ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে রাজি হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি বন্দিবিনিময় করবে দুপক্ষ।
এ ছাড়া সমঝোতার ভিত্তিতে গাজায় নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহারও করবে ইসরায়েল। দুপক্ষের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার খবরে আনন্দ-উল্লাস করছেন গাজার বাসিন্দারা। যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সঙ্গে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি পাওয়ার সুযোগ আসবে বলে উদযাপন শুরু হয়েছে ইসরায়েলেও।
মিশরের পর্যটন শহর শারম আল-শেখে চলমান আলোচনার তৃতীয় দিনে বুধবার (৮ অক্টোবর) যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় হামাস ও ইসরায়েল। সেখানে গাজায় সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে পরোক্ষ এ আলোচনা চলছিল। এতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিশর ও তুরস্ক।
বুধবার রাতে যুদ্ধবিরতিতে দুপক্ষের রাজি হওয়ার খবর প্রথম সামনে আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ইসরায়েল ও হামাস—দুপক্ষই সই করেছে। এর অর্থ হলো খুব শিগগির সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। আর ইসরায়েল সমঝোতার ভিত্তিতে একটি এলাকা বরাবর সেনা প্রত্যাহার করবে। এটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির পথে প্রথম ধাপ।’
ট্রাম্পের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন দেওয়ার কথা। অনুমোদন সাপেক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শশা বেডরোসিয়ান।
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাস বলেছে, তারা এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটাবে। উপত্যকাটি থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার, ত্রাণ প্রবেশ ও বন্দিবিনিময়ের পথও সুগম হবে।
পরে হামাসের আলোচক দলের প্রধান খলিল আল-হায়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চয়তা দিয়েছে যে ‘যুদ্ধ’ পুরোপুরি শেষ হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় টানা নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে দুই ধাপে মাত্র দুই মাসের কিছুটা বেশি সময় সেখানে যুদ্ধবিরতি ছিল। বাকি সময়ে হামলা চালিয়ে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। আহত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার।
বুধবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতির চুক্তির কথা জানান। দুই বছরের যুদ্ধের অবসানে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার প্রথম ধাপ এটি। ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তিতে গাজায় আটক থাকা অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে পিছু হটে গাজা আগ্রাসন বন্ধ করতে বলা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, চুক্তির আরও বিস্তারিত পরে প্রকাশ করা হবে।
শান্তিচুক্তির প্রথম ধাপে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরায়েল উভয়পক্ষই রাজি হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি বা ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, গতকাল রাতে মধ্যপ্রাচ্যে আমরা একটি ব্রেকথ্রুতে পৌঁছেছি। আমরা যুদ্ধ শেষ করেছি অনেক দীর্ঘ পরিধিতে। আমি মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আসতে যাচ্ছে। আমার প্রত্যাশা এটি চিরকালীন শান্তি হবে।
সূত্র : রয়টার্স ও আলজাজিরা
মন্তব্য করুন