

আজ ঐতিহাসিক ৪ ডিসেম্বর। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের এই দিনে সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনেকটা নাটকীয়ভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশে ৯ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এদিন বিটিভির রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের মাঝে সম্প্রচার করা হয় এরশাদের পদত্যাগ ঘোষণা। এ ঘোষণার পরই গভীর রাতে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও নগরে হাজার হাজার মানুষ কারফিউ উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় বিজয় উৎসবে মেতে ওঠে। পরদিন ৫ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের সর্বত্রই চলে উল্লাস আর বিজয় উদযাপন। স্বৈরাচারের পতনের আনন্দ আর আন্দোলনে নিহতদের বেদনার স্মৃতি এদিন ভোর থেকেই সারা দেশে এক অভিনব ও বিচিত্র শব্দচিত্রের জন্ম দেয়। অগণিত মানুষের মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। ছাত্রদের মিছিল, শ্রমিকদের মিছিল, বিএনপি, আওয়ামী লীগ, পাঁচদলীয় ঐক্যজোট, ঐক্য প্রক্রিয়া, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ সবাই অজস্র মিছিল বের করে। তারা স্বৈরাচারবিরোধী স্লোগান দেয় এবং হেলেদুলে-নেচেগেয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। অধিকাংশ মিছিলেই দলীয় পতাকার পরিবর্তে ছিল জাতীয় পতাকা।
সংস্কৃতিসেবীরা পরিবেশন করেন কবিতা আবৃত্তি, সংগীত আর নাটক। পুরানা পল্টন মোড়ে অন্তত ১৫ হাজার লোক রাস্তায় বসে সব অনুষ্ঠান উপভোগ করে। শামসুর রাহমান স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন এরশাদবিরোধী সংগ্রামে নিহতদের স্মৃতিতে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে ৫ ডিসেম্বর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ শর্তসাপেক্ষে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। আর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন এই দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে ২৭ নভেম্বর এরশাদের জরুরি আইন জারির প্রতিবাদের সাংবাদিকদের ধর্মঘটে ১০ দিন বন্ধ থাকার পর সারা দেশে এদিন থেকে সংবাদপত্র পুনঃপ্রকাশিত হয়।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ৯ বছর খালেদা জিয়া আপসহীন ভূমিকা পালন করেন। ৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামী অংশ নিয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা এরশাদের সামরিক শাসনকে বৈধতা দিয়েছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া কখনোই প্রহসনের রাজনীতির ফাঁদে পা দেননি। তিনি সবসময় দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন।
খালেদা জিয়া আপসহীন ভূমিকার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন সারা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের নেত্রী, অর্থাৎ, দেশনেত্রী। এরশাদের পতনের প্রাক্কালে (৩০ নভেম্বর) দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আত্মগোপন থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেন। ‘আমি খালেদা জিয়া বলছি’ শীর্ষক রেকর্ডকৃত ওই বাণী ৩০ নভেম্বর রাতে ভয়েস অব আমেরিকা থেকে সম্প্রচারিত হয়। খালেদা জিয়ার ওই বার্তা নব্বইয়ের গণআন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে এবং এরশাদের পতন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা ওইদিন জাতিকে নির্দেশনা দেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিলেন না। ১৫ দলীয় জোটের নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছিলেন গৃহবন্দি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকেও সরকার গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তিনি ওই সময় অত্যন্ত সজাগ ছিলেন এবং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। প্রহসনের রাজনীতির ফাঁদে তিনি পা দেননি। তিনি অনেকটা পুলিশের সামনে দিয়ে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্তরালে চলে যান। ওইদিন (৩০ নভেম্বর) স্বৈরাচারী এরশাদ বিবিসির সংবাদদাতা আতাউস সামাদকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন। ফলে তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। তবে আতাউস সামাদ আত্মগোপনে গেলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিসিসিকে খবর সরবরাহ করতেন। আর এ কারণে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং এরশাদের পতনের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে অকুতোভয় সাংবাদিক আতাউস সামাদের নাম। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আত্মগোপনে থেকে জনগণের উদ্দেশে ‘আমি খালেদা জিয়া বলছি’ শীর্ষক বাণীতে বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর ধরে আমরা অবৈধ এরশাদ সরকারের দুর্নীতি, জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আন্দোলনের চাপের মুখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দুর্নীতিবাজ এরশাদ গত কয়েক দিন ধরে বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। অন্যদিকে ছাত্র, শ্রমিক, জনতা জীবন দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আমি আমার সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। শেষ অস্ত্র হিসেবে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও কারফিউ জারি করেছে। কিন্তু এতেও দুর্নীতিবাজের শেষ রক্ষা হবে না। ছাত্র, শ্রমিক, জনতা এরশাদ ঘোষিত জরুরি আইন, কারফিউ অমান্য করে জীবনপণ প্রতিজ্ঞা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে এ সংগ্রামে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তার মিলনসহ অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের এ আন্দোলন বৃথা যাবে না, যেতে পারে না। স্বৈরাচারী সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আপনারা এ সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। এ সংগ্রামে আমি আপনাদের পাশেই রয়েছি এবং আপনারা সর্বদা আমাকে আপনাদের সঙ্গেই পাবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব সরকারি কর্মচারীকে আমি এরশাদ সরকারের বেআইনি ও অবৈধ আদেশ, গ্রেপ্তার, গুলি, নির্যাতন মান্য না করে জনগণের অধিকার আদায়ে যে সংগ্রামে আপনাদের ভাই, ছেলে, মা ও বোনেরা নিয়োজিত, তাদের সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং জনতার বিজয় আসন্ন, স্বৈরাচারের পতন সুনিশ্চিত। আমি আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ও সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি।’ (সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা, ৩০ নভেম্বর, ১৯৯০)
খালেদা জিয়ার এ বার্তা সম্প্রচার হওয়ার পর দেশব্যাপী ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সামরিক স্বৈরাচারী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নব্বইয়ের ৩ ডিসেম্বর টেলিভিশন ও বেতারে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৫ দিন আগে একজন নিরপেক্ষ উপরাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন, যাতে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর সংসদ বাতিল করবেন। তারপর সংসদীয় ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরশাদের এ প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ১৫ দিন নয়, এক্ষুনি, অবিলম্বে। আমাদের দাবি তো এটাই যে, অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ একজন ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা যে রূপরেখা দিয়েছি, সেটা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে—১৫ দিন আগে নয়। (বিবিসি, ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯০)
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত এ দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন। এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের ৯ বছর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তার পতন হয়। ওই বছর ৬ ডিসেম্বর তিনি তিনজোটের রূপরেখা অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন।
১৯৮২ সালে ক্ষমতা দখল করে একটি ফরমান (এমএলআর-৮২) জারি করেন এরশাদ। এতে আকারে-ইঙ্গিতে কেউ তার সামরিক শাসনের সমালোচনা-বিরোধিতা করলে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এরশাদের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ শুরু হলে এই এমএলআর-৮২-এর অধীনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অনু দানবের মৃত্যু উদ্বোধন: সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, যা মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আর এদিন থেকেই শুরু হয় সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদ আমলের রক্তাক্ত ইতিহাস। এদিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঞ্চন, জাফর, জয়নাল, আইয়ুব, দিপালী ও ফারুক। ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোজাম্মেল পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম আহূত সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি সফল করতে ছাত্রদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বেলা প্রায় ১১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন জয়নাল, জাফর এবং দিপালী সাহাসহ কয়েকজন। নিহতদের কয়েকজনের লাশ গুম করে সরকার। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করা হয়। একই সঙ্গে ওই সময় পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় এবং ব্যাপক সংখ্যক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। ছাত্রহত্যা এবং পুলিশি হামলার প্রতিবাদে পরদিন এ আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাবালনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরদিন সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে।
কিন্তু সামরিক স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে সংবাদপত্রের ওপর এতই নিষেধাজ্ঞা ছিল যে, এই বিক্ষোভ এবং ছাত্রহত্যার ঘটনার বিষয়ে পরদিন কোনো পত্রিকায় সরকারের প্রেস নোটের বাইরে অন্য কোনো খবর প্রকাশ করতে পারেনি।
অবিরাম মৃত্যুর মিছিল: এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনামলে আন্দোলন সংগ্রাম প্রতিহত করতে কত মানুষ হত্যা করেছেন, তার সঠিক হিসাব নেই। তবে ১৯৮৩ সালের মতোই তার শাসনামল জুড়েই ছিল গণতন্ত্রকামী সংগ্রামীদের মৃত্যুর মিছিল।
১৯৮৪: ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল চলাকালে নিহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন ও ইব্রাহিম সেলিম। ১ মার্চ সেলিম ও ইব্রাহিম হত্যার প্রতিবাদে সাত দল ও ১৫ দল হরতাল ডাকে। সেই হরতালে নিহত হন শ্রমিক তাজুল ইসলাম। ২৭ সেপ্টেম্বরের হরতালে ঢাকার কালীগঞ্জে নিহত হন রাজনৈতিক নেতা ময়েজ উদ্দিন। এদিন স্বপন কুমার, নেত্রকোনার তিতাস ও আরেকজন নিহত হন। ঢাকায় পুলিশের গুলিতে একজন রিকশাওয়ালা ও একজন ফুটপাতের দোকানদার এবং ঢাকার বাইরে আরও দুজন নিহত হন। ২৪ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গায় ফজলুর রহমান নামে একজন নিহত হন। ২২ ডিসেম্বর রাজশাহীতে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বাবুর্চি আশরাফ, ছাত্র শাজাহান সিরাজ ও পত্রিকার হকার আবদুল আজিজ।
১৯৮৫: ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। ১৯ মার্চ হরতাল চলাকালে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ২২ এপ্রিল মিছিলে বোমা হামলায় একজন, ৯ অক্টোবর তেজগাঁও পলিটেকনিকে চারজন, ৩০ অক্টোবর ছাত্রনেতা তিতাস, ৩১ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে বিডিআরের গুলিতে ছাত্র স্বপন ও রমিজ নিহত হন। ৭ নভেম্বর আদমজী জুট মিলে ধর্মঘটে হামলায় ১৭ শ্রমিক এবং বিডিআরের গুলিতে তিন শ্রমিক নিহত হন।
১৯৮৬: ৭ মে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে পাঁচজন, ১৪ মে হরতালে আটজন, ১৫ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনে ১১ জন, ১০ নভেম্বর হরতাল চলাকালে ঢাকার কাঁটাবন এলাকায় সাহাদত নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়।
১৯৮৭: ২২ জুলাই জেলা পরিষদ বিল প্রতিরোধ ও স্কপের হরতালে তিনজন, ২৪ অক্টোবর শ্রমিক নেতা শামসুল আলম, ২৬ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কৃষক জয়নাল, ১ নভেম্বর কৃষকনেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা, ১০ নভেম্বর নূর হোসেন, ১১ থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আবুল ফাত্তাহ, ছাত্র বাবলু, যুবনেতা টিটো, শেরপুরের আমিন বাজারে পুলিশের গুলিতে উমেছা খাতুন, গোলাম মোহাম্মদ আসলাম, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোকন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনজন, ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজারের চকরিয়ায় ছাত্রনেতা দৌলত খান নিহত হন।
১৯৮৮: ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় আগত মিছিলে গুলিবর্ষণে নিহত হন ২২ জন। তারা হলেন ক্ষেতমজুর নেতা রমেশ বৈদ্য, হোটেল কর্মচারী জি কে চৌধুরী, ছাত্র মহিউদ্দিন শামীম, বদরুল, শেখ মোহাম্মদ, সাজ্জাদ হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন ও আলবার্ট গোমেজ, আবদুল মান্নান, কাশেম, ডি কে দাস, কুদ্দুস, পংকজ বৈদ্য, চান মিঞা, হাসান, সমর দত্ত, পলাশ, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, সাহাদাত হোসেন। ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়।
১৯৯০: ১০ অক্টোবর সচিবালয়ে অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের গুলিতে ছাত্র জেহাদ ও মনোয়ার, হকার জাকির, ভিক্ষুক দুলাল, ১৩ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র মনিরুজ্জামান ও সাধন চন্দ্র শীল, ২৭ অক্টোবর হরতাল চলাকালে ঢাকার বাইরে দুজন, ১৪ নভেম্বর আদমজীতে ১১ জন, ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানদার নিমাই, ২৭ নভেম্বর ডা. শামসুল আলম মিলন, ২৮ নভেম্বর মালিবাগ রেলপথ অবরোধে দুজন, ৩০ নভেম্বর রামপুরায় বিডিআরের গুলিতে একজন, ১ ডিসেম্বর মিরপুরে ছাত্র জাফর, ইটভাঙা শ্রমিক আবদুল খালেক, নারী গার্মেন্টস কর্মী, নুরুল হুদাসহ সাতজন, আট মাসের শিশু ইমন, নীলক্ষেতে একজন, কাজীপাড়ায় দুজন এবং ডেমরার যাত্রাবাড়ীতে দুজন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একজন, খুলনার খালিশপুরে মহাব্রজ, নারায়ণগঞ্জের মণ্ডলপাড়ায় এক কিশোর, ৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে দুজন, ২৭ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ময়মনসিংহে দুজন, রাজশাহীতে দুজন, ধানমন্ডিতে একজন ও জিগাতলায় একজন নিহত হন।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
মন্তব্য করুন