ড. আবদুর রহমান
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রয়োজন

কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রয়োজন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহে অস্থির অবস্থা প্রায়ই দৃশ্যমান। সৃষ্টি হয় জনরোষ, মেহনতি মানুষ পড়ে দুর্ভোগে। কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয় কৃষিপণ্য আমদানিতে, যা আদৌ আমাদের কাম্য নয়। প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, ২০২১-২২ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আমদানি ব্যয় যথাক্রমে ৫.৩ বিলিয়ন ডলার ও ৪ বিলিয়ন ডলার; যা ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্য মিলিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলার প্রায়। দেশীয় চাহিদার ৮৫ শতাংশ গম ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে; ৬৬ লাখ ৬২ হাজার টন গম আমদানি করতে ব্যয় হয়েছে ৫৪.১৭ কোটি ডলার।

একই আর্থিক বছরে দেশীয় চাহিদার ৭০ শতাংশ, মসুর ডাল (৫৯ লাখ ২৯ হাজার টন), আলু আমদানি করা হয়েছে ৯৭ হাজার ২১৯ টন, মুগ ডাল ৬ হাজার ৮৯৫ টন, ছোলা ১ লাখ ৮০ হাজার টন। ভোজ্যতেল দেশীয় চাহিদার ৯৭ শতাংশ করতে হয় আমদানি।

একই অর্থবছরে রাফ ও রিফাইন্ড চিনি আমদানি করা হয়েছে ১৩.৮৬ লাখ টন, যার বাজারমূল্য ছিল ১.০২ বিলিয়ন ডলার। ফ্রিজিং মাছ ১.১০ হাজার টন আমদানি করতে ব্যয় হয়েছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। আমরা ভারত, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফ্রিজিং মাংস আমদানি করি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার টন শিশুখাদ্য আমদানি করা হয়েছে। যার মূল্য ছিল প্রায় ২২৩.৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টন। এ চাহিদা সম্পূর্ণভাবে বিদেশি আমদানির মাধ্যমে পূর্ণ হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৮৯৪ টন তাজা ফল আমদানি করা হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে পেয়ারা (HS কোড ০৮৪৫০) আমদানির পরিমাণ ছিল ৬২৫,৭৪০ কেজি, যার মোট মূল্য ছিল ২ লাখ ৭৭ হাজার ৭২০ ইউএস ডলার।

২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ হাজার ৬০২টি পেঁপে আমদানি শিপমেন্ট হয়েছে। এর প্রতিটি শিপমেন্টের গড়মূল্য কয়েক হাজার মার্কিন ডলার হতে পারে। চলমান প্রবন্ধটি তথ্যভারে জর্জরিত করে পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতির উৎপাদন মাত্রা বাড়াতে চাই না। সর্বাঙ্গে প্রয়োজন ‘কৃষি খাতে আমদানি বিকল্পনীতি’ প্রণয়ন। এ ক্ষেত্রে আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব এই যে, আমরা কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য (যে পণ্য কম ব্যয়ে যে এলাকায় অধিক পরিমাণে উৎপাদন করতে পারি) সুনির্দিষ্টভাবে কৃষিপণ্য উৎপাদন এলাকা ভাগ করে প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণসহ উৎপাদন নির্দেশনা প্রদান করতে পারি, তাহলে আমরা দেশজ চাহিদা পূরণ করতে পারি। ডাল, গম, চাল, ভোজ্যতেল (সয়াবিন, বাদাম, তিল, সরিষা), ফলমূল, চিনি, শিশুখাদ্য, আলু, মাছ-মাংস ও ডিম (২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ২৭.৩০ কোটি ডিম আমদানি করা হয়েছে)। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে প্রতিটি ডিমের মূল্য ছিল যথাক্রমে ১২ ও ৭.৫ টাকা)।

আমি যদি ধরে ধরে বলি, শিশুখাদ্য যেমন দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য বাংলাদেশের বিশাল চর এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ঘাষ দিয়েই আমরা গরু, মহিষ ও ছাগল চাষ করে দুগ্ধ জাতীয় খাদ্যসহ মাংসের চাহিদা মেটাতে পারি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, পেয়ারা দেশের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমিতে (পাহাড়ি এলাকাসহ) উৎপাদন করতে পারি। একইভাবে সম্ভব পেঁপে চাষও। আগেকার সময়ের চেয়ে মাছ চাষ বেড়েছে, এখন শুধু প্রয়োজন মাছের উন্নতমানের পোনা সরবরাহের ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান।

২০২৩ সালে আমরা মোট ৬৭ লাখ ৩১৩ হাজার ৩০ কেজি আদা ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে ৪৫.৫৬ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে আমদানি করেছি। একই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছি ৮৮৪,৩৬০,০০০ কেজি যার মোট মূল্য প্রায় ২১০.৫৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই বলব যে, আদা এমনি একটি পণ্য; যা গ্রামগঞ্জে, বন-জঙ্গলে যে কোনো ছায়া জায়গায় উৎপাদন করা যেতে পারে। এজন্য খুব বেশি কষ্টের প্রয়োজন হয় না। পেঁয়াজের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজন উন্নত বীজ সরবরাহ ও এলাকাভিত্তিক উপযুক্ত জমি ঠিক করে দেওয়া।

ধরুন, এবার আলুর উৎপাদন ভালো। কিন্তু আলু সংরক্ষণবিষয়ক জটিলতার কারণে এবার সংশ্লিষ্ট চাষির মাথায় হাত! অর্থনীতিবিদ কব-ডগলাসের তত্ত্বমতে, চলতি বছর কৃষক যেহেতু আলু উৎপাদন করে লোকসানসহ সংরক্ষণের সংকটে পড়েছে, সেহেতু আগামী বছর সংশ্লিষ্ট চাষিরা আলু উৎপাদনে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ হারাবে।

বাংলাদেশে টমেটো চাহিদা প্রায় ১.২ মিলিয়ন টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের টমেটো আমদানি করেছি।

শেষ করব এই বলে যে, আমরা কি কৃষিপণ্য (শস্য, মৎস্য, গবাদি পশু ও বনায়ন) উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই, না পরনির্ভরশীল থাকতে চাই? এই প্রশ্নটির ফয়সালা হওয়া প্রয়োজন প্রথমেই। অত্যন্ত দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বলব যে, সব উন্নত দেশে যেমন শিল্পবিপ্লবের আগে কৃষিবিপ্লব সম্পন্ন করেছে, আমাদের তেমন পথেই চলা উচিত। না হয় এ কথাই ভবিষ্যতে মনে পড়বে—‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি’।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজশাহীর চারঘাটে বন্যাদুর্গতদের পাশে বিএনপি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন রোধে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে : নীরব

মৃত বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ভিডিও নিয়ে জানা গেল সত্য ঘটনা

চিকিৎসা সামগ্রী রেজিস্ট্রেশনে স্বতন্ত্র নীতিমালার দাবি

রাতে জামিনে কারামুক্ত হলেন শমী কায়সার

ঢাকায় ‘কমনওয়েলথ অ্যালামনাই প্রদর্শনী ও নেটওয়ার্কিং সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত

‘ভোলাগঞ্জ থেকে লুট করা’ পাথর ডেমরায় উদ্ধার

আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হল ঢাবি-সাত কলেজ

রাতে স্মার্টফোনের আসক্তি সহজেই দূর করুন

গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ : আমিনুল

১০

বাড়ির মালিককে থাপ্পড় দিয়ে ডাকাত — ‘ঘরে সিসি ক্যামেরা কেন লাগিয়েছিস’

১১

হাঁসের মাংস থেকে দূরে থাকবেন যারা

১২

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে যুবকের ভিডিও কল, আ.লীগ সন্দেহে গণপিটুনি

১৩

আগস্টের প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার 

১৪

জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা : চট্টগ্রামে যেসব সড়কে চলতে মানা

১৫

টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনীতি ও সংহতির সমন্বয়ের আহ্বান কফিলউদ্দিনের

১৬

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

১৭

জাহাঙ্গীরনগরে নতুন মোড়কে ফিরছে ‘পোষ্য কোটা’

১৮

‘যারা স্বাধীন দেশ চায়নি, তাদের এখন বড় গলা’

১৯

পাথর লুটের পর ঘুম ভাঙল সবার, এখন পর্যন্ত উদ্ধার কত

২০
X