ফিলিস্তিনের গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই সেখানে ঘটছে নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বরাবরই কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। আর জাতিসংঘ এ ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। এর আগে বিভিন্ন সময়ে গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখেছি। সেই প্রতিবাদও এখন আর দেখা যাচ্ছে না। নিপীড়িত মানুষের জন্য বিশ্বে এখন কোনো আশ্রয় নেই। তাদের নেই কোনো দাঁড়ানোর জায়গা। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, এ যুদ্ধ ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
ইসরায়েলি বাহিনীর গত প্রায় চার মাসের অভিযানে এ উপত্যকায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ হাজার ১৯। এই নিহতদের পাশাপাশি যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় আহত হয়েছে ৬৬ হাজার ১৩৯ জন। অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে এবং ইয়েমেনের হুতিরা সাগরে জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে গত রোববার জর্ডানে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত ও ৩০-এর বেশি আহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর এটাই মার্কিনিদের নিশানা করে চালানো কোনো হামলা। এর পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্দেশে গত শুক্রবার ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আঞ্চলিক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহকে নিশানা করে ইসরায়েলিদের প্রাত্যহিক হামলা এবং হিজবুল্লাহর পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে দেড় শতাধিক ড্রোন ও মিসাইল হামলা হয়। জবাবে ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের সমর্থনপুষ্ট মিলিশিয়ার ওপর চলে মার্কিন হামলা। ইরানে আইএসআইএসের ভয়ংকর হামলার ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা হয়। তাই মোটাদাগে এ আঞ্চলিক সংঘাতে ১০টি দেশ জড়িয়ে পড়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। দেশগুলো হলো—জর্ডান, ইরান, ইসরায়েল, সিরিয়া, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী এবং হামাস, হিজবুল্লাহ, হুতি ও আইএসআইএসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে ধরনের লড়াই দেখা যাচ্ছে, তা অনেকটা ছোট ধরনের হামলা ও এর পাল্টা হামলা। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সরাসরি যুদ্ধও দিন দিন ঘনিয়ে আসছে। এরই মধ্যে সিরিয়ায় শুক্রবারের যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ইরাকে ১৬ জন নিহত হয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে হামলার জবাবে ইরাক ও সিরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনাগুলোতে সামরিক হামলা চালাতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিশোধমূলক এ হামলা অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, তেহরান যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে কেউ ইরানকে উত্ত্যক্ত করলে দেশটি এর কঠোর জবাব দেবে।
সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে সহজেই বলা যায়, ফিলিস্তিনের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হবে না। আর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে যদি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে বৈশ্বিক ব্যবস্থা আরও অস্থির হয়ে উঠবে। এ অবস্থায় আমাদের উচিত হবে কোনো একটি পক্ষের সঙ্গে না জড়িয়ে দেশের স্বার্থে কৌশলী অবস্থানে থাকা।