ইসরায়েলের বেশকিছু সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হেনেছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি স্বীকার করেন, গত জুনে ইরান-ইসরায়েল সামরিক সংঘাতের সময় ইরানের এসব ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে টার্গেটে আঘাত হানে।
ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘খুব সীমিত কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা অব্যাহত রয়েছে।’ হামলায় ঠিক কোন ঘাঁটি বা এলাকায় ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দেননি তিনি। তবে এটিই প্রথমবারের মতো এমন হামলার আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি।
১৩ জুন শুরু হওয়া দ্বিপাক্ষিক সংঘাতে ইসরায়েল প্রথমে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যাতে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান একযোগে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর ও সামরিক টার্গেটে।
তেহরান থেকে চালানো এসব হামলার লক্ষ্য ছিল তেল আবিব, হাইফা এবং বিরশেভার আশপাশের সামরিক অঞ্চলগুলো। হামলায় বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করে, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তারা মাঝ আকাশেই ভূপাতিত করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অন্তত ৫টি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষকদল স্যাটেলাইট রাডার ডেটা বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ছোড়া ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ অংশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। এদের মধ্যে রয়েছে একটি প্রধান বিমানঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিক ঘাঁটি।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের সামরিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতির ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হবে।
১২ দিনব্যাপী এই সংঘর্ষ ২৪ জুন এক মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালায়, যা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এই স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধেই ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েল ভূখণ্ডে এত বড় আকারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক নিরাপত্তা বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে।
মন্তব্য করুন