কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়

শিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা নয়

শিক্ষা নিয়ে ছেলেখেলা নয়

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১৮৬ জাল সনদধারী শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়েছে। জাতির কারিগর হিসেবে যারা খ্যাতি ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত, সেই শিক্ষক যদি পেশাজীবন শুরুই করেন অসদুপায় কিংবা জালিয়াতির মাধ্যমে, তা জাতি হিসেবেই আমাদের জন্য বড় লজ্জা ও হতাশার। পাশাপাশি এ ঘটনা যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিপ্রবণতা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতারই সাক্ষ্য বহন করে, তা নিঃসন্দেহ।

বুধবার কালবেলায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), সেই অভিযানে এ বিরাটসংখ্যক ভুয়া সনদধারী শিক্ষককে শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে চার শতাধিক শিক্ষকের সনদ জাল ও ভুয়া এবং তিন শতাধিক শিক্ষকের সনদ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব শিক্ষকের কাছ থেকে বেতন-ভাতা হিসেবে তাদের নেওয়া ২৫৩ কোটি টাকা আদায় করতে সুপারিশও করেছে অধিদপ্তর।

এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, যেই প্রতিষ্ঠানের কাজই ছিল জাল সনদসহ বেশ কিছু নিরীক্ষামূলক কাজ, সেই প্রতিষ্ঠান বিগত দেড় দশকে এ ব্যাপারে সম্পাদন করেনি তেমন কোনো কার্যকর অভিযান। বরং করেছে উল্টোটা! অর্থাৎ, অভিযোগ উঠেছে, অনেক ক্ষেত্রে জাল সনদ ধরা হলেও ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার। শুধু তাই নয়, এর আগে খোদ পরিদর্শকদের একটি চক্রই শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ভুয়া সনদধারীদের ছাড় দিত। জাল সনদের সাড়ে ১২ হাজার আটকে থাকা ফাইল নতুন করে যাচাই করতে গিয়েই বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এ চিত্র।

ডিআইএর প্রধান কাজ হচ্ছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আবার জাল সনদ জানার পরও অবৈধ সুবিধা নিয়ে বিষয়টি চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। দেখা যাচ্ছে, যে বা যারা ভূত তাড়াবে, তারা নিজেরাই স্বয়ং ভূত হয়ে গেড়ে বসেছেন।

আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে এ দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা যেমন ওই শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত; একইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির অভাবকেই সামনে আনে। শিক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এমন ছেলেখেলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, একজন শিক্ষক যদি জাল সনদে চাকরি নেন, তিনি শিক্ষার্থীদের কী শিক্ষা দিতে পারেন? একজন শিক্ষক মানে নীতিনৈতিকতা-আদর্শের প্রতীক। তার সব গুণাবলি ও জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তিনিই যদি হন নীতিভ্রষ্ট, তা অত্যন্ত হতাশার। এটা পুরো জাতির সঙ্গেই ধোঁকাবাজি। এ ধোঁকাবাজরা শিক্ষকতা নামের এই পবিত্র পেশাকেই কলঙ্কিত করেছেন। আর এ ধোঁকাবাজির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা করেছেন আরও বড় অন্যায়। কেননা, তাদের অসততার কারণেই নীতিহীন, মানহীন, অদক্ষদের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ সম্ভব হয়েছে, যা সার্বিকভাবে শিক্ষার জন্য অমঙ্গলের। আমাদের প্রত্যাশা, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে জড়িত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ভুয়া সনদধারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি হ্রাসে নেওয়া হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিজেকে ‘অর্ধনগ্ন’ মনে হতো: স্বরা

আইপিএল থেকে অবসর নেওয়ার কারণ জানালেন আন্দ্রে রাসেল

প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করেন বাউল শিল্পী সোনিয়া

সোনালি সাজে অপুর নতুন বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ বৈধ : আপিল বিভাগ

খালেদা জিয়ার জন্য সারা দেশে দোয়ার আহ্বান সরকারের

জন্মসংখ্যা অনুযায়ী দেখে নিন কেমন কাটতে পারে ডিসেম্বর মাস

শীতে কাঁপছে তেঁতুলিয়া, তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে

এসপির নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, বিশেষ সতর্কবার্তা

বিয়েতে রসগোল্লা কম পড়ায় মারামারি, অতঃপর

১০

কাজী ফার্মসের দাদন ব্যবসা বন্ধের দাবিতে প্রান্তিক খামারিদের বিক্ষোভ

১১

সৌন্দর্য নিয়ে ঈর্ষায় নিজের ছেলেসহ চারজনকে হত্যা

১২

এমবাপ্পে ম্যাজিক আর মৌসুমের সেরা পারফরম্যান্সে রিয়ালের বড় জয়

১৩

বিআরটিসির ২ বাসে আগুন

১৪

সকালের নাশতায় কী খাবেন, থাকছে পুষ্টিবিদের কিছু পরামর্শ

১৫

বায়ুদূষণে ‘প্রথম স্থানে’ ঢাকা

১৬

বগুড়ায় মিশ্র সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

১৭

মোবাইল নেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে হত্যাচেষ্টা, সাবেক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

১৮

দুপুর পর্যন্ত যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১৯

আবাসিক মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে এভারকেয়ার হাসপাতল

২০
X