সাধারণত বন্যার পর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষ মুখোমুখি হয় নানাবিধ সংকটের। অতিসম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ু—এ দুয়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হয় টানা বৃষ্টি। ভারি বর্ষণ ও নদীর পানি বেড়ে বিভিন্ন এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ঘটে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা। তলিয়ে যায় ফসলি জমি। এর মধ্যে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয় সব থেকে বেশি। সেখানে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। স্বস্তির কথা, এরই মধ্যে ফেনীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করছে। তবে একই সঙ্গে বের হয়ে আসছে বন্যার ভয়ানক ক্ষতচিহ্নগুলো।
সোমবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বন্যা-পরবর্তী শোচনীয় চিত্র। প্রতিবেদন অনুসারে, ভাঙা রাস্তাঘাট, ভেঙে পড়া বসতঘর, গবাদি পশু, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন চার উপজেলার লক্ষাধিক বাসিন্দা। পুরো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ না করা হলেও এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বানভাসিরা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরলেও আরেক দফা সংকটে পড়েছেন। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার, ভাঙাচোরা আসবাবসহ সব মিলিয়ে নতুন করে বাঁচার লড়াইয়ে নেমেছেন তারা।
সরকারের একাধিক সংস্থার তথ্য অনুসারে সর্বশেষ পরিস্থিতি বলছে, বন্যায় ডুবে যাওয়া ১৩৭ গ্রামের মধ্যে ১২১টি গ্রামের পানি এরই মধ্যে নেমে গেছে। বাকি গ্রামগুলোর পানি নামছে দ্রুত। এরই মধ্যে ৯ হাজার ৭৬ জন বানভাসি আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করে বাড়ি ফিরেছেন। ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আর ৪৮৪ জন আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা পরিস্থিতি উন্নত হলে আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করবেন। প্রাথমিক হিসেবে বন্যায় পানিতে আমনের ১৫০ হেক্টর বীজতলা, আউশ ধান ৪০ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন সবজি ৯০ হেক্টর, মরিচ ২ হেক্টর, আদা ১ হেক্টর, হলুদ ৫০ শতকসহ তলিয়ে গেছে। এতে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া বন্যার পানিতে কিছু গৃহপালিত পশু, ৭ হাজার ২০০ মুরগি, ২৩৫টি হাঁস মারা গেছে। ১৫টি গবাদি পশুর খামার ও ১৭টি হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৩৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১৩০টি পুকুর ও মৎস্য ঘের থেকে ৫৫ টন মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খামার ও পুকুরের পাড়। বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির এখনো নিরূপণ করা যায়নি।
খুব সংগত কারণেই বানভাসি এসব মানুষ এখন সবচেয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছে। কেননা বন্যাকবলিত মানুষ যার যার জায়গা থেকে হারিয়েছেন তাদের সহায়-সম্বল। কারও বসবাসের ঘর নষ্ট হয়েছে। কারও নেই খাবারের নিশ্চয়তা। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। আবার কারও শেষ হয়ে গেছে আয়ের একমাত্র উৎস। সব হারিয়ে তারা এক ধরনের নিঃস্ব। ফলে টানা কয়েকদিন পানিবন্দি থাকার পর মানুষ ঘরে ফিরলেও স্বস্তির বদলে মিলছে চরম দুশ্চিন্তা। কর্মহীন হয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে খাদ্যসহ নানা সংকট।
আমরা মনে করি, বন্যা চলাকালীন যেমন পানিবন্দি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো সবচেয়ে জরুরি কাজ; একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা। প্রায় সব হারানো মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা এ সময় পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সাজানো ঘর-সংসার-রুটি-রুজি সবই ক্ষতির ক্ষতির শিকার হয়। ফলে তাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসা উচিত সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ মানবদরদি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলোরও। আমাদের প্রত্যাশা, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন