“হুর মিয়া আপনে আর নাম পাইলেন না, ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’—এসব কোইত্থাইক্কা নাম আনছেন; উদু, বুদু, লেদু, কেদু, যদু, মদু, সেদু, গেদু... থাক ‘চ’ বর্গের কোনো নাম লিখলাম না। কিন্তু কোই পিরথিবীতে আর নাম পান না মিয়া সবসময় খালি বিধর্মীগো নাম লয়া নাড়াচাড়া করেন। ক্যা, আমাগো দেশে কুনো ভালো নাম নাই, যারে নিয়া আপনে রম্য লিখতে পারেন?”
‘তা তোর বাংলাদেশে কোন নাম আছে, যা শত বছর পার করেও সমাজে দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করছে?’
‘ক্যান, সোহরাব-রোস্তম, শিরি-ফরহাদ, হীর-রাঞ্জা, লাইলি-মজনু...আর কতো কমু...’
‘ওই জঙ্গল, এই গুলা তোগো দেশের নাম!! এসবই তো মধ্যপ্রাচ্যের নাম, তোদের নাম হলো কীভাবে?’
“ওম্মা কচি খুকা মিয়া বোজেন না, ‘চেয়ার’ যেমন ইংরেজি শব্দ বাংলার মইধ্যে হান্দাইছে, আবার ‘কেদারা’ যেমন ফার্সি শব্দ আপনেগো আপন হোইছে তেমনি এই সব মিডলইস্টের নামও আমাগো হয়া গ্যাছেগা। যেমন আবুদুল্লাহ-আল-মামুন, ওমর-বিন-তাসিক, শামসউল ইসলাম—সব এখন বাংলার লড়াকু সৈনিক। এরা সবাই বাংলাদেশ রক্ষায় জীবন জাঁ-নিসার করছে। এগো নাম লইতে কি আপনের জীবলায় আটকায় এই নামগুলা কি আপনের ভাশুর হয়?
যে ভাশুরের নাম রসনায় উচ্চারিত হয় না।”
‘ভাইডি আমি কোইতাছি বাংলার বাগধারার কথা। যেমন; নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা, পাপের ধন প্রায়শ্চিত্তে যায়...’
‘হ হ, গত স্বৈরাচারের পাপের ধন যেমন বুল ডোজারে খায়...’
‘আবার যেমন রথ দ্যেখা কলা বেচা...’
‘হে হে এই কতা আর কয়েন না, রথ দেখার সুযোগ পায়াই চান্দাবাজি শুরু। এই বাক-ধারা আমি ছাড়া আর কে হাড়ে হাড়ে বুজছে।’
‘তুইতো দেখি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিচ্ছিস!’
‘ভাই আমরা সব ঘরপোড়া গরু অহন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরে কাঁইপ্পা উঠি। আমাগো আর বাগধারা না শিখায়া সত্যিকারে ন্যায়ের পথে হাঁটা শিখান ভাই ন্যায়ের পথে হাঁটা শিখান।’
“আরে সেই ন্যায়ের পথে হাঁটার জন্যইতো তোকে বোলছিলাম যে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ মানে একজনের দোষ আর একজনের ওপর চাপিয়ে দিলে ন্যায় কখোনো প্রতিষ্ঠা হয় না।”
“তো ন্যায়ের পথে চলতে চলতে আপনে কার দোষ কার ঘাড়ে চাপাইছেন? কুনো পোরমান ছাড়াই আপনে মিয়া কন ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’।”
“ক্যানো রে ভাই তোরা যে ইলেকশন কমিশনারের গলায় জুতোর মালা পরালি আবার তার অধরে জুতো দিয়ে আঘাত করলি আর বলছিস কোনো প্রমাণ ছাড়া আমি তোকে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’র বাগধারার গল্প শুনাচ্ছি?”
‘ভাই রে, একটা পটপরিবর্তনের পর কিছু বিচ্ছিন্ন কাণ্ড ঘটতেই পারে, সেটা আপনে ধইরেন না ভাই।’
‘গত নয় মাস ধরে থেকে থেকে তোর গ্রামে গ্রামে, গঞ্জে গঞ্জে, শহরে শহরে, একের পর এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই থাকবে আর তোর প্রশাসন মুখ বুঁজে প্রতিটি ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বোলতই থাকবে!!’
‘ক্যা, পোরশাষণ তো চ্যেইত্তা উঠছে, যে কোনো মুব ভায়োলেন্সে জিরু টলারেন্স, অন্যায়ভাবে কেউরে কিছু কোরলেই বাইন্দাইলছে।’
এই যেমুন পেরধান নির্বাচন কমিশনাররে যেই ব্যাডায় মারছে হেই ব্যাডায় অ্যারেস্ট হোইছে।’
“জ্বি, আপনাকে তাই বোলছিলাম, যে লোকটা জুতো মারল তাকে না ধরে তোমার প্রশাসন যে ব্যক্তি ওই নোংরা কাজের বাধা দিচ্ছিল তাকেই অ্যারেস্ট কোরেছে!! একেই বলে ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’।”
‘যাহ এইডা আপনে কী কন, আপনে কি আন্ধানি, বিডিও পুটেজ দ্যেইক্ষাও কি আপনে পোরকৃত দুষীরে ধরতে পারেন নাই?’
“ওরে আমার কচি খুকারে আজীবন শুনেছি আইন অন্ধ, সে ছোটো বড়, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু কোনো কিছুর বাছ বিচার করে না। আইনের বিচার সবের জন্য সমান। কিন্তু তোমার প্রশাসন তো আইন না, তাই সে অন্ধ না, সে সব দেখে শুনেই বিচার বুদ্ধি করে তারপর ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়েছে বুঝেছেন?”
‘না ভাই মানতে পারলাম না, একজন প্রাক্তন সোলজার যিনি দেশ মাতৃকার জন্য জীবন উৎসগের্র ব্রত নিয়ে নিজেরে গড়ে তোলেন, হ্যেয় কি না আন্ধার মতুন উদোরে থুয়া বুদোরে অ্যারেস্ট কোরবো!! না ভাই মানা পারলাম না!!’
‘তুমি মানা পারলা না তো কি হোইছে। সারা জাতি এই অ্যারেস্ট মাইন্না নিছে। তোমার ফেসবুকে এসিতে বসা ড্রইংরুমের কিছু বিপ্লবী এর বিরুদ্ধে ইউটিউবের স্ক্রিন ফাটিয়ে ফেলেছে। প্রচুর সেল ফোনের পাহাঢ় প্রমাণ স্ক্রিনের ভাঙা গুঁড়ো পথে পথে পড়ে থেকে ট্রাফিক চলাচলের বিঘ্ন ঘটাচ্ছিল; তাই নগর ভবনের ক্রেন এসে এইসব ভাঙা সেলুলার ফোনের গুঁড়োগুলো পরিষ্কার কোরছে। যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচলে কোনো বাধা না পায়।’
‘দেখছেন আমি তহনি কোইছিলাম, ভাইরে এক্স সোলজার কহোনোই কুনো অন্যায়ের ডরায় না। হ্যায় ঠিকই একজনরে বাইন্ধাইলছে।’
“জ্বি, এ যেন তোর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শ্যামা নৃত্য নাট্যে’র মতো। চুরি হোয়ে গেছে রাজকোষে/ চোর চাই চোর চাই/
যে কোরেই হোক/ হোক সে অন্য কোনো লোক/ এখন তোর প্রশাসন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে সন্মানকোরে, অপরাধী ধরেছে, হোক সে অন্য কোনো লোক!!”
‘বুঝেন না মিয়া, সাহিত্যে নোবেল, পাওয়া কবির কথাতো শুনতেই হয়। তাই কবি রবীন্দ্রনাথের কতা মতুন অন্য ব্যাডারে ধরছে।’
‘ভয় পায়েন না, নির্বাচিত সরকার আইলে সব ঠিক হয়া যাইব। ততদিন একটু অপেক্ষা করেন।’
‘এত বিনা মেঘে বজ্রপাত। কোনো দোষ কোরলাম না, অ্যারেস্ট!! আবার ন্যায়বিচারের জন্য নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা কোরতে হবে!!’
‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল!!’
“শুনেন, আপনের বাগধারায় কোইছে ‘কখোনো হাল ছেড়ো না... মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ...’ একদিন না একদিন ন্যায়প্রতিষ্ঠা হোবেই। তাই একটু মানুষে বিশ্বাস রাখেন, আর ধৈর্যঃং স্মরণঃং গচ্ছামি...”
‘সেই ভালো রাজা সিদ্ধার্থের মতো বোধিবৃক্ষের নিচে বোসে চল্লিশ দিনের ধৈর্যঃং স্মরণঃং গচ্ছামি... করি...’
‘আহেন ফেসবুকার, ব্লগার, ইউটিউবার ভাই এবং আমার দেশবাসী, আমরা ব্যেবাগতে মিল্লা ন্যায়প্রতিষ্ঠার লাড়াই শুরু করিঃ ধৈর্যঃং স্মরণঃং গচ্ছামি... ধৈর্যঃং স্মরণঃং গচ্ছামি...’
লেখক: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রম্য লেখক
মন্তব্য করুন