেন।

সেনাকর্মকর্তা থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, পরে রাজনীতিক—সংক্ষেপে এই হচ্ছেন আকবর হোসেন। ১৯৭১ সালে তার পোস্টিং ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে, ঢাকা সেনানিবাসে। এপ্রিল মাসে ঢাকা সেনানিবাস থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রথমে ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। পরে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হন। যুদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের মাটিতে থেকেই। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে টেংরাটিলার যুদ্ধ ইতিহাসে বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। বৃহত্তর সিলেট জেলার টেংরাটিলা, সালুটিকরসহ বিভিন্ন স্থানে বীরদর্পে মরণপণ যুদ্ধ করেছেন আকবর হোসেন। টেংরাটিলা যুদ্ধ ইতিহাসে অনন্য এক স্থান অধিকার করে আছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছাতকের প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণে নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর একটি দলের (ব্রাভো) নেতৃত্বে ছিলেন আকবর হোসেন। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। ১৪ অক্টোবর শুরু হওয়া এই যুদ্ধে ১৫ অক্টোবর পাকিস্তানি তিনটি হেলিকপ্টার মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণ করেছে। এতেও মুক্তিযোদ্ধারা মনোবল হারাননি। সারা দিন যুদ্ধ চলেছে। পর ১৬ অক্টোবর সকাল থেকে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। সন্ধ্যার মধ্যেই গোটা সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এলাকা মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেন। ব্যাপক হতাহত হয়ে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। কিন্তু পরে সিলেট থেকে ছাতকে আক্রান্ত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সাহায্য (রিইনফোর্সমেন্ট) চলে আসে। অন্য টিমের ভুলের কারণে পাকিস্তানি সেনারা বেড়িবাঁধ দিয়ে ছাতকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পায়। নতুন এই পাকিস্তানি সেনারা উঁচু টিলাগুলোতে অবস্থান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। ফলে পাল্টে যায় যুদ্ধের গতিধারা।

আকবর হোসেন রাজনীতিতে আসেন পরিকল্পিতভাবেই। ১৯৭৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ করেন। মাসখানেকের মধ্যে তিনি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ধারণা করা হয়, রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার জন্যই তিনি সেনাবাহিনীর নিশ্চিত চাকরি ছেড়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন করলে আকবর হোসেন ইউপিপি নিয়ে ফ্রন্টে যোগ দেন। পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পর্যায়ক্রমে বিশেষ সচিব, যুগ্ম সম্পাদক এবং আমৃত্যু ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। কিন্তু এলাকায় তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা শুধু দলের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। কুমিল্লায় তিনি পরিচিত ছিলেন ‘সর্বদলীয়’ নেতা হিসেবে। পাশাপাশি তিনি ছিলেন সব ধর্মের পৃষ্ঠপোষক। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নানান ধরনের নিপীড়ন তাকে খুবই ব্যথিত করত। তিনি নানানভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আকবর হোসেনের কোমল প্রবণতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃঢ় মনোভাবের। নৌপরিবহন মন্ত্রী থাকাকালে একাধিক লঞ্চডুবির ঘটনা পুঁজি করে রাজনৈতিক খেলার সঙ্গে যুক্ত হয় সেই সময়ের লঞ্চ মালিক সমিতির প্রভাবশালী একটি অংশ। বিনা নোটিশে লঞ্চ ধর্মঘট ডাকা হয়। সৃষ্টি হয় এক অরাজক পরিস্থিতি! কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে সফলভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন আকবর হোসেন। সে সময় অকল্পনীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আরেক পোড়খাওয়া রাজনীতিক শিমুল বিশ্বাস। তখন তিনি বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান। সেই সময়ে মাফিয়া প্রভাবিত লঞ্চ মালিকদের হটকারিতার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে একটি সরকারি সংস্থার চেয়ারম্যানের পক্ষে মন্ত্রীকে সহায়তা করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু শিমুল বিশ্বাস এই কঠিন কাজ করতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, ডেনমার্কের আজগুবি প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়ে রো রো ফেরি সচল রাখার দৃঢ় সিদ্ধান্ত সফলভাবে কার্যকর করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আকবর হোসেন।

আকবর হোসেনকে কখনো বিচলিত হতে দেখা যায়নি। যদিও তিনি আবেগপ্রবণ লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হয়তো এ কারণেই তাকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে অনেক বেদনাদায়ক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। কখনো ভেঙে পড়েননি। সব পরিস্থিতিই দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। মৃত্যুর সময় তার পাশে থাকা চিকিৎসকদের মতে, তিনি শেষ নিঃশ্বাসের সময়ও বিচলিত হননি। যেন মৃত্যুকেও সহজভাবে নিয়েছিলেন। কারও কারও মতে, ‘জীবন মানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা’। হয়তো আকবর হোসেন এ ধারণাই ধারণ করতেন মনেপ্রাণে। যেখানেই থাকেন আকবর ভাই, ভালো থাকবেন। আপনার অসংখ্য অনুরাগীর পক্ষ থেকে এটুকু শুধু কামনা।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরছেন আর্চার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশ

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের ৫৭৬ কোটি টাকা ফ্রিজ

ভারতে ঢুকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার

পলাতক আ.লীগ নেতাকে ধরে পুলিশে দিল স্থানীয় জনতা

পাকিস্তানি অভিনেত্রীর মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি বাবার

পানিতে ফেলে যমজ মেয়েকে হত্যা করেন মা 

চব্বিশের পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে ঐক্য নয় : জমিয়ত

ইসরায়েলে র‌্যাগিংয়ের নামে নবীন সেনাদের যৌন নির্যাতন, ৭ সিনিয়র আটক

মুরাদনগরের সেই নারীর ভিডিও ছড়ানোর ‘মূলহোতা’ ৫ দিনের রিমান্ডে

১০

পরিবেশবান্ধব ভাস্কর্যের দাবিতে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিল কক্সবাজার কমিউনিটি অ্যালায়েন্স

১১

এসএসসির ফল প্রকাশে কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না : শিক্ষা মন্ত্রণালয়

১২

ভারি বর্ষণে যমুনায় বাড়ছে পানি

১৩

ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত

১৪

সেমির আগে রিয়াল মাদ্রিদের বিমান দুর্ভোগ, প্রস্তুতি নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা

১৫

এরদোয়ানকে অপমান করায় তুরস্কে ইলন মাস্কের চ্যাটবট ব্লক

১৬

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

১৭

জবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগ অ্যালামনাইয়ের সভাপতি খলিল, সম্পাদক মামুন

১৮

বিএমইউতে এআই রোবট দেবে ফিজিওথেরাপি, চালু হচ্ছে কাল

১৯

বিয়ে করতে চান সালমান খান

২০
X