কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

সময়োচিত উদ্যোগ

সময়োচিত উদ্যোগ

বাংলাদেশের জন্য ধীরে ধীরে এক ভয়ংকর সংকটে পরিণত হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এ সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগে অংশ নিয়ে সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে সাতটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, তা নিঃসন্দেহে বাস্তবতানির্ভর ও সময়োপযোগী।

সংলাপে অংশগ্রহণ করছেন কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাব ও বক্তব্যগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে সরকার। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা শুধু কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।’ সংকট সমাধানে ড. ইউনূস সাত দফা প্রস্তাব দেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে একটি বাস্তব রোডম্যাপের ব্যাপারে তাগিদ দেন। দ্বিতীয়ত, এ জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষাকারী কাজ চলমান রাখতে দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অংশীজনের অপরিমিত সহযোগিতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানান। তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি সব ধরনের নিপীড়ন বন্ধের দাবি তোলেন। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির প্রতি রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করা আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে না আসে এবং দ্রুত মিয়ানমারের অভ্যন্তর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়। চতুর্থত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা বন্ধে, জাতিগত নিপীড়ন রোধে পরামর্শ কিংবা সংলাপের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকার ও রাখাইন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয় যেন রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে, স্বেচ্ছায় নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিশেষ করে আসিয়ানকে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালনে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ষষ্ঠত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীজনকে জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলা হয়। সপ্তমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ন্যায়বিচার, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে; গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।

আমরা জানি, ২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। শুধু তাই নয়, এ বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর বসবাসের জায়গা করতে গিয়ে ওই অঞ্চলে পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। বেড়েছে সন্ত্রাসী, অস্ত্র চোরাচালানসহ মাদক কারবারির মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এ ছাড়া বিদেশি অর্থ সহযোগিতা কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ভরণপোষণ জোগানোর। তাদের ঘিরে আলোচনা রয়েছে আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ আরও কিছু স্পর্শকাতর ইস্যু। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার সংকটটি নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। প্রথমটি কক্সবাজারে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয়টি হবে ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এবং তৃতীয়টি ৬ ডিসেম্বর কাতারে। সব মিলিয়ে এ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োচিত। আমাদের সবার চাওয়া, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক। এটা বাস্তবায়নে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিকল্প নেই, তা সর্বজনবিদিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

৩১ দফার বার্তা প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে : সেলিমা রহমান

এসএ২০ নিলামে সাকিব–মোস্তাফিজসহ ১৪ ক্রিকেটার

প্রবাসী বাংলাদেশির মেয়েকে হত্যায় ইতালিতে বিক্ষোভ

সংঘর্ষের ৪৪ ঘণ্টা পর মামলা করতে থানায় চবি প্রশাসন

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাসহ ১৮২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

হেসে খেলে ডাচদের হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল টাইগাররা

‘জনগণের ভালোবাসা ও আস্থার ভিত্তিতে বিএনপি বারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এনসিটিবির কড়া সতর্কতা

উমামা ফাতিমার সংবাদ সম্মেলন বয়কট মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের

মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালে ১ কোটি টাকা অনুদান দিল জামায়াত

১০

চবি ক্যাম্পাসে ১৪৪ ধারা জারি, সময় বাড়ল আরও একদিন

১১

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা ফ্রি হবে : খসরু

১২

ডাকসু নির্বাচনে শিবির সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

১৩

ঘুম থেকে উঠেই বিছানা পরিষ্কার করা ভালো নাকি খারাপ, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

১৪

নৌ-পুলিশের অচল স্পিডবোটের জন্য বরাদ্দ ২০০ লিটার তেল!

১৫

‘আমি নাকি গে!’ গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন অক্ষয় কুমার

১৬

আড়াই ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল শুরু

১৭

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের পরীক্ষায় জালিয়াতি, প্রতারক গ্রেপ্তার 

১৮

মুন্সীগঞ্জে একদিনেই মিলল তিন মরদেহ

১৯

ছাত্র মজলিসের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রহমত আলী আটক

২০
X