কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

বজ্রপাতে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলুন

বজ্রপাতে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলুন

ক্রমেই বজ্রপাতে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা যায় বজ্রপাতের কবলে। এতে নিহতদের অধিকাংশই কৃষক কিংবা খেটেখাওয়া হতদরিদ্র মানুষ। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে উদ্বেগজনক হারে বাড়লেও, এ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা আজও গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। একদিকে যেমন সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা লক্ষণীয়; অন্যদিকে রয়েছে বজ্রপাত থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ের নানা প্রকল্প এবং শত শত কোটি টাকার শ্রাদ্ধের ইতিহাস।

বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা যথেষ্ট উদ্বেগের। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, তাপপ্রবাহ ও বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় দেশে বাড়ছে বজ্রপাতের প্রবণতা। এতে উদ্বেগজনকভাবে প্রাণহানি বাড়ছে। শুধু গত রোববার এক দিনেই বজ্রপাতে মারা গেছে ১১ জন। অপঘাতে হোক আর যে কোনোভাবেই হোক, কোনো মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে গভীর বেদনার কথা হলো, বজ্রপাতে মারা যাওয়ার বড় অংশই মাঠে খেটেখাওয়া সাধারণ কৃষক বা কৃষিশ্রমিক। ফলে এ মৃত্যুর মিছিল কৃষির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রান্তিক মানুষদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রের বরাবরের উদাসীনতা দায়ী করছেন আবহাওয়াবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।

অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক তথ্য হচ্ছে, দেশের কৃষি উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোই বজ্রপাতের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়ছে। আবার ফসল উৎপাদন ও বজ্রপাতের মৌসুম একই সময়ে হওয়ায় বিষয়টি কৃষির জন্য নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৪ বছরে বজ্রপাতে প্রাণ গেছে ৪ হাজার ১৫৮ জনের। প্রতি বছর গড়ে মারা গেছে ২৯৭ জন।

এটা গভীর হতাশার যে, প্রায় এক দশক আগে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও তা থেকে সুরক্ষার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এসব উদ্যোগে শুধু ব্যয়ই বেড়েছে। ক্রমাগত ব্যয় বাড়লেও মেলেনি দৃশ্যমান সুফল। অতীতে দেখা গেছে, বজ্রপাত থেকে রক্ষায় বজ্রনিরোধক দণ্ড বা লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে তালগাছ। এ ছাড়া নেওয়া হয়ছে বেশ কিছু প্রকল্প। তবে এগুলো রাখতে পারেনি কার্যকর ভূমিকা। এর মধ্যে তালগাছ লাগানোর প্রকল্প যে গ্রহণযোগ্য সমাধান ছিল না, তা স্বীকার করেন খোদ তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তবে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের নেওয়া ব্যয়বহুল বজ্র নিরোধক দণ্ড এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম স্থাপনের যে উদ্যোগ, তার কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। আগামীতে বজ্রপাতের ঘনত্ব এবং তীব্রতা আরও বেড়ে যাবে—এমন শঙ্কার কথা যখন জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, তখন পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বর্তমান সরকার বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে আগাম সতর্কতা বা পূর্বাভাস দেওয়া এবং সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। তাদের ভাষ্যে, এত বিশালসংখ্যক দণ্ড স্থাপন করা ব্যয়বহুল ও অকার্যকর। তাই এর চেয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আগাম সতর্কতা প্রদান করা অধিক ফলপ্রসূ ও বাস্তবসম্মত।

আমরা মনে করি, বজ্রপাতে হতাহতের পরিমাণ হ্রাসে একটি কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এ কথা স্মরণে রাখা জরুরি যে, বিশেষ করে কৃষক ঝড়ঝঞ্ঝা-শীত-গ্রীষ্মে সব ধরনের বৈরিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের অন্নের সংস্থান করেন। সেই কৃষকের জীবনরক্ষায় কোনো ধরনের উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্টরা বজ্রপাত থেকে রক্ষায় দ্রুত একটি স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কাবুলে বিস্ফোরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে যা বললেন জবিউল্লাহ মুজাহিদ

‘ওলামা-মাশায়েখদের ত্যাগ-কোরবানি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’

যুদ্ধবিরতিতে গাজার ঘরে ঘরে আনন্দ, রাস্তায় মিছিল

সচেতন হলে ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব : চসিক মেয়র

২০ মাসে মামলার রায়, স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

ভোটের অধিকার পুনরুদ্ধারই জাতির একমাত্র লক্ষ্য : গয়েশ্বর

ঘুষি মেরে বিমানের মনিটর ভেঙে ফেললেন লন্ডন প্রবাসী

ইসরায়েলের যে কারাগারে বন্দি শহিদুল আলম

আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান, টিটিপি প্রধান নিহতের গুঞ্জন

বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কাবুল

১০

এককভাবে সরকার গঠন করবে বিএনপি : এমরান চৌধুরী

১১

‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে রংপুর অচল করে দিতে বাধ্য হবো’

১২

নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : লায়ন ফারুক

১৩

ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

১৪

বৃহত্তর মিরপুরে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত ওলামা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

১৫

দেশ বাঁচাতে হলে বিএনপির বিকল্প নেই : টুকু

১৬

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / বস্তিবাসী ও শহীদ পরিবারের ন্যায্য দাবি মেনে নিন

১৭

মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

১৮

রাজধানীতে ১৭ ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাগপা ছাত্রলীগের বৈঠক

১৯

হাত-মুখ বেঁধে শিশুকে ধর্ষণ, যুবককে খুঁজছে পুলিশ

২০
X